
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের অন্যতম বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমান ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
এয়ার ইন্ডিয়ার ভেরিফায়েড আইডি থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ জানানো হয় যে, বিমানটির গন্তব্য ছিল যুক্তরাজ্যের লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দর।
ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান ফয়েজ আহমেদ কিদওয়াই এসোসিয়েটেড প্রেসকে জানিয়েছেন, বিমানটিতে ২৩০ জন যাত্রী ও ১২ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। বিমানটির ফ্লাইট নাম্বার ছিল AI 171 এবং এটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের উড়োজাহাজ, যার ধারণক্ষমতা ছিল ২৫৬ জন।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ফ্লাইট রাডারের তথ্যমতে, রানওয়ে থেকে ওঠার পর মাত্র ৬২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর পরই বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিমানবন্দরের বাইরের একটি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়।
আহমেদাবাদ ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার পরপরই অগ্নি নির্বাপণ কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ এর এক কর্মকর্তা বিবিসি হিন্দিকে জানিয়েছেন, প্রথমে দূর থেকে ঘন ধোঁয়া দেখতে পান তারা। এরপর দ্রুত উদ্ধার অভিযানে নেমে পড়েন।
কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে বিধ্বস্ত বিমানে আগুন ও ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা গেছে। এখনও পর্যন্ত দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি।
ভারতের বিমান পরিবহনমন্ত্রী কিনজারাপু রাম মোহন নাইডু সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আমরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছি। উদ্ধারকারী দল ইতোমধ্যেই কাজ করছে।”
এয়ার ইন্ডিয়া থেকে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, বিধ্বস্ত বিমানে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ১ জন কানাডিয়ান এবং ৭ জন পর্তুগালের নাগরিক ছিলেন।
এদিকে ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রক ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (DGCA) জানায়, বিমানের প্রধান পাইলট ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল ছিলেন একজন এলটিসি (লাইন ট্রেনিং ক্যাপ্টেন)। তার ৮২০০ ঘণ্টা ফ্লাইট চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল। কো-পাইলটের ফ্লাইট অভিজ্ঞতা ছিল ১১০০ ঘণ্টা।
ঘটনাস্থলে থাকা বিবিসির সংবাদদাতা রক্সি গাড্ডেকার জানান, চারপাশে মানুষজন দৌড়াদৌড়ি করছেন, আহতদের দ্রুত উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, “ঘটনাস্থলটি বিমানবন্দর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। চারদিকে শুধু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজছে এবং রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
অগ্নি নির্বাপক দল এখনও কিছু জায়গায় আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা হঠাৎই বিকট শব্দ শুনতে পান এবং সঙ্গে সঙ্গে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পান।
এখনও পর্যন্ত নিহত বা আহতের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো হয়নি। তবে উদ্ধারকর্মীরা মৃতদেহ সরিয়ে নেওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আহমেদাবাদ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (ATC) সূত্রে জানা যায়, বিমানটি স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে টেকঅফ করে। উড্ডয়নের পরই ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল বিপদ সংকেত পাঠান, তবে এরপর থেকে বিমানের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
এনআইয়ের সূত্রে জানা যায়, বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে আহমেদাবাদের একটি চিকিৎসা হোস্টেলের উপর আছড়ে পড়ে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। এখনও উদ্ধার তৎপরতা চলমান রয়েছে।