
বিশেষ প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহ জেলার শিশুতলা এলাকা হতে সৎ মা কর্তৃক ৬ বছরের শিশু হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলার প্রধান পলাতক আসামিকে (৪৮ ঘন্টার মধ্যে) গ্রেফতার করেছে র্যাব-৬ এর সিপিসি-২, ঝিনাইদহ। বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে।
র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনী, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী এবং প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও মাদকের ভয়াল বিস্তার রোধকল্পে র্যাবের নিয়মিত আভিযানিক কার্যক্রমের মাধ্যমে মাদকের চোরাচালান, চোরাকারবারী, চোরাচালানের রুট, মাদকস্পট চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ভিকটিম শিশু মাহমুদা (০৬) জন্মের সময় মাতৃহারা হয়। গত ১ মার্চ ২০২৫ ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর থানাধীন ভোমরাডাঙ্গা গ্রামস্থ এলাকায় সকলের অগোচরে ভিকটিমের সৎ মা মোছাঃ বন্যা খাতুন (১৯) তরল পানীয় এর সাথে বিষ মিশ্রিত করে ভিকটিম মাহমুদা (০৬), সাং- ভোমরাডাঙ্গা, থানা- কোটচাঁদপুর, জেলা- ঝিনাইদহকে পান করায়। কিছুক্ষণ পর ভিকটিমের মুখে কথা শুনে তার পরিবারের লোকজন কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ভিকটিমের অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সেখান থেকে যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ৩ দিন চিকিৎসার পর গত ৩ মার্চ ২০২৫ উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আইসিইউ তে ভর্তির পরামর্শ দেন।
কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজে আইসিইউতে বেড ফাঁকা না থাকায় ভিকটিমকে নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসেন। পরবর্তীতে ০৫ মার্চ ২০২৫ তারিখ ভিকটিম বেশী অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ভিকটিমকে চুয়াডাঙ্গা জেলার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। গত ৬ মার্চ ২০২৫ তারিখে ভিকটিমের অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে চুয়াডাঙ্গা জেলার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভিকটিম মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্বে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিম জানায় যে, সে তার আম্মুর (আসামি বন্যা) কাছ থেকে আর’সি ( তরল পানীয়) খাওয়ার সাথে সাথে তার বুকে ব্যথাসহ বমি বমি ভাব শুরু হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় ভিকটিম মাহমুদা (০৬), সাং- ভোমরাডাঙ্গা, থানা- কোটচাঁদপুর, জেলা- ঝিনাইদহ এর পিতা মোঃ শাহীন আলম (৩০) বাদী হয়ে ৭ মার্চ ২০২৫ ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর থানায় আসামি মোছাঃ বন্যা খাতুন (১৯), পিতা- মোঃ জিয়াউর রহমান, সাং- ভোমরাডাঙ্গা, থানা- কোটচাঁদপুর, জেলা- ঝিনাইদহ এর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-৬ এর ঝিনাইদহ ক্যাম্প মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং ৯ মার্চ ২০২৫ রাত ০১১০ ঘটিকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানাধীন চাঁদপুর গ্রামস্থ শিশুতলা এলাকা হতে সৎ মা কর্তৃক ০৬ বছরের শিশু হত্যার চাঞ্চল্যকর মামলার প্রধান পলাতক আসামি মোছাঃ বন্যা খাতুন’কে (৪৮ ঘন্টার মধ্যে) আটক করে। আটককৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ভিকটিম এর পিতা মামলার বাদী মোঃ শাহীন আলম (৩০) একজন সৌদি প্রবাসী। তিনি ০৬/০৭ বছর পূর্বে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক প্রথম স্ত্রী মৃত আফরোজা খাতুনকে বিবাহ করেন। ভিকটিম মাহমুদার জন্মের সময় ভিকটিমের মা মৃত্যুবরণ করে। ভিকটিমকে মোঃ শাহীন তার পরিবারের নিকট রেখে সৌদিআরব চলে যান। পরবর্তীতে ভিকটিমকে ভালোভাবে লালন-পালনের উদ্দেশ্যে ভিকটিমের পিতা একই গ্রামের মোছাঃ বন্যা খাতুন’কে পারিবারিকভাবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিবাহ করেন। পরবর্তীতে ৭ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ বাদী সৌদি-আরব থেকে বাড়িতে আসলে বাদীর দ্বিতীয় স্ত্রী আসামি বন্যা খাতুন এর সাথে ভিকটিম মাহমুদাকে নিয়ে তাদের মধ্যে মনমালিন্য এবং দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। পরবর্তীতে ১ মার্চ ২০২৫ তারিখ বাদী বাজার থেকে বাড়িতে এসে দেখতে পায় ভিকটিম মাহমুদা বারান্দার খাটে উপর হয়ে শুয়ে আছে।
ভিকটিমের পিতা ভিকটিমকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে শুয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করতেই ভিকটিম নীল রং এর বমি করে। ভিকটিম থেকে জানতে পারে যে, তিনি বাজারে যাওয়ার পর তার সৎ মা প্লাস্টিকের বোতলে করে তরল পানীয় খাওয়ায়। পররবর্তীতে উক্ত তরল পানীয় সম্পর্কে বাদী তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলে আসামি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন।