সর্বশেষ:

biggani sir ashchorjo profulo chondro rayer jonmovita

ধ্বংস হতে চলেছে  বিজ্ঞানী স্যার আশ্চর্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের জন্মভিটা

biggani sir ashchorjo profulo chondro rayer jonmovita
Facebook
Twitter
LinkedIn

এস,এম,আলাউদ্দিন সোহাগ,পাইকগাছা ( খুলনা )

অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় এর খুলনার পাইকগাছার রাড়ূলী গ্রামে জন্মভিটা। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ভবনটি। ভবনটির ভিতরে প্রবেশ করতেই গায়ের লোম শিউরে ওঠে, যেন তার বোবা কান্না বাতাসে ভেসে আসে কানে। ইট পাথরের এই ভবনটির চারিদিকে ইট এবং পলেস্তারা সবকিছু খসে খসে পড়ছে।

biggani ashchorjo profulo chondro rayer jonmovita

বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী রাড়ুলী গ্রামে পিতা হরিশচন্দ্র রায় এবং মা ভূবন মোহিনীর কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হরিশচন্দ্র রায় ছিলেন বহু ভাষাবিদ পন্ডিত ও বিদ্যোৎসাহী।

স্থানীয়রা জানায়,পিসি রায়ের বাড়ি এখন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যার পরে অন্দর মহলে বখাটে ছেলেদের আনা গোনা থাকে। যদিও‌ এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে তবুও তাদের অগোচরে ঢুকে পড়ে।

sir ashchorjo profulo chondro rayer jonmovita

প্রথম বাঙালি হিসেবে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় গিলক্রাইষ্ট স্কলারশীপ নিয়ে ইংল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন।১৮১২ সালে তিনি নিজ অর্থায়নে ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৬ সালে তিনি মার্কারি ও নাইট্রেট (মারকিউরাস নাইট্রাইট) আবিষ্কার করেন। যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং ৫টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন। বিজ্ঞান গবেষণায় তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৯১২ সালে তাঁকে সম্মানসূচক ডি.এসসি ডিগ্রি প্রদান করে। ব্রিটিশ সরকার প্রথমে তাঁকে রাজকীয় খেতাব সি.আই ই এবং ১৯১৯ সালে ‘নাইট’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে। তিনি ভারতবর্ষের প্রথম Chemical Factory স্থাপন করেন।

১৯০২ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ History of Hindu Chemistry প্রকাশিত হয়।তাঁর অর্থায়নে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাবৃত্তি, রসায়নাগার ও গবেৰ্ষণা পুরস্কার প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধি লাভ করে। তিনি ১৮৮৯ থেকে ১৯৩৬ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৪৭ বছর অধ্যাপনা পেশায় অতিবাহিত করেছেন। ১৯৪৪ সনের ১৬ জুন এই বিজ্ঞানী শিক্ষাবিদ, শিল্প উদ্যোক্তা ও অসাম্প্রদায়িক দেশ-দরদী মহামনিষী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ১৯১৮ সালে বাগেরহাটে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যার নাম পিসি কলেজ। যা আজ বাংলাদেশের শিক্ষা বিস্তারে বিশাল ভূমিকা রাখছে। একই সাথে এই রাড়ুলী গ্রামে তাঁর পিতা হরিশচন্দ্র রায়ের নামে একটি কলেজ নির্মিত করেন, যার নাম আর,কে,বি,কে হরিশ্চন্দ্র কলেজিয়েট ইনস্টিটিউশন। পিতা হরিশচন্দ্র রায় ১৮৫০ সালে ৩ মার্চ উপজেলার রাড়ূলী গ্রামে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের মা’র নামে ভূবন মোহিনী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।যার প্রথম ছাত্রী ছিলেন মা ভূবন মোহিনী নিজে।

ashchorjo profulo chondro rayer jonmovita

জনশ্রুতি অনুযায়ী ১৮৫০ সনে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের পিতা হরিশচন্দ্র রায় রাড়ূলী গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বসতবাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়িটি ছিল দুটি ভাগে বিভক্ত সদর মহল ও অন্দর মহল। সদর মহলটি পুরুষদের বসবাসের জন্য নির্মাণ করা হয়। সদর মহলটি চারটি ভাগে বিভক্ত। এর উত্তরাংশ মন্দির (পূজা মন্ডপ) হিসেবে ব্যবহার করা হতো। মন্দিরে সর্বমোট আটটি মালটিফয়েল খিলান রয়েছে। মূলতঃ মুসলিম এবং বৃটিশ স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয়ে ভবনটি নির্মিত। এর পূর্বদিকে একটি প্রাচীন পুকুর রয়েছে। জনশ্রুতি অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণের সময় পুকুর-টি খনন করা হয়েছিল। সদর মহলটি বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত রয়েছেন।

সদর মহলটি কিছুটা সংস্কর করা হলেও অন্ধর মহলটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অন্দর মহলটি ছাঁদ, পিলিয়ার, দরজা-জানালা সব কিছু সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে বসেছে। আর যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে সে টুকুও সংস্কর করা না হলে নষ্ট হয়ে মাঠির সাথে মিশে যাবে।এইভাবে ঐতিহ্য ও পরিচিতি গুলি বিলিন হয়ে গেলে নতুন প্রজন্মের কাছে কি থাকবে?

মো. মোমিন উদ্দীন, প্রভাষক ভূগোল বিভাগ, পাইকগাছা সরকারি কলেজ খুলনা তিনি বলেন, গুনি মানুষের কদর না করলে সেখানে গুনি মানুষ জন্মায় না স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় আমাদের দেশের গর্ব আমরা তার জন্য বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়েছি। কিন্তু আমাদের উচিত তার এই জন্ম ভিটা সংস্কার ও সংরক্ষণ করে সারা বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করা।আমাদের সচেষ্ট হওয়া উচিত। আশাকরি স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসক সহ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় এবিষয়ে পদক্ষেপের মাধ্যমে সারা বিশ্বে তার পরিচিত ছড়িয়ে দিবেন। তার এই জন্মভিটায় একটি জাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র করে মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে হবে। তাহলে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সম্পর্কে পরবর্তী প্রজন্ম আরো বেশি জানতে পারবে।

স্থানীয়,অমিত দেবনাথ বলেন, পিসি রায়ের স্মরণে কিছু করা হলে সেটা পাইকগাছার গর্ব। তার এই বাড়ির দুই পাশে স্কুল এবং কলেজ আছে প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের পিতার নামে কলেজ আছে এবং মাতার নামে একটা গার্লস স্কুল আছে।দেশ-বিদেশে তার নাম ছড়িয়ে আছে। আমি আশা ব্যাক্ত রাখি যাতে এই পুরাকীর্তি এবং এই এলাকাবাসীর দাবি একটি পর্যটন কেন্দ্র হলে আমাদের এই এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা সর্বদিক দিয়ে উন্নত হবে।

আগত দর্শনার্থীরা জানান, স্যার আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জন্মভিটাকে দার্শনিক স্থান ও সুন্দর পরিবেশ করতে পারলে পাইকগাছা উপজেলা বাসী অর্থনীতি দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে যাবে। পৃথিবীর মধ্যে এত বড় একজন বিজ্ঞানী তার বসতবাড়িটা সংস্কার করা হলে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি গর্বের বিষয় হবে। তার এই বাড়িটি দ্রুত সংস্কারের জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। আরো এক দর্শনার্থী বলেন ,তিনি জগৎ বিখ্যাত একজন বিজ্ঞানী সে হিসাবে আমরা তার বাড়ি পরিদর্শনে আসছি। ভালো লাগলো কিন্তু বাড়িটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে সংস্কারের প্রয়োজন। সংস্কার করা হলে এখানে একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে মানুষের আশার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে তাই সংস্কারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

এফ.এম অজিয়ার রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ৯ নম্বর সেক্টর খুলনা। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা লোকের উপকার করার জন্য চেষ্টা করতো ।এক সময় ওনার বাড়িতে চার-পাঁচজন বিদেশি আসে কিন্তু কে নিবে তাঁদের ল্যাগেজ তাই উনি এটা নিয়ে তার বাড়ি নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিদেশিরা বলেন পিসি রায়ের সাথে দেখা করবেন। তিনি উনাদের সামনে আসলেন তাকে দেখে আচার্য্য হয়ে গেল এমন ছিলো তার চরিত্র। তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি আমাদের পাইকগাছার গর্ব অর্থাৎ বাংলাদেশ গর্ব।

তপন কুমার দত্ত, কেয়ারটেকার পিসি রায়ের বাড়ি তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে লোক আসে, গত বছর জার্মান থেকে লোক আসছিলো। তারাও ছবি ভিডিও তুলে নিয়ে গিয়েছিল এবং তারা বলেন একজন মহা মনীষির বাড়ি এমন থাকবে কেন?দেশ-বিদেশে তার নাম ছড়ানো। ভিডিও করেও মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছেন কিন্তু কোন কাজ হয় না। কিন্তু টুকিটাকি আমাদের ডিপার্টমেন্ট দেখা যাচ্ছে এক কোটি টাকা বাজেট হলে আমাদের ৫০ টি শাখায় ভাগ করে দেয়। তাই বড় একটা বাজেট না হলে এ বাড়ির কিছুই হবে না। এমন দুই পাঁচ লাখ টাকায় কিছুই হবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন জানান, স্যার আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় এর জন্মভিটা বর্তমান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দায়িত্বে আছেন। তিনি আরো জানান স্যার আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জন্মভিটাকে পর্যটন কেন্দ্র এবং সংস্কার করা সহ যথা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজ্ঞানীর এই বাসভবনটি সংস্কার ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে জাদুঘর, গবেষণাগার ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র করা হলে এখানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে এবং সরকার এই থেকে বড় একটা রাজস্ব আদায় করতে পারবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তাই যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার ও সংরক্ষণ করে একটি জাদুঘর, গবেষণাগার ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র করার দাবি জানান স্থানীয়রা।

Facebook
Twitter
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

turan hossain rana