তুরান হোসেন রানাঃ
খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন ব্যস্ততম সড়ক থেকে শুরু করে শহরতলী উপজেলার মধ্যকার সড়ক থেকে মহাসড়ক এখন ইজিবাইকের দখলে। চালকেরা কোন নিয়মনীতি না মেনেই খুলনা মহানগরীর মধ্যকার বিভিন্ন সড়কে যেখানে সেখানে তাদের ইজিবাইক থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। সড়কে চলাচলের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কতৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্তৃক যানবহন চালনার অনুমোদন নিয়ে তবেই চলা যাবে সড়কে। পাশাপাশি নিরাপদ ও দুর্ঘটনামুক্ত থাকতে জানতে হবে নানামুখি নিয়ম কানুন। জানতে হবে ওভারটেকিং, ওভারস্পিড, ডানে/বামে ঘুরবার ইউটার্নসহ বিবিধ নিয়ম কানুনের প্রশিক্ষণ। বর্তমানে সড়কে সব চেয়ে বেশি দেখা মেলে ইজিবাইকের। কিন্তু এই ইজিবাইক ড্রাইভারদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ বা অন্যান্য যানবাহনের মতো বিআরটিএ’র কোনো অনুমোদন।
অনেক ইজিবাইক চালাচ্ছে শিশুরা। অদক্ষ চালকের হাতে চলে গেছে ইজিবাইক। যেখানে-সেখানে ঘটছে দুর্ঘটনা।
খুলনার সড়ক বা মহাসড়কে চলাচলের উপর নূন্যতম নিয়মের বালাই নেই তাদের। নেই কোনো প্রশিক্ষন বা ডাইভিং লাইসেন্স তবুও নির্বিঘ্নে ইজিবাইক চলছেই। সড়ক দুর্ঘটনার অপর কারণ হিসাবে ইজিবাইককেই দায়ি করছেন সচেতন মহল। ইজিবাইক চালাতে লাগছেনা লাইসেন্স , তাই সোজাসাপ্টা সহজলভ্য একটি আয়ের পথ হিসাবে বেছে নিতে ইজিবাইকের যে কোন একটা শো-রুম হতে একটি নুতন ইজিবাইক নিয়ে সোজা নেমে পড়বে রাস্তায়।
গাড়ি চালনায় ট্রাফিকের নুন্যতম জ্ঞান বা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক না হওয়ার কারণে খুলনা মহানগরী সহ স্থানীয় এলাকাতে বেড়েই চলেছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ইজিবাইকের সংখ্যা ও ইচ্ছা স্বাধীন বিচরণ। অবৈধ ইজিবাইকের ছড়াছড়িতে খুলনার সড়ক যেন হাবুডুবু খাচ্ছে । বলা নেই , কওয়া নেই সড়কের উপর হুটহাট ইচ্ছা – স্বাধীন ভাবে ইজিবাইক চালনা করছে তারা ।
যার দরুন পেছনে থাকা যানবাহনটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে হরহামেশা স্বীকার হচ্ছেন দূর্ঘটনায় , ছিটকে পড়ছেন সড়কের উপর। সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন , সম্প্রতি সময়ে অধিকাংশ দূর্ঘটনার জন্য ইজিবাইক দায়ি। দুর্ঘটনার মূলহোতা হিসাবে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে যানজটসহ স্বাভাবিক চলাচলের বাধা হিসাবে ও ইজিবাইককে দায়ি করছেন তারা । সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সড়কে ইজিবাইকের অবাধ বিচরণ বন্ধসহ চালকের গাড়ি চালনার ক্ষেত্রে অনুমতি পত্র বাধ্যতামুলক করার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। সকলের এক কথা , ইজিবাইক চালনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণের নিয়ম প্রনয়ণ করলে , অনেক চালকই ছিটকে পড়বে চালনা হতে ।
ফলে ইজিবাইকের সংখ্যা কমার সাথে সাথে প্রশিক্ষণহীন চালকের সংখ্যাও কমবে । স্থানীয় নেতারা বলছেন , ইজিবাইকের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট – বড় দূর্ঘটনা , বাড়ছে শঙ্কাও । ঘটে চলা দূর্ঘটনার পেছনে কারণ হিসাবে দেখা গেছে ইজিবাইকে চালকের নূন্যতম ট্রাফিক নিয়মনীতি বা চাইভিং প্রশিক্ষণ নেই। সেই সাথে অদক্ষ অপ্রাপ্ত বয়সী চালকের দূরদর্শিতা তো আছেই।
স্বল্প ভাড়ায় নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থানে পৌঁছানোর জন্য ইজিবাইক ব্যবহার বাড়লেও ঝুঁকি ও আতঙ্কের মধ্যে আছেন অনেকেই । মোটরসাইকেল চালক ইমরান বলেন, এমনিতেই রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ তার উপর ইজিবাইক হটাৎ ব্রেক করে, সাইড দেয় না। যার জন্য প্রায় রিস্কের ভিতর গাড়ি চালাতে হয়।
পিকআপ চালক জুয়েল বলেন, হর্ন দিলেও ইজিবাইক ড্রাইভার রা সাইড দিতে চায় না। হটাত ব্রেক করে, কোন সিগনাল না দিয়েই দাঁড়িয়ে পড়ে। মোড়ের উপর দাঁড়িয়ে লোক উঠা নামা করে। এদের কারো কোন লাইসেন্স নাই, এরা রোডে চলার নিয়ম কানুন জানে না, আমরা সব সময় ইজিবাইক নিয়ে আতংকের উপর থাকি।
ব্যাবসায়ী হাসান বলেন, ইজিবাইকগুলো সড়কে বেপোরোয়াভাবে চলাচল করছে। চলতিপথে হঠাৎ করেই রাস্তার পাশে সিগনাল বাদেই দাঁড়িয়ে পড়ে এসব ইজিবাইক। অদক্ষ চালকের কারণে ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
ভুক্তভুগি অনেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, সকালে স্কুল কলেজে যাওয়ার সময় তারা প্রতিনিয়ত যানযটের শিকার হচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, শহরে চলাচলরত ইজিবাইক চালকরা কোন নিয়ম শৃঙ্খলার তোয়াক্বা না করে সড়কে ইচ্ছামত ইজিবাইক ঘুরিয়ে ফেলতে যায়, আবার রাস্তার ভাঙ্গা চোরা অংশ পরিহার করে ভালো অংশ দিয়ে যেতে চায়, ফলে তারা ঘন ঘন রাস্তায় এপাশ ওপাশ করে পথ চলে।
এমন অবস্থায় মটর সাইকেল সহ দ্রুতগতির পরিবহনের পেছন থেকে আগে উঠতে গেলে ইজিবাইকে ধাক্কা লেগে প্রতিনিয়ত ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ইজিবাইকচালকদের খামখেয়ালীতে খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সৃষ্টি যানযট এখন প্রতিদিনের চিত্র। এমন অবস্থায় পড়ে সঠিক সময় স্কুল কলেজে পৌছাতে না পেরে তাদেরকে প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছে।
খুলনা “নিশচা” সভাপতি ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, রাস্তায় বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনার কারন ইজিবাইক। আমরা চাই ইজিবাইক চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা গ্রহন করা হোক যাতে তারা ট্রাফিক নিয়ম গুলো জানতে পারে। প্রয়োজনে এই প্রশিক্ষণে নিশচা এর পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।