সর্বশেষ:

শরণখোলায় ছোঁয়াচে চর্ম রোগের মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে

Facebook
Twitter
LinkedIn

আবু-হানিফ,(বাগেরহাট)প্রতিনিধিঃ

বাগেরহাটের শরণখোলায় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে স্কাবিস,অ্যালার্জি,চুলকানী ও দাদ,একজিমার মতো অসহ্যকর ছোঁয়াচে চর্মরোগ।শিশু থেকে শুরু করে এই রোগে আক্রান্ত উপজেলার অধিকাংশ পরিবারের সববয়সী মানুষ।
উপজেলার রাজাপুর,আমড়াগাছিয়া,তাফালবাড়ি,বাংলা বাজারসহ বেশ কয়েকটি গ্রামীণ বাজারের একাধিক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারী পল্লী চিকিৎসক ও স্থানীয় ফার্মেসী মালিকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে,বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই চিকিৎসা নিতে আসেন দাদ,একজিমাসহ বিভিন্ন ধরনের স্কাবিস জাতীয় চর্মরোগ নিয়ে। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো ওষুধে সম্পূর্ণ ভাল হয়না। এর জন্য বারবার মেডিসিন পরিবর্তন করেও কোনো সুরাহা হচ্ছেনা।
কথা হয় রায়েন্দা ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের বাদশা খানের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে মিম আক্তার (১২) এর সাথে। মিম গত পাঁচমাস ধরে পায়ে একজিমা নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালসহ ঘুরেছেন গ্রামীণ পল্লী চিকিৎসকদের দ্বারেদ্বারে। কিন্তু তাতে তার কোনো উন্নতি হয়নি। বর্তমানে তার পায়ের পাতায় বেশ কিছু ক্ষত দেখা দিয়েছে। যার অসহ্য যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে।

একই ইউনিয়নের সামছুন্নাহার বেগম (৬০),মুন্নি আক্তার (৪০),ফেরদৌসী বেগম (৪২),শাহী মোহাম্মদ (১৫) সহ একাধিক নারী ও শিশুদের সাথে কথা বললে তারাও জানান প্রায় একই কথা। বেশ কয়েকবছর ধরে তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে দাদ জাতীয় চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। এজন্য তারা ফ্লুকোনাজল,ইট্রাকোনাজলসহ বিভিন্ন ক্রিম ব্যবহার করেছেন। তাতে কিছুদিন ভাল থাকলেও পরবর্তীতে আবার নতুন করে দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি চট্রগ্রাম থেকে বাড়ি (রাজাপুর) আসা মো: সাখাওয়াত হোসেন বলেন,চিটাগং শহরের প্রায় সব মানুষেরই এখন চর্মরোগ। কি কারণে এমন হচ্ছে বুঝতে পারছেন না। রায়েন্দা হাসপাতাল গেটের ব্যবসায়ী ও আল মদিনা ফার্মেসীর মালিক মো: রিয়াজ মাহমুদ সোহাগ বলেন,প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগ মানুষই চর্মরোগে আক্রান্ত। তাছাড়া অনেকে সরাসরি আমাদের কাছে আসেন পরামর্শ নিতে। তখন আমরাও তাদের চিকিৎসা দিয়ে থাকি। কিন্তু ওষুধ খেলে কিছুদিন ভাল থাকে,আবারও দেখা দেয় একই সমস্যা।
একই এলাকার ব্যবসায়ী ও হেনা ফার্মেসীর মালিক নাজমুল হুদা বলেন,চুলকানি বা চর্মরোগ এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। প্রায় সব মানুষের শরীরেই এই রোগ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন এই রোগ নিয়ে ওষুধ কিনতে আসা বেশিরভাগই হচ্ছে নারী ও শিশু। তাছাড়া কমবেশি সব বয়সী মানুষই আসেন যাদের মধ্যে কারো দাদ,কারো স্কাবিস আবার কারো কারো শরীরে অসহ্যকর চুলকানি।

এ নিয়ে শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও বিভিন্ন ক্লিনিকে কর্মরত একাধিক চিকিৎসকের সাথে কথা বললে তারা বলেন, বেশিরভাগ মানুষেরই শরীরেই এলার্জি চুলকানি। যা একজন থেকে অন্যজনের শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্মরত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিপ্লব কুমার সাধক বলেন,আমি হাসপাতাল ও নিজ বাড়ি লাকুড়তলা বাজারের একটি চেম্বারে চিকিৎসা প্রদান করে থাকি। প্রতিদিন প্রাকটিসে যা দেখছি তাতে চর্মরোগে আক্রান্ত নারী পুরুষের সংখ্যাই বেশি।

শরণখোলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রিয় গোপাল বিশ্বাস বলেন,বর্তমানে উপকূলীয় এলাকা শরণখোলায় নদী ও পুকুরের পানি ব্যবহার করায় চর্মরোগের পরিমানটা অনেক বেড়েগেছে। বিশেষ করে খোসপাঁচড়া ও দাদ জাতীয় এসব ছোঁয়াচে রোগ। যা একজনের শরীর থেকে অন্যজনকে আক্রান্ত করছে। পরিবারে একজন যদি এই রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে দেখা যায় বাকি সদস্যদের শরীরেও হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই প্রত্যেক পরিবারেই এটা এখন ছড়িয়ে পড়ছে। ওষুধে কাজ না হওয়া প্রসংগে এই কর্মকর্তা বলেন, দেখাগেছে,পরিবারে সবাই স্কাবিসে আক্রান্ত,কিন্তু চিকিৎসা নিচ্ছেন মাত্র একজন। তাই ওই পরিবারের বাকি সদস্যদের শরীরেও এটা থেকে যায়। আবার অনেকে আছেন,কয়েকদিন ওষুধ খেয়ে মোটামুটি ভাল হয়েছেন এরপর ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এর ফলে ওই ওষুধ রেজিস্ট্যান্স ডেভেলপ করায় আর কাজ করছে না। তাই পরিবারে একজনের হলে বাকি সবারই চিকিৎসা নিতে হবে। এবং ব্যবহৃত সব কাপর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

Facebook
Twitter
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

সুন্দরবনে ২০ বনদস্যু বাহিনীর দাপট, বনদস্যুদের তৎপরতায় আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন,জেলে, বনজীবীদের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে

turan hossain rana