
বিশেষ প্রতিনিধি :
১৫০ ধারার শুনানিতে লক্ষাধিক টাকার ঘুষ বাণিজ্য রায় ডিক্রির কেচে প্রকাশ্যে ঘুষের প্রস্তাবনামজারি, সার্ভে রিপোর্ট, ভিপি তদন্ত ও ডিসিআরে ঘুষবাণিজ্য রমরমা। খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলা ভূমি অফিসের প্রধান সহকারীর ও অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। এদের দৌরাত্মের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সেবা গ্রহীতারা।
শুধুমাত্র বড় অংকের ঘুষের বিনিময়ে এদের কাছ থেকে সুবিধা মেলে। এদের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ভূক্তভোগীরা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও সুরাহা পাচ্ছেন না। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বটিয়াঘাটা ভূমি অফিস এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ভূমি অফিসের এসিল্যান্ড শরীফ শাওনের সততার সুযোগ নিয়ে প্রধান সহকারী মো. আজিজ এবং আরও দুই এক জন অংশীদার ও সেবাগ্রহীতাদের কাছে প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণের প্রস্তাব দেয়। জমির নামজারির আবেদন থেকে সার্ভে রিপোর্ট, ভিপি সম্পত্তি থেকে ডিসিআর প্রদান, রায় ডিক্রির কেচ থেকে ১৫০ ধারার শুনানি সকল কেসে টাকা হলেই মুশকিল আসান। অবশ্য ভূমিদস্যু ও জমির জালজালিয়াতি চক্রের সাথে এদের সখ্যতা আছে বলে জানা যায়। সবকিছুতেই ঘুষবাণিজ্য রমরমা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়ন খুলনা শহরের দক্ষিণ পশ্চিমাংশের অন্যতম অংশ। শহরের পূর্বে রূপসা ব্রিজ, পশ্চিমে কৈয়া ব্রিজ ও দক্ষিণে বটিয়াঘাটা ব্রিজ পর্যন্ত বিস্তৃত এই ইউনিয়ন এখন সিটি কর্পোরেশনের অপরিহার্য অংশ। এই ইউনিয়নে প্রায় ৩ শতাধিত প্রপার্টিজ ব্যবসায়ী আছে। এরা ভূমি অফিসের সহযোগিতায় নামে বেনামে ও পাওয়ার দলিলের মাধ্যমে আদালতে বিচারাধীন জমি দখল করে প্লট ব্যবসা করে। জলমা ইউনিয়নের ১১টি মৌজাসহ উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ১১৮ মৌজায় আছে শতশত বিঘা ভিপি জমি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভিপি গেজেট অনুযায়ী সব ভিপি জমি লিজ কেচে নথিভূক্ত হয়নি। আবার এসএ খতিয়ানে যে জমি ভিপি তালিকাভূক্ত, টাকার বিনিময়ে সেই জমি বিআরএস খতিয়ানে ব্যক্তির নামে রেকর্ডভূক্ত হয়। সরকারি তালিকাভূক্ত জমি লিজ নবায়নের জন্য আবেদন করলে সেই জমি অন্যের দখলে অথবা ব্যক্তির নামে অধিগ্রহণ হয়েছে বলে জানানো হয়।
এইসব জমির কে লিজ পাবে তা নির্ভর করে প্রধান সহকারী মো. আজিজের উপর। নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, শুধুমাত্র জলমা ইউনিয়নে বহু ভিপি জমি লিজ নবায়ন না করে ভূমিদস্যুরা অবৈধভাবে দখলে রেখেছে। ভূমি দস্যুদের দখলে থাকা ভিপি সম্পত্তি, খাল ও খাস জমি উদ্ধারে ভূমি অফিসের লোক দেখানো তৎপরতা আছে। তবে পেছনের গল্প সকলের জানা। অবশ্য কোন সাধারণ মানুষের ক্রয় করা জমির খতিয়ানে-দাগে ভিপি কেচ থাকলে ঐ জমির নামজারি করতে বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ জানতে চাইলে ভূক্তভোগীরা বলেন, ভূমি অফিসের প্রধান সহকারীর নাম মো. আজিজ। তিনিই ভিপি সম্পত্তি লিজ কেচের বড়কর্তা। ভূক্তভোগীরা জানিয়েছেন, বটিয়াঘাটা ভূমি অফিসের ১৫০ ধারার শুনানি লক্ষ টাকার নিচে দফারফা হয়না আজিজকে ম্যানেজ করা ছাড়া রক্ষে নেই ‘-বলেছেন উপজেলার কাতিয়ানাংলা গ্রামের এ্যাড. জাহিদ। তার কাতিয়ানাংলা মৌজার জে এল ৫৯, বিআরএস ৮০ ও ১০৪ খতিয়ানে ২ একর ২৯ শতক জমির রায় ডিক্রির কেচের জন্য ৯০ হাজার টাকা প্রকাশ্যে ঘুষ চাওয়া হয়েছে।
রাঙ্গেমারী মৌজায় জে এল ১৪, আরএস ২৫৫ খতিয়ানের ভিপি সম্পত্তি থাকায় রাঙ্গেমারী গ্রামের সালমা আক্তার নিজ দাগের জমির নামজারি করতে পারছেন না। তিনি জানিয়েছেন, এসিল্যান্ড বলেন, আমি প্রধান সহকারী কে বলে দিচ্ছি তিনি কাজ করে দেবে, কিন্তু দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে। রাঙ্গেমারী গ্রামের তরুণ মন্ডলের বাড়ি দখলের পায়তারা করছে কতিপয় ভূমিদস্যু। অভিভাবকহীন এই ছেলে ১৪৪ ধারা করে বাড়ির জমি দখলমুক্ত করার জন্য বটিয়াঘাটা ভূমি অফিস থেকে শুরু করে খুলনার আদলত পাড়ায় ঘুরছেন। তার দেখার কেউ নেই। হেতালবুনিয়া গ্রামের আমির হামজা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, নামজারির কেচ রিপোর্ট করতে ও ভিপি জমির তদন্ত করতে সার্ভেয়ারদের ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। এছাড়া তিনি প্রধান সহকারীর সাথে নারী সেবা গ্রহীতাদের বেশী আনাগোনার লিখিত অভিযোগ করেছেন। প্রধান সহকারীর বিরুদ্ধে জলমা তফশিল অফিসের সামনে নারী কম্পিটার ব্যবসায়ীদের সম্পর্কসহ নানা অনৈতিক কর্মের মুখোরচক খবর পাওয়া যায়। দীর্ঘ দিন ধরে বটিয়াঘাটা ভূমি অফিসের প্রধান সহকারীর দায়িত্বে থাকা এই দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তার অপসরণ দাবি করেছেন এলাকাবাসী।অন্যদিকে গত পরশু এসিল্যান্ড অফিসে রহস্যজনক চুরি সংগঠিত হয়েছে। এ ব্যপারে এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
নাইট গার্ডের সহযোগিতায় মিঃআজিজ অফিসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সরানোর জন্য এই ঘটনা ঘটাতে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। এই চুরির বিষয়টি দ্রুত উদঘাটন হওয়া দরকার বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।