
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইরানের রাজধানী তেহরানের বাসিন্দাদের দ্রুত শহর ছেড়ে যেতে বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।কানাডায় অনুষ্ঠিত জি সেভেন সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে টানা পঞ্চম দিনের মতো চলা পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক আলোচনায় স্থান করে নেয়। ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ এক পোস্টে বলেন, “সবাইকে দ্রুত তেহরান ছেড়ে যাওয়া উচিত।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইরান কখনোই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না।
জি সেভেন সম্মেলনের জন্য তিনি কানাডায় অবস্থান করলেও, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশে ফিরে আসেন বলে হোয়াইট হাউজ সূত্র জানিয়েছে। কানাডায় অবস্থানকালে এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, ইসরায়েল ও ইরান শিগগিরই সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে। এক প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ইরানকে ৬০ দিনের সময় দিয়েছিলাম পরমাণু চুক্তিতে আসার জন্য। আর ৬১তম দিনে কী হলো, তা আপনারা দেখেছেন।” তিনি যোগ করেন, “আমার বিশ্বাস দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি হবে। না হলে ইরান বড় ভুল করবে।”
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, তেহরানের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলার মাধ্যমে ইরানের ওপর চাপ বাড়িয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতায় বাধ্য করতে চাইছেন ট্রাম্প। ওয়াশিংটনে ফিরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন বলে মার্কিন গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে। এই পরিষদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালকরা থাকেন এবং প্রেসিডেন্টকে জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে পরামর্শ দেন। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ইসরায়েলের চলমান অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ নেয়নি। তবে, সিবিএস নিউজের খবরে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হলেও ওয়াশিংটন ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে অংশ নেবে না।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেখানে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। তিনি জানান, এই মোতায়েন কেবল ওই অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ রক্ষার জন্যই করা হয়েছে। অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এক পোস্টে উল্লেখ করেন, “ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে নিরস্ত করার জন্য ওয়াশিংটন থেকে একটি ফোনকলই যথেষ্ট।” কূটনৈতিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চললেও ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে রকেট ও বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।
সোমবার রাতে ইসরায়েলি বাহিনী তেহরানের বিভিন্ন এলাকায়, এমনকি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনেও হামলা চালায়। টানা হামলার কারণে হাজার হাজার মানুষ তেহরান ছেড়ে যেতে শুরু করে। শহরের বিভিন্ন সড়কে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। ইসরায়েলি বাহিনী তেহরানের পাশাপাশি পশ্চিম ইরানের দুটি মিসাইল ঘাঁটিতেও হামলা চালিয়েছে। পাল্টা হামলায় ইরানও ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে হামলা অব্যাহত রেখেছে। আজ মঙ্গলবার ভোরে তেল আভিভ, জেরুজালেমসহ বিভিন্ন শহরে সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে ইসরায়েলে অবস্থানরত নাগরিকদের দ্রুত সরে যেতে বলেছে চীনা দূতাবাস। তারা এক বিবৃতিতে জানায়, “চীনের নাগরিকদের অনুরোধ করা হচ্ছে, নিরাপদ হলে তারা যেন স্থল সীমান্ত দিয়ে দ্রুত ইসরায়েল ত্যাগ করেন। জর্ডানের দিকে রওনা দেওয়াই উত্তম।” বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ইসরায়েল ও ইরানের সংঘর্ষ ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে। বেসামরিক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, সাধারণ মানুষের প্রাণহানি বাড়ছে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিচ্ছে।”