
খেলাধুলা ডেস্ক
পঞ্চম সাফ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম সেমিফাইনালে বাংলাদেশ নারী দল কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে শুক্রবার দুপুর সোয়া ১টায় শুরু হওয়া লড়াইয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে এক অবিস্মরণীয় জয় দিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। ফুটবল প্রশিক্ষক গোলাম রাব্বানি ছোটনের দলে গোলমাল, গতিশীলতা আর সমন্বয়ের সংমিশ্রণে দেখা গেল এক ‘গোল বন্যা’। ভুটানকে ৮-০ গোলে বিধ্বস্ত করে বাংলাদেশ তুলে নিল ফাইনালের টিকিট।
আধিপত্যের সূচনা: প্রথমার্ধের জোয়ার
ম্যাচ শুরুর মাত্র দুই মিনিটের মাথায় সিরাত জাহান প্রথম গোলের সাথে জমে দিল খেলার ক্রমসন্ধিকে। উদ্বোধনী মিনিটেই আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজি ফল দিতে শুরু করলে হুঙ্ঘারে ভাসে প্রতিদ্বন্দ্বী। ১৮ মিনিটে দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ২-০ উন্নীত করে প্রথমার্ধের ‘উড়ন্ত সূচনা’ আরও দৃঢ় করে দেন। এরপর ৩০ মিনিটে কৃষ্ণা রানী দলের তৃতীয় গোল করে লিড আরো বিস্তৃত করেন। এরপর মাত্র পাঁচ মিনিট পরই ঋতুপর্ণা চাকমা চার মিনিটে গোল শোধ না করার দৃঢ় প্রত্যয়ের প্রতীক হয়ে ওঠেন, দলকে ৪-০’র দাপটে ফাইনালের পথে এগিয়ে নিয়ে যান।
দ্বিতীয়ার্ধে হ্যাটট্রিক 완성
বিরতির পরেও আক্রমণাত্মক ছন্দ বজায় রাখে ছোটনের দল। ৫৪ মিনিটে সাবিনা নিজের দ্বিতীয় গোল করলেন এবং দলকে ৫-০ অনুপাতে এগিয়ে নিলেন। দুই মিনিট পরেই লাকি সেভেনের গোলগুলোতে শামিল হয় মাসুমা পারভীন—যিনি দারুণ ডিফেন্ডার Tahura খাতুনের চমৎকার পাস থেকে জালে বল জড়িয়ে দলের সিক্স-নাম্বার গোল নিশ্চিত করেন। যোগ করা সময়ে সাবিনা খাতুন দ্বিতীয়ার্ধের শেষে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে ঠেলে দেন ৮-০ ব্যবধানে এক দলীয় আচরণ, যা বাংলাদেশ নারী দলের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসের নমুনা।
ছোটনের ‘কাঠমান্ডু ম্যাজিক’
প্রশিক্ষক গোলাম রাব্বানি ছোটনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত ছিল আক্রমণাত্মক খেলা, দ্রুত বল পিছনের বল নিয়ে প্রতিপক্ষকে কড়াকড়ি ও স্তিমিত করে ফেলা। “পেছনের রক্ষণ ঝুঁকি মেটানো ঠিকই, কিন্তু বল যখন গেছে সামনে, তখন অবশ্যই জোর শট; ভুটান এটা সহ্য করতে পারেনি,” ম্যাচ পরবর্তী সংবাদমাধ্যমকে মন্তব্য করেন ছোটন। তাঁর স্ট্র্যাটেজিতে প্রতিটি মিডফিল্ডার–ডিফেন্ডার মিলেমিশে তৈরি করেছিল এক অনবদ্য সমন্বয়।
ফাইনালে প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ
“শ্রীলঙ্কাকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে আমরা এখানে উন্নীত হয়েছি; ফাইনালে বাংলাদেশের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ উপহার দেব,” আগ্রাসী কণ্ঠে জানালেন সাবিনা খাতুন। প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখলেও, সেমিফাইনালে জমা হওয়া আত্মবিশ্বাস ফাইনাল পথে বড় থাকা অস্বাভাবিক নয়। আগামী সোমবার (১৯ মে) বিকেলে কাঠমান্ডুতে সাফ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে শুক্রবার বিকেলে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয়ী নেপালের দলের।
সাফ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের রোড টু ফাইনাল
-
গ্রুপ পর্ব: বাংলাদেশ প্রথম গ্রুপ ষ্টেজে হার না মানা রেকর্ড রেখে শীর্ষে থেকে সেমি নিশ্চিত করে।
-
প্রথম সেমিফাইনাল: ৮-০ গোলের একপক্ষীয় খেলায় ভুটানকে তাড়া করে রান রেখে ফাইনালে উত্তরণ।
-
দ্বিতীয় সেমিফাইনাল: নেপাল–ভারত লড়াইয়ের বিজয়ী সাথে মুখোমুখি হয়ে শিরোপা ছিনিয়ে আনাই মূল লক্ষ।
বর্তমান ফর্ম, গোল প্রবণতা এবং দলগত সংমিশ্রণ দেখলে বোঝা যায়, বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল সাফ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ দাবিদার। দুই বছর পর উপহার দিতে পারে দ্বিতীয় শিরোপা? তা জানতে মন রয়েছে সব ফুটবল অনুরাগীর। আমাদের মেয়েরা যা দেখাল, তাতে ফাইনালে ভুত অধরা প্রতিপক্ষের কাছে বড় উপহারই পাওয়া যায়।
এবার অপেক্ষা ফাইনালের আবেগঘন মুহূর্তের—সুবর্ণ সম্ভাবনা, ইতিহাস গড়া এবং বাংলাদেশের নারী ফুটবলের গৌরব তুলে ধরার এক নতুন অধ্যায় রচনা করার।