সর্বশেষ:

upojela sastho complexe chikitsha seba dicchen matro char jon chikitshok

পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন মাত্র ৪ জন চিকিৎসক

upojela sastho complexe chikitsha seba dicchen matro char jon chikitshok
Facebook
Twitter
LinkedIn

এস,এম,আলাউদ্দিন সোহাগ,পাইকগাছা ( খুলনা )

খুলনার পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন মাত্র ৪ জন চিকিৎসক। যাহা ইনডোর, আউটডোর, নাইট ডিউটি, জরুরী বিভাগ সহ সকল ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা খুবই দুষ্কর।

এই হাসপাতালটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও এখানে ৮০ থেকে ১১০ জন রোগী সব সময় ভর্তি থাকে। কখনো কখনো রোগীর সংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পায় বেড সংকুলানে বারান্দা ছাপিয়ে সিঁড়িতে থাকতে বাধ্য হয় রোগীরা। জনবল বলতে গেলে ১০ শয্যা বিশিষ্ট। বেড অ্যাকুপাংসি ১৫০% থেকে ১৬০%। আউটডোরে সেবা প্রার্থী থাকে কমছে কম ৪ শত থেকে সাড়ে ৪ শত জন।

প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ এই উপজেলায় বসবাস করে। পাইকগাছার পার্শ্ববর্তী জেলা সাতক্ষীরার আশাশুনি ও তালা উপজেলা, খুলনার দাকোপ, চালনা থেকেও এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। এত বিপুল সংখ্যক জনগণের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। চিকিৎসকদের কোন রেস্ট বা বিশ্রাম নেয়ার অবকাশ নাই। এই হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), পেডিয়াট্রিক্স, ইএনটি, অর্থো, সার্জারী, কার্ডিওলজি, অফথালমোলজি, স্ক্রীন এন্ড ভিডি সহ গুরুত্বপূর্ণ ৯টি চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও শূণ্য আছে ১৭ জন। ৭ জন চিকিৎসক এর মধ্যে অন্য হাসপাতালে সংযুক্তিতে ৩ জন কর্মরত। ইতোমধ্যে নতুন আরেকজনের আবার সংযুক্তিতে অর্ডার হয়েছে। বলতে গেলে মরার উপর খাঁড়ার ঘা।

এছাড়া, স্বাস্থ্য সহকারীর বেশির ভাগ পদ দীর্ঘদিন শূন্য সহ আল্ট্রাসনোলজিস্ট, মালী ও ড্রাইভার না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স সেবাও পাচ্ছে না জনগণ। অত্র কমপ্লেক্সের যেখানে মোট কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা ১৯৪ জন, সেখানে রয়েছে ১০১ জন। দীর্ঘদিন শূণ্য পদ রয়েছে ৯৩টি। এছাড়াও সার্জারি যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা, অপরিচ্ছন্নতা, ওয়ার্ডে পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত বাথরুম, খাবারে অনিয়ম সহ নানা সমস্যা রয়েছে হাসপাতালটিতে। দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে এক্সরে, আল্টাসোনোগ্রাম কার্য্যক্রম। তেলের অভাবে ঠিকমত চলেনা জেনারেটর। গত ৫ মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের অ্যাম্বুুলেন্স। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও পাইকগাছা উপজেলায় অন্তত পাঁচ লাক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র সরকারি হাসপাতাল এটি। ২০১৫ সালের ৩ মার্চ ৩১ শয্যার হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও সেবার মান বাড়েনি। দেওয়া হয়নি চাহিদামতো জনবল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদ একজন, যাহা রয়েছে। জুনিয়ার কনসালটেন্টের পদ ১১টি, রয়েছে ২টি, আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ ১টি, যাহা শূন্য, মেডিকেল অফিসার এর পদ ৭টি, রয়েছে ৩ টি, ডেন্টাল সার্জন এর পদ ২টি, রয়েছে একটি, নার্সিং সুপার ভাইজারের পদ ১ এটি, যাহা শূন্য , সিনিয়র স্টাফ নার্স এর পদ ৩২ টি, রয়েছে ২১ টি। মিডওয়াইফ এর পদ ৪ টি, রয়েছে ৩ টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদ ৭টি, রয়েছে ৩টি, ফার্মাসিস্টের পদ রয়েছে ২ টি, রয়েছে ২টি, স্যাকমো পদ ২টি, রয়েছে ২টি, স্বাস্থ্য পরিদর্শক এর পদ ৪ টি, রয়েছে ১টি, সহঃ স্বাস্থ্যঃ পরিদর্শক পদ ১৩ টি, রয়েছে ৮ টি, কার্ডিওগ্রাফার পদ ১টি, রয়েছে ১টি, ড্রাইভার এর পদ ১টি, রয়েছে ১ টি, স্বাস্থ্য সহকারীর পদ সংখ্যা ৬৫ টি, রয়েছে ৪৫টি, হারবাল এ্যাসিসটেন্ট এর পদের সংখ্যা একটি, রয়েছে ১টি, সহঃ কাম কম্পিউটার অপারেটর এর পদের সংখ্যা ৪ টি, রয়েছে ২ টি, টিএলসি এ এর পদের সংখ্যা ১টি, রয়েছে ১টি, কুক/মশালটি এর পদের সংখ্যা ২ টি, রয়েছে ১টি, অফিস সহায়ক পদের সংখ্যা ৮টি, রয়েছে ১টি। এছাড়া কম্পিউটার অপারেটর ১টি, প্রধান সহকারীর পদ একটি, হেলথ এডুকেটরের পদ ১টি, ক্যাশিয়ারের পদ ২টি, প্রধান সহঃ কাম কম্পিউটার অপারেটর পদ ১টি, পরিসংখ্যানবিদ ১ টি, স্টোর কিপারের পদ ২টি, সহঃ নার্স এর পদে ১টি, কম্পাউন্ডার পদ ১টি, নিরাপত্তা প্রহরীর পদ ২টি, জুনিয়র মেকানিকের পদের সংখ্যা ১টি, মালী এর পদের সংখ্যা ১টি, আয়া পদের সংখ্যা ২ টি, পরিচ্ছন্নতা কর্মী এর পদের সংখ্যা ৫টি, ওয়ার্ডবয় এর পদের সংখ্যা ৩টি, যাহা সব পদ গুলো শূণ্য।

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা জনগণ অনেক সময় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। অনেক সময় আউটডোরে টিকিট কেটে দুই তিন ঘন্টা অপেক্ষা করে ডাক্তার দেখাতে পারেন। আবার চিকিৎস্যা দিতে না পারায় উন্নত চিকিৎসার কথা বলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।এদিকে হাসপাতালের একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি থাকলেও আলোর মুখ দেখেনি। প্যাথলজি বিভাগে পর্যন্ত মেশিন সরঞ্জামাদি না থাকায় পরিক্ষা নিরীক্ষার জন্য রুগীদের যেতে হয় বাহিরের ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, জনবল ও উপকরণ সংকটে চরমভাবে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত সহ নানা সমস্যাম জর্জরিত এই হাসপাতালটি।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার গড়ইখালী গ্রামের অঞ্জলী, আসমা বেগমরা জানান, জরুরি বিভাগ থেকে ডাক্তার কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছেন। সেগুলো বাইরে থেকে করিয়ে আনতে বলেন। আমরা গরিব মানুষ। টাকা দিয়ে বাইরে থেকে টেস্ট করানোর অবস্থা নেই। হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ও ডাক্তার থাকলে আমাদের খুবই উপকার হতো। গদাইপুর গ্রামের মর্জিনা বলেন অসুস্থ মাকে নিয়ে চিকিৎস্যার জন্য হাসপাতালে যান। তিনি বলেন, সকাল ৮টার দিকে হাসপাতালে এসেছি। সাড়ে ১০টা বাজলো। এখনও ডাক্তার রা আমার মাকে দেখেনী। আউট ডোরে টিকিট নিয়ে বসে আছি। সেবা নিতে এসে সেবা পাচ্ছি না। মারামারি ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা জানান, হাসপাতালের দেওয়া খাবারের মান ভাল না। খাবারে অনিয়ম ও দূর্নীতি হচ্ছে কিনা কর্তৃক নজর দিবেন। খাবারে মান বাড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ বাড়াতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানান।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মাহবুবর রহমান জানান, তিনি অল্প ক’দিন আগে এখানে যোগদান করেছেন। হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও প্রয়োজনীয় জনবল বাড়ানো হয়নি। হাসপাতালের চিকিৎসক, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকট রয়েছে। অপ্রতুল সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। জরুরি ভিত্তিতে শূণ্য পদের জনবল পূরণ, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না।স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অনেক পদই শূন্য রয়েছে। যে কারণে আমরা প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। হাসপাতালে যে পরিমান রোগীর চাপ তাতে ১০০ বেডে উন্নীত করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আশাকরি, কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নিবেন।জনগণ তাদের যথাযথ চিকিৎসার সুবিধা সুনিশ্চিত করতে পারবে।

জরুরী ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটিতে চিকিৎসক ,জনবল বৃদ্ধি,যন্ত্রপাতি সহ সরঞ্জামাদি সরবরাহ করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

Facebook
Twitter
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

turan hossain rana