
এইচ এম সাগর (হিরামন),নিজস্ব প্রতিবেদক :
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী মঠবাড়ি সার্বজনীন হরি মন্দির আজও উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে স্থানীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের কেন্দ্রস্থল। সরকারি কোনো উন্নয়নমূলক সহায়তা না পাওয়ায় মন্দিরটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেবোত্তর সম্পত্তির ওপর মঠবাড়ি মৌজায় প্রায় বিশ শতক জমির ওপর নির্মিত এই মন্দিরটি প্রায় ২০-২৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এখানে নিয়মিত পূজা-পার্বণসহ মতুয়া সম্প্রদায়ের নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
দলমত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণে মন্দিরটি এলাকায় সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও মন্দিরটির কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। মন্দিরের সামনে থাকা পুকুরটি দীর্ঘদিন ধরে বালু দিয়ে ভরাটের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি নেই কোনো সীমানা প্রাচীর কিংবা যাতায়াতের জন্য নিরাপদ রাস্তা। ফলে সন্ধ্যার পর মন্দিরে আগত ভক্তদের মাঝে দেখা দেয় নিরাপত্তাজনিত আতঙ্ক। মন্দিরের নিয়মিত পূজারী নিভা সরকার,সাথী মন্ডল ও প্রিয়াঙ্কা সরকার বলেন, আমরা প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় এখানে প্রার্থনা করতে আসি। কিন্তু চারপাশে সীমানা প্রাচীর না থাকায় বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ভয় কাজ করে। সরকারের সহযোগিতায় যদি একটি সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হতো, তাহলে আমরা অনেকটাই নিরাপদ বোধ করতাম।
স্থানীয় বাসিন্দা বিষ্ণুপদ মন্ডল, নিখিল মন্ডল ও নকুল সরদার জানান, প্রতিবছর এখানে বড় আকারের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু জায়গার স্বল্পতা ও অবকাঠামোর অভাবে আমরা অনুষ্ঠানগুলো সুন্দরভাবে আয়োজন করতে পারি না। অনুষ্ঠান দেখতে আসা স্থানীয় দর্শনার্থী হারুন অর রশিদ ও এস এম. সৌরভ বলেন, এত পুরনো ও গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্দির আজও উন্নয়নের বাইরে থেকে গেছে দেখে খারাপ লাগে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সহযোগিতায় মন্দিরটির উন্নয়ন হওয়া জরুরি। মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা. সুব্রত মন্ডল বলেন, অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে মন্দিরে প্রবেশের জন্য একটি রাস্তা, সামনে থাকা পুকুরটি ভরাট, এবং ভক্তদের নিরাপত্তার জন্য একটি সীমানা প্রাচীর অত্যন্ত প্রয়োজন। সরকারি সহযোগিতা পেলে মন্দিরটিকে সুন্দর,পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সুরখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন লিটু বলেন, উক্ত মন্দিরের কোন লোকজনে এ পর্যন্ত আমার নিকট আসেনি। তাই আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারিনি। আগামী অর্থ বছরে ] সেখানে উন্নয়নমূলক কিছু কাজ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি,ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর যেন দ্রæত এই মন্দিরটির দিকে দৃষ্টি দেয় এবং প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করে। এতে একদিকে যেমন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি সুরক্ষিত হবে, অন্যদিকে এলাকায় সামাজিক সম্প্রীতিও আরও সুদৃঢ় হবে।















