সর্বশেষ:

ctoyri hoche vejal gur

দুর্গন্ধময় চিনির সিরা রং ও কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেজাল গুড়

ctoyri hoche vejal gur
Facebook
Twitter
LinkedIn

পাইকগাছা (খুলনা ) প্রতিনিধি

রমজান মাসকে সামনে রেখে দক্ষিণাঞ্চলের বাজার গুলিতে বিভিন্ন ধরনের ভেজাল গুড় মজুদে ব্যস্ত পাইকারি ও আড়ত ব্যবসায়ীরা। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণীর কারখানা মালিক ভেজাল গুড় প্রস্তুতে দিন রাত মরিয়া হয়ে খাটছেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় গড়ে ওঠা এ সকল কারখানার মধ্যে কপিলমুনি পালপাড়ার একাধিক কারখানার বাস্তব চিত্র।

ctoyri hoche vejal gurr

গত ৫ ফেব্রুয়ারী পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ করেন জনৈক কিনু পাল।অভিযোগ পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, বিনোদগঞ্জ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল বাংলাদেশের একটি সমৃদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য এই বাণিজ্য কেন্দ্রে আসেন। কপিলমুনিস্থ বিনোদগঞ্জ বাজারে গৌতম পাল ও সহোদর কিনারাম পাল,সন্তোষ পাল, রবিন পাল, পরিতোষ পাল, তপন পাল, মিঠুন পাল এবং বাসুদেব পাল দীর্ঘদিন ধরে তাদের নিজস্ব কারখানায় বিষাক্ত গুড় তৈরি করে বাজারজাত করছেন। আবেদনকারী অপর জনৈক কিনু পালের দাবি, গৌতম পাল ও কিনুপাল দীর্ঘদিন ধরে নিজ বাড়িতে কারখানা বানিয়ে বিষাক্ত ও ভেজাল খাবার গুড় তৈরি করছেন। ইতোমধ্যে সংবাদপত্রের শিরোনামও হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন কারখানার কাছে পৌঁছালে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি হচ্ছে গুড়। ভেজাল গুড় তৈরির নানা সরঞ্জাম ও বিষাক্ত কেমিক্যাল বিভিন্ন পাত্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আলামত ঢাকতে ততক্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কারখানায় নিয়োজিত কর্মীরা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে উপস্থিত স্থানীয় একজন জানান, খাঁটি গুড়ের চেয়ে ভেজাল গুড় মানুষ খায় বেশি। দামে কম, ক্রেতা বেশি। খরচ কম, লাভ বেশি। এক সময় গুড়ের চেয়ে চিনির দাম বেশি ছিল। আর ইন্ডিয়ান এলসি করা গোখাদ্য চিনির পচা সিরা তখন পাওয়া যেতো না। তাই কেউ গুড়ে চিনি দিতো না। যা গুড় হতো সবই ছিল খাঁটি। এখন চিনির চেয়ে খেজুর গুড়ের দাম বেশি হওয়ায় প্রতি কেজি চিনিতে ৫০ টাকা লাভ হয়।ইন্ডিয়ান পচা চিনিতে লাভ আরও বেশি। এই কারখানাতে অস্বাস্থ্যকর ও অখাদ্য দিয়ে দিন রাত তৈরি হচ্ছে শত শত মন ভেজাল গুড়। যাতে বাড়িতে চমক সৃষ্টিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত রং ও হাইড্রোজ (সোডিয়াম হাইড্রো-সালফাইট)। তবে এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন কারখানা মালিক।একজন গুড় ব্যবসায়ী জানান, চিনির সিরা দিলে গুড় খাঁটি গুড়ের চেয়ে বেশি শক্ত ও দানাদার হয়।সহজে ভাঙে না। অন্যদিকে, খাঁটি গুড়ের দানা হয় মোলায়েম ও চিকন।মুখে দিলে সহজে গলে যায়।রং দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ভেজাল গুড়ে লাল ও কমলা রং মিশানো হয়।

ctoyri hoche vejaal gurr

তবে কয়েকদিন পর সেই গুড়ের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। এ ছাড়া গুড় উজ্জ্বল ফর্সা দেখাতে চুন, ফিটকিরি ও হাইড্রোজ ব্যবহার করা হয়। স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় খেজুর গাছের রসের সঙ্গে রং, চিনি, ফিটকিরি,গোখাদ্য সুগার মিলের লালি ও ভারতীয় মেয়াদোত্তীর্ণ চিনির পচা সিরা ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে প্রকাশ্যে ভেজাল গুড় তৈরি হচ্ছে। দেদাচ্ছে চলছে এসব কাজ। দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তা ব্যক্তিরাও এসব জানেন না এমনটিও নয়। নিচ্ছে মাশোহারা। ঠকছে ক্রেতা, ভুগছে মানুষ।দেখার কেউ নেই। উপজেলার রাস্তাগুলোতে দেখা যায়, শত শত ভ্যান খোলা টিনের কৌটায় ইন্ডিয়ান চিনির দুর্গন্ধময় পচা সিরার অবাধ যাতায়াত। চিনির সিরা ভর্তি টিনের কোটাগুলো পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন আড়তদারদের কাছে। এ সময় দেখা যায়, টিনের কোটাগুলোর ঢাকনা নেই। গায়ে উৎপাদন, মেয়াদ ও মূল্য সম্বলিত কোনো লেবেল নেই। উপজেলায় এখন প্রতিটি বাজারেই চিনির এই সিরার গোপন ডিলারের মাধ্যমে চলছে বিকি কিনি। তেমনি একজন বিক্রেতা জানান, গোখাদ্য হিসেবে ইন্ডিয়ান চিনির সিরা বিক্রি করি। কারখানার মালিকরা তো আছেই, অনেক সময় চেনা জানা গাছিরাও আমাদের থেকে সরাসরি এই সিরা কিনে থাকেন। তারা কী কাজে এই সিরা ব্যবহার করেন জানা নেই। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড.মুহাম্মাদ জাহেরের মতে, এসব গুড় খেলে কিডনি ও লিভার অকেজো হওয়া, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ শিশুদের চিন্তাশক্তি হ্রাস পাবে।দীর্ঘদিন এসব গুড় খেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন জানান, এই মুহুর্তে দাপ্তরিক কাজে খুলনায় অবস্থান করছি দপ্তরে ফিরে অভিযোগের বিষয়টি কি অবস্থায় আছে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। দক্ষিণাঞ্চলের ভুক্তভোগী মানুষের দাবি, এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনায় এনে জরুরী ভিত্তিতে যৌথ বাহিনীর অভিযান প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যেন রমজানের পূর্বেই দক্ষিণাঞ্চলের বাজারগুলি থেকে বিষাক্ত গুড় জব্দ, অবৈধ কারখানা বন্ধ করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন এমনটি মনে করেন ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ।

Facebook
Twitter
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

turan hossain rana