সর্বশেষ:

torun uddokta shantor nojorbihin safollo

পাইকগাছার নোনাভূমিতে “সাম্মাম” চাষে তরুণ উদ্যোক্তা শান্তর নজিরবিহীন সাফল্য

torun uddokta shantor nojorbihin safollo
Facebook
Twitter
LinkedIn

এস,এম,আলাউদ্দিন সোহাগ,পাইকগাছা (খুলনা)

মরুভূমির মিষ্টি ফল ‘সাম্মাম’—যা আগে কল্পনাতেও ছিল না, আজ তা শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উর্বর মাঠে, তাও আবার খুলনা জেলার সুন্দরবন উপকূলবর্তী পাইকগাছার নোনাভূমিতে। দেখতে অনেকটা বেল বা বাতাবি লেবুর মতো হলেও ভেতরে তা রসালো ও তরমুজের মতো স্বাদযুক্ত। এই মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় ফলকে বাংলাদেশের মাটিতে সফলভাবে অভিযোজিত করেছেন খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালীর কুমখালী গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা শান্ত কুমার মন্ডল।

ইউটিউব থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে সাম্মাম চাষের পথে যাত্রা শুরু করেন শান্ত। তিনি জানান, ইউটিউবে সাম্মাম সম্পর্কে জানার পর পরীক্ষামূলকভাবে ১ বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো চাষ করি। ফলন এতটাই ভালো হয়েছে যে, আগামী মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে সাম্মাম চাষের পরিকল্পনা নিয়েছি। ইতোমধ্যেই তার এই সাফল্য স্থানীয় কৃষক ও দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের জন্ম দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাম্মাম মূলত মরুভূমির ফল হলেও বাংলাদেশের জলবায়ুতেও এর সফল চাষ সম্ভব। ‘রকমেলন’ নামেও পরিচিত এই ফল তরমুজের মতো চাষ করা হয়। বিশেষ করে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করলে উৎকৃষ্ট ফলন পাওয়া যায়। প্লাস্টিক দিয়ে মাটি ঢেকে রাখার ফলে মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং আগাছা জন্মায় কম। প্রতিটি পরিপক্ব সাম্মামের ওজন প্রায় ২ থেকে ২.৫ কেজি হয়। চারা রোপণের ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা যায়। সামান্য সার ও কম পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহারে এই ফল চাষে ভালো মুনাফা অর্জন সম্ভব।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তরমুজ ক্ষেতের মতোই সাম্মামের গাছগুলো সারি সারি করে লাগানো হয়েছে। দূর থেকে মনে হবে তরমুজ ক্ষেত, কিন্তু কাছে গিয়ে দেখা যায় গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে ছোট-বড় সাম্মাম ফল। কোনোটি এক কেজির নিচে, আবার কোনোটি দুই কেজির কাছাকাছি। হালকা বাতাসে দোল খাচ্ছে সাম্মামের সারি।

শান্ত জানান, আগে তিনি তরমুজ চাষ করতেন। ইউটিউবে সাম্মাম চাষের ভিডিও দেখে আগ্রহী হয়ে ইন্ডিয়ান কোম্পানি ‘মালিনী’র বীজ সংগ্রহ করেন এবং স্থানীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে তা বাড়িতে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, তরমুজের মতোই সহজভাবে সাম্মাম চাষ করা যায়। দেড় মাসের মধ্যেই গাছে ফল আসে এবং তিন মাসের মধ্যে তা পরিপক্ক হয়ে যায়।

শান্ত আরো জানান, বীজ, চারা তৈরি, জমি প্রস্তুত, কীটনাশক প্রয়োগ ও শ্রমিক খরচসহ তার প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মাঠের একপাশে দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে, যারা কৌতূহল নিয়ে দেখতে এসেছেন কীভাবে মরুভূমির ফল বাংলার নোনাভূমিতে হাসছে।

মাত্র তিন মাসেই শান্ত সাম্মাম বাজারজাত শুরু করেছেন। একটি সারিতে এক কাঠা জমি থেকে প্রায় ১৫ মণ সাম্মাম উৎপাদন হয়েছে। তিনি কেজিপ্রতি ১১০ টাকা দরে ঢাকার কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. একরামুল হোসেন বলেন, শান্ত’র উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এই ধরনের নতুন চাষাবাদ তরুণদের অনুপ্রাণিত করবে। আমরা সবসময় কৃষকদের নতুন ফসল চাষে সহায়তা দিয়ে থাকি। সাম্মাম চাষে ভবিষ্যতে আরও সম্ভাবনা রয়েছে। এবছর উপজেলায় প্রায় ২-৩ হেক্টর জমিতে সাম্মাম চাষ হয়েছে। আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন বলেন, শান্ত’র সাহসী উদ্যোগ শুধু তার নিজের স্বপ্নপূরণেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ারও খুলে দিয়েছে। দেশের বেকারত্ব দূরীকরণ ও কৃষি আধুনিকায়নে এ ধরনের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

turan hossain rana