সুন্দরবন ভ্রমন গাইড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
সুন্দরবন ভ্রমন : একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়
সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এবং একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়। এর মোট আয়তন প্রায় ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার, যা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিস্তৃত। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার, যা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলায় অবস্থিত। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে।
জীববৈচিত্র্যের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ সুন্দরবন। ১,৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার জলাকীর্ণ অঞ্চল জুড়ে নদীনালা, বিল ও খালসমূহের উপস্থিতি এ বনকে অনন্য করেছে। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত এই বন প্রাণীজগতে অপরিমেয় বৈচিত্র্য ধারণ করে। এখানে চিত্রা হরিণ, কুমির, সাপ এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সহ অসংখ্য প্রাণীর বাসস্থান।
সুন্দরবনে রয়েছে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, এবং ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী। এখানকার প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী, যা থেকে এ বনের নামকরণ হয়েছে।
সুন্দরবন শুধু প্রকৃতির রূপ-সৌন্দর্যের আধার নয়, এটি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বনের ঘন সবুজ গাছপালা জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, মাটির ক্ষয় রোধ এবং সামুদ্রিক ঝড় থেকে উপকূলীয় অঞ্চলকে সুরক্ষা প্রদান করে।
সুন্দরবনের প্রতি দেশের পরিবেশবান্ধব মনোভাব এবং সঠিক সংরক্ষণ প্রক্রিয়া এর ভবিষ্যৎ টিকিয়ে রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে এটি আমাদের গর্বের স্থান, যা পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান প্রাকৃতিক রত্ন হিসেবে বিবেচিত।
সুন্দরবন ভ্রমনের আকর্ষণ
সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অসাধারণ উপহার। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিস্তৃত, তবে বাংলাদেশের অংশই প্রধান আকর্ষণ হিসেবে বিবেচিত। সুন্দরবন শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, এটি জীববৈচিত্র্যের জন্যও বিখ্যাত। সুন্দরবনের আকর্ষণ ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলসুন্দরবন বিশ্বের কয়েকটি বিরল প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, কুমির, বানর, ও উভচর প্রাণীর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়। বাঘের গর্জন, হরিণের দল, এবং কুমিরের উপস্থিতি পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এছাড়া শীতকালে পরিযায়ী পাখির দল সুন্দরবনের পরিবেশকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
ম্যানগ্রোভ বনসুন্দরবন তার ঘন ম্যানগ্রোভ বনের জন্য বিখ্যাত। সুন্দরবনের বাঘ, হরিণ, এবং অন্যান্য প্রাণীর বাসস্থান এই বন। গরান, গোলপাতা, এবং সুন্দরী গাছ এই বনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই গাছগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূল রক্ষা করে।
সুন্দরবনের দর্শনীয় ভ্রমণ স্থান
সুন্দরবন, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, প্রকৃতির অসাধারণ সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। এটি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। সুন্দরবনের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণকারীদের মন কেড়ে নেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু স্থান হলো করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কটকা বিচ, জামতলা সৈকত, মান্দারবাড়ি সৈকত, হীরেন পয়েন্ট এবং দুবলার চর।
করমজল
করমজল সুন্দরবনের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। এটি কুমির প্রজনন কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। এখানে কুমির, হরিণ ও বিভিন্ন পাখি খুব সহজেই দেখা যায়। করমজলে পর্যটকরা নৌকাভ্রমণের মাধ্যমে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
হারবাড়িয়া
হারবাড়িয়া স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য। এখানকার ম্যানগ্রোভ বনের সৌন্দর্য দর্শকদের মুগ্ধ করে। পাখির কাকলি, নদীর ধারা, এবং গাছপালার ছায়াময় পরিবেশ পর্যটকদের মনে এক অন্যরকম প্রশান্তি এনে দেয়।
কটকা এবং কটকা বিচ
কটকা সুন্দরবনের ভেতরে অবস্থিত একটি মনোরম স্থান। এখানে বন্যপ্রাণী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে প্রচুর পর্যটক ভিড় জমান। কটকা বিচ বিশেষ করে এর নির্জন পরিবেশ, সাদা বালু, এবং গাঢ় সবুজ বনভূমির জন্য বিখ্যাত। এটি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগের জন্য আদর্শ স্থান।
জামতলা সৈকত
জামতলা সৈকত, যা কটকা সৈকতের কাছেই অবস্থিত, আরও নির্জন এবং শান্ত। এটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য। সৈকতের চারপাশে বিস্তীর্ণ বালুচর এবং সবুজের ছায়া দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে।
মান্দারবাড়ি সৈকত
মান্দারবাড়ি সৈকত তার মনোরম পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। সমুদ্রের ঢেউ আর আশপাশের সবুজ প্রকৃতি একে অনন্য সৌন্দর্য প্রদান করেছে। এটি ক্যাম্পিং এবং সুন্দরবন ভ্রমনের জন্য একটি আদর্শ স্থান।
হীরেন পয়েন্ট
হীরেন পয়েন্ট, যা নীলকমল নামেও পরিচিত, বাঘসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বাসস্থান। এটি ভ্রমণকারীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য গন্তব্য। এখানকার মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, পাখির ডাক, এবং সবুজ অরণ্য একে বিশেষ করে তুলেছে।
দুবলার চর
দুবলার চর তার মনোমুগ্ধকর পরিবেশ এবং রাসমেলার জন্য বিখ্যাত। এটি সুন্দরবনের একটি নির্জন দ্বীপ, যা প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং শান্ত পরিবেশ উপভোগ করার জন্য আদর্শ। শীতকালে হাজারো পাখির আগমন দ্বীপটির আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলে।
প্রতিটি স্থানই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। সুন্দরবনের এই দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখলে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়ার এক অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়।
সুন্দরবন ছবি: প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য
সুন্দরবন, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, প্রকৃতির এক অপার বিস্ময়। এটি শুধু পর্যটকদের নয়, ফটোগ্রাফারদের কাছেও একটি স্বপ্নের জায়গা। সুন্দরবনের প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী, নদী, এবং সবুজ বনভূমি এক অনন্য ছবির উপস্থাপনা তৈরি করে।
সুন্দরবনের ছবির বৈচিত্র্য
সুন্দরবনের ছবি ধারণ করতে গেলে প্রথমেই ধরা পড়ে এর সবুজ প্রকৃতি। ঘন ম্যানগ্রোভ বন, গরান ও সুন্দরী গাছের সারি, এবং নদী বা খালের পাশে বয়ে যাওয়া স্রোত ছবিকে প্রাণবন্ত করে তোলে। পাখির ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য কিংবা শান্ত নদীতে সূর্যের প্রতিফলন এমন কিছু মুহূর্ত, যা ছবিতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে।
বন্যপ্রাণীর ছবি
সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীদের ছবি যে কোনো ফটোগ্রাফারের জন্য এক বিরল সুযোগ। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, বানর, এবং কুমিরের ছবি সুন্দরবনের প্রকৃত জীবনচিত্র তুলে ধরে। এছাড়া শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের উড়ে আসার দৃশ্য বা গাছের ডালে বসে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ছবি প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করে।
প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৌন্দর্য
সুন্দরবনের নদীগুলো এর ছবির অন্যতম আকর্ষণ। বয়ে চলা নদী, নদীর পাড়ের বালুকাবেলা, এবং চারপাশের সবুজ বন এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে। কটকা ও জামতলা সৈকতের সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের ছবি, নদীর ধারে মাছ ধরার দৃশ্য, কিংবা নৌকাভ্রমণের সময়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই মুগ্ধকর।
দুবলার চরের ছবি
দুবলার চর সুন্দরবনের একটি বিখ্যাত স্থান, যা ফটোগ্রাফারদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। রাসমেলার সময়কার জমজমাট পরিবেশ বা শীতকালে পাখিদের সমাগম এখানকার ছবিকে অনন্য করে তোলে। দ্বীপের নির্জন পরিবেশ এবং নদীর ধারে জেলেদের মাছ ধরার ছবি প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্কের এক অসাধারণ উপস্থাপনা।
মানবজীবনের ছবি
সুন্দরবনের আশেপাশে বসবাসরত মানুষের জীবনযাপন এবং তাদের কাজের ছবি ফটোগ্রাফির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। মধু সংগ্রহ, মাছ ধরা, কিংবা নৌকায় চলাচল করা মানুষের ছবি সুন্দরবনের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার কথা বলে।
সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
সুন্দরবন ভ্রমনের জন্য আদর্শ সময় হলো শীতকাল, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ মাস। এই সময়ে আবহাওয়া ঠান্ডা ও মনোরম থাকে, যা সুন্দরবন ভ্রমনের জন্য আরামদায়ক। শীতকালে সুন্দরবনের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা সহজ এবং উপভোগ্য।
বর্ষাকালে, অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর, সুন্দরবনের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায়। নদী ও খালের পানি বেড়ে যাওয়ায় চারপাশ সবুজে ঢাকা পড়ে। তবে বর্ষার সময় ভ্রমণে কিছুটা ঝুঁকি থাকে, কারণ নৌযান চলাচলে সমস্যা হতে পারে।
গ্রীষ্মকালে, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন, সুন্দরবন ভ্রমণ কিছুটা কঠিন হতে পারে। এ সময় তাপমাত্রা বেশি থাকায় দীর্ঘ সুন্দরবন ভ্রমন ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে। তবে যারা প্রকৃতির প্রাণবন্ত রূপ দেখতে চান, তাদের জন্য শীতকালই সেরা।
সুন্দরবন ভ্রমনের পরিকল্পনার আগে আবহাওয়া ও স্থানীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরি। সঠিক সময়ে সুন্দরবন ভ্রমনের করলে সুন্দরবনের মুগ্ধকর সৌন্দর্য এবং বন্যপ্রাণীর বৈচিত্র্য উপভোগ করা আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
সুন্দরবন ভ্রমণের উপায়
সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য প্রথমে ঢাকা থেকে খুলনা বা মংলা যেতে হবে। খুলনা বা মংলা থেকে নৌকাযোগে সুন্দরবনে প্রবেশ করা হয়। ঢাকা থেকে খুলনায় পৌঁছানোর জন্য বাস, ট্রেন বা বিমান ব্যবহার করা যায়। খুলনা বা মংলা পৌঁছানোর পর লঞ্চ বা নৌকাভ্রমণের মাধ্যমে সুন্দরবনের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা সম্ভব।
পর্যটন এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সুন্দরবন ভ্রমণের প্যাকেজ বুক করা সহজ এবং সুবিধাজনক। প্যাকেজের মধ্যে যাতায়াত, খাবার, আবাসন ও গাইড সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকে। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও ভ্রমণ করা যায়, তবে সেক্ষেত্রে স্থানীয় গাইড নেওয়া জরুরি।
সুন্দরবন ভ্রমণের সময় নৌকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং স্থানীয় নির্দেশিকা অনুসরণ করা আবশ্যক। এটি একটি সহজ ও মনোমুগ্ধকর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
সুন্দরবন ভ্রমণ প্যাকেজ খরচ (2025)
২০২৪ সালে সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ অফার করা হচ্ছে, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দেবে। এই প্যাকেজগুলোতে সুন্দরবনের বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য এবং বন্যপ্রাণী উপভোগের সুযোগ রয়েছে।
প্যাকেজের বৈশিষ্ট্যসমূহ
- সময়সীমা ও গন্তব্য
- প্যাকেজের সময়সীমা সাধারণত ২ থেকে ৪ দিন।
- গন্তব্যগুলোর মধ্যে রয়েছে করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কটকা বিচ, জামতলা সৈকত, হীরেন পয়েন্ট, এবং দুবলার চর।
- পরিবহন ব্যবস্থা
- ঢাকা থেকে খুলনা বা মংলা পর্যন্ত বাস বা ট্রেন সেবা।
- সুন্দরবনের ভেতরে নৌকা বা লঞ্চ ভ্রমণের সুবিধা।
- খাবার ও আবাসন
- প্যাকেজে তিনবেলার খাবারের ব্যবস্থা থাকে।
- আবাসনের জন্য লঞ্চে কেবিন, স্থানীয় রিসোর্ট বা ক্যাম্পিং সেবা।
- গাইড সেবা
- অভিজ্ঞ গাইডদের দ্বারা সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ।
- বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে তথ্য প্রদান।
- বিনোদন ও কার্যক্রম
- জঙ্গল সাফারি, নৌকা ভ্রমণ।
- ক্যাম্পফায়ার, বারবিকিউ রাতের বিনোদন।
- পাখি পর্যবেক্ষণ ও ফটোগ্রাফি।
প্যাকেজের মূল্য
প্যাকেজের মূল্য প্যাকেজের সময়কাল, সুযোগ-সুবিধা এবং গ্রুপের সদস্যসংখ্যার ওপর নির্ভরশীল।
- স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজ: ৫,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা।
- প্রিমিয়াম প্যাকেজ: ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা।
সুন্দরবন ভ্রমণ কাহিনী
সুন্দরবনের অজানা রহস্যময় পরিবেশে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ। কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে আমরা কয়েকজন বন্ধু সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। খুলনা থেকে লঞ্চে উঠে নদীর বুকে ভেসে যাওয়ার মুহূর্তটি মনে আজও দাগ কেটে আছে।
প্রথম দিন আমরা পৌঁছাই করমজল। সেখানে কুমির প্রজনন কেন্দ্র এবং হরিণের দেখা পেয়ে দারুণ অভিভূত হই। এরপর লঞ্চে ভাসতে ভাসতে কটকা বিচে যাত্রা। কটকার শান্ত নির্জন পরিবেশ আর চারপাশে ম্যানগ্রোভ বনের সৌন্দর্য মন ছুঁয়ে যায়। সন্ধ্যায় আমরা ক্যাম্পফায়ার করে গল্প ও গান দিয়ে সময় কাটাই।
পরদিন ভোরে আমরা জামতলা সৈকতে যাই। সেখানে সূর্যোদয়ের অপরূপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। সৈকতের সাদা বালু, গাছের সারি, এবং নদীর ধারে হাঁটার অভিজ্ঞতা সত্যিই অনন্য।
সুন্দরবন ভ্রমনের শেষ দিনে হীরেন পয়েন্ট এবং দুবলার চর ঘুরে দেখি। দুবলার চরের নির্জন পরিবেশ এবং রাসমেলার ইতিহাস শোনা যেন এক স্বপ্নময় অনুভূতি। আমরা বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বন্যপ্রাণী, এবং প্রকৃতির বৈচিত্র্য উপভোগ করি।
তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট
সুন্দরবন ভ্রমন (FAQ)
সুন্দরবন কোথায় অবস্থিত?
সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এটি খুলনা, বাগেরহাট এবং সাতক্ষীরা জেলায় বিস্তৃত। এই অঞ্চল বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত
কীভাবে সুন্দরবন ভ্রমণ করা যায়?
ঢাকা থেকে খুলনা বা মংলা পৌঁছে নৌকার মাধ্যমে সুন্দরবনে প্রবেশ করা যায়। প্রায় সব ট্যুর কোম্পানি এ ধরনের যাত্রার ব্যবস্থা করে থাকে, যা আপনাকে সহজেই সুন্দরবনে পৌঁছে দেবে।
ভ্রমণের জন্য সেরা সময় কখন?
অক্টোবর থেকে মার্চ মাস সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য আদর্শ। এ সময়ে আবহাওয়া শীতল এবং মনোরম থাকে, যা ভ্রমণকে আরো আনন্দদায়ক করে তোলে।
সুন্দরবনে কী কী দেখা যায়?
সুন্দরবন ভ্রমনের আকর্ষণীয় বিষয়গুলো হল রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, কুমির, নানা প্রজাতির পাখি এবং ম্যানগ্রোভের বৈচিত্র্যময় বন। এইসব দেখতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন।
কতদিনের জন্য প্যাকেজ পাওয়া যায়?
সুন্দরবন ভ্রমণের প্যাকেজ সাধারণত ২ থেকে ৪ দিনের হয়ে থাকে। প্যাকেজগুলিতে দর্শনীয় স্থান, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং গাইড পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত থাকে।
কোন কোন স্থান ঘুরতে পারেন?
সুন্দরবনে করমজল, কটকা, হারবাড়িয়া, জামতলা সৈকত, হীরেন পয়েন্ট এবং দুবলার চরের মতো দর্শনীয় স্থানগুলো সুন্দরবন ভ্রমনের জন্য জনপ্রিয়।
সুন্দরবনে থাকার ব্যবস্থা কেমন?আপনি লঞ্চের কেবিন, স্থানীয় রিসোর্ট বা ক্যাম্পিংয়ের সুবিধা উপভোগ করতে পারেন। সব ধরণের বাজেটের জন্য ব্যবস্থা রয়েছে।
ভ্রমণের খরচ কত?
সুন্দরবন ভ্রমনের খরচ প্যাকেজের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত খরচ ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
নিরাপত্তার ব্যবস্থা কেমন?
পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য অভিজ্ঞ গাইড এবং নিরাপত্তাকর্মীদের দল সঙ্গে থাকে। এছাড়া স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সর্বদা সতর্ক অবস্থানে থাকে।
কোন জিনিস সঙ্গে নিতে হবে?
আপনার সঙ্গে পর্যাপ্ত পোশাক, প্রয়োজনীয় ওষুধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং ক্যামেরা রাখা উচিত, যাতে ভ্রমণটি আরামদায়ক এবং উপভোগ্য হয়।সুন্দরবন ভ্রমন একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে গেলে আপনার যাত্রা হবে আনন্দদায়ক এবং নিরাপদ।