সোনারগাঁও :ইতিহাস ও দার্শনিক স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
সোনারগাঁও : বাংলার ঐতিহাসিক প্রশাসনিক কেন্দ্র
সোনারগাঁও পূর্ববঙ্গের মুসলিম শাসকদের অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা, যার অবস্থান রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে। মধ্যযুগীয় এই নগরীর সঠিক অবস্থান নির্ধারণ করা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা যায়, পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা, দক্ষিণে ধলেশ্বরী এবং উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা পরিবেষ্টিত একটি বিস্তৃত জনপদ ছিল।
বাংলার প্রাচীন রাজধানী
বাংলার অন্যতম প্রাচীন রাজধানী হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি শুধুমাত্র প্রশাসনিক কেন্দ্র নয়, বরং নদী বন্দরের জন্যও বিখ্যাত ছিল। সোনারগাঁওয়ে স্থানীয় তাঁতি ও কারিগরদের বিশাল জনগোষ্ঠী এখানে মসলিন তৈরির কেন্দ্র গড়ে তুলেছিল, যা বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান প্রতীক। প্রাচীন গ্রীক ও রোমান বিবরণে উল্লেখ পাওয়া যায় যে, সোনারগাঁওয়ের নিকটবর্তী এলাকায় একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র বা এম্পোরিয়াম অবস্থিত ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় ধারণা করা হয়, এই বাণিজ্যিক কেন্দ্রটি সম্ভবত ওয়ারী-বটেশ্বর ধ্বংসাবশেষের সাথে সম্পর্কিত।
দিল্লি সালতানাত এবং সোনারগাঁও
দিল্লি সালতানাতের শাসনামলে সোনারগাঁও একটি বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে। ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ এবং তার পুত্র ইখতিয়ারউদ্দিন গাজী শাহের নেতৃত্বে এটি স্বাধীন সালতানাতের রাজধানী ছিল। পরে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের আমলে বাংলার সালতানাতের রাজধানী হিসেবে পরিচিত হয়। এই সময়ে এখানে রাজদরবার, টাকশাল এবং বিভিন্ন স্থাপনা নির্মিত হয়, যা সোনারগাঁওয়ের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে আরও বৃদ্ধি করে।
সুলতানরা এখানে মসজিদ, মাদ্রাসা এবং অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ করেন। পাশাপাশি অভিবাসীদের বসতি স্থাপনের মাধ্যমে এটি একটি প্রাণবন্ত জনপদে পরিণত হয়।
বারো ভূঁইয়া ও মুঘল শাসন
ইতিহাসে বারো ভূঁইয়া নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্যও পরিচিত। ঈসা খান এবং তার পুত্র মুসা খানের নেতৃত্বে মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তবে পরবর্তীতে বারো ভূঁইয়াদের পরাজয়ের মাধ্যমে মুঘল সুবাহ বাংলার একটি প্রশাসনিক জেলায় পরিণত হয়।
ব্রিটিশ শাসনামলে
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে তার পূর্বের গুরুত্ব হারায়। তৎকালীন বণিকরা এখানে পানাম নগরীতে ইন্দো-সারাসেনিক স্টাইলে টাউনহাউস তৈরি করেছিলেন। তবে নারায়ণগঞ্জ বন্দর প্রতিষ্ঠার পর সোনারগাঁওয়ের বাণিজ্যিক গুরুত্ব ক্রমে কমে যায়। ১৮৬২ সালে নারায়ণগঞ্জ বন্দর প্রতিষ্ঠিত হলে পানাম পাড়া ও আশপাশের এলাকা কার্যত ইতিহাসের অংশে পরিণত হয়।
সোনারগাঁও: ইতিহাস ও দার্শনিক স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক স্থান যা নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত। এটি বাংলাদেশের প্রাচীন রাজধানীগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং দার্শনিক গুরুত্বের কারণে বহুল পরিচিত। সোনারগাঁওয়ের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং এর দার্শনিক গুরুত্ব বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এক অমূল্য অংশ হিসেবে বিবেচিত।
সোনারগাঁওয়ের ইতিহাস
সোনারগাঁওয়ের নামটি এসেছে “সুবর্ণগ্রাম” থেকে, যা বাংলার সমৃদ্ধশালী বাণিজ্য ও রাজনীতির কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। এটি প্রাচীনকালে বঙ্গের রাজধানী ছিল এবং মুঘল ও সুলতানি আমলের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। ১৩শ শতাব্দীতে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির নেতৃত্বে বাংলার একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
মুঘল ও সুলতানি যুগ
মুঘল আমলে তার শিল্প, বাণিজ্য এবং কারুশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এখানকার বিখ্যাত মসলিন কাপড় পুরো বিশ্বে পরিচিত ছিল। সুলতান গিয়াস উদ্দীন আজম শাহ এবং ইসা খাঁ-এর শাসনামলে রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে বিকাশ লাভ করে।
ব্রিটিশ আমল
ব্রিটিশ শাসনের সময় তার বাণিজ্যিক গুরুত্ব কিছুটা হারালেও এর ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অটুট ছিল। এটি তত্কালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাহিত্যচর্চার কেন্দ্র ছিল।
দর্শনীয় স্থানসমূহ:
১. পানাম নগর
পানাম নগর সোনারগাঁওয়ের একটি ঐতিহাসিক স্থান যা প্রাচীন বাংলার আভিজাত্য এবং স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন। ব্রিটিশ আমলে এখানে গড়ে ওঠা ইমারতগুলো আজও ঐতিহাসিক স্থাপত্যের উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাসাদগুলো সুলতানি ও ব্রিটিশ স্থাপত্যের সংমিশ্রণকে ধারণ করে।
২. ফোক আর্ট মিউজিয়াম
লোক ও কারুশিল্পের জাদুঘরটি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়। এখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত কারুশিল্প, মৃৎশিল্প, পাটের পণ্য এবং ঐতিহ্যবাহী পণ্য সংরক্ষিত রয়েছে। এটি ১৯৭৫ সালে স্থাপিত হয় এবং সংস্কৃতি সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
৩. বারদী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম
এটি একটি জনপ্রিয় তীর্থস্থান যেখানে বারদী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর সমাধি অবস্থিত। আশ্রমটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এখানকার শান্ত পরিবেশ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
৪. মসলিন কারুশিল্প কেন্দ্র
সোনারগাঁওয়ের ঐতিহাসিক মসলিন কাপড় বিশ্ববিখ্যাত ছিল। বর্তমানে মসলিন কাপড়ের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় এখানে কারুশিল্প কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সোনারগাঁওয়ের দার্শনিক গুরুত্ব
ইতিহাসে সমৃদ্ধ নয়, এটি দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চল বহু ধর্ম ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণের উদাহরণ। বৌদ্ধ, হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সহাবস্থান এবং তাদের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন এই এলাকার দর্শনীয় বৈশিষ্ট্য।
বাণিজ্য ও মানবসম্পর্ক
বাণিজ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেছে। এ অঞ্চল মানবসম্পর্ক ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
পরিবেশ ও স্থাপত্যের মেলবন্ধন
সোনারগাঁওয়ের স্থাপত্যে প্রকৃতি ও মানুষের সংমিশ্রণ দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে। এর প্রতিটি ইমারত এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ দর্শনার্থীদের মন ছুঁয়ে যায়।
সোনারগাঁও জাদুঘর: লোকশিল্প ও ঐতিহ্যের মহাসাগর
জাদুঘর বাংলাদেশের লোকশিল্প ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত নিদর্শন। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের উদ্যোগে। তাঁর লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতি ও লোকশিল্পকে সংরক্ষণ করা এবং এই ঐতিহ্যকে সর্বজনীন স্বীকৃতি প্রদান। জাদুঘরটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ের ঐতিহাসিক পানাম নগরীতে অবস্থিত। এটি প্রায় ১৬ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং এখানে রয়েছে ঐতিহাসিক ও কারুশিল্পমূলক স্থাপনাসমূহ।
তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও মূল কাঠামো
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পানাম নগরীর একটি পুরনো বাড়িতে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (Bangladesh Folk Art and Craft Foundation) প্রতিষ্ঠা করেন। এই ফাউন্ডেশনের আওতায় রয়েছে ঠাকুরবাড়ি ভবন, ঈশা খাঁর তোরণ, এবং গোপীনাথ সাহা সরদার বাড়ি। এছাড়া, এখানে রয়েছে জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘর, যা প্রাচীন শিল্পকর্ম সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের কেন্দ্র।
জাদুঘরের প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের আবক্ষ ভাস্কর্য এবং জয়নুল আবেদিনের সংগ্রামী শিল্পের অনন্য ভাস্কর্য। এছাড়াও রয়েছে একটি সুবিশাল সবুজ উদ্যান, যেখানে বাংলাদেশের গ্রামীণ ঐতিহ্যের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
লোকশিল্পের ধনভাণ্ডার
জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘরে রয়েছে প্রায় ৪,৫০০-এর অধিক প্রাচীন নিদর্শন। এখানে সংরক্ষিত প্রতিটি শিল্পকর্ম গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যের পরিচায়ক। কাঠ খোদাইয়ের কারুশিল্প, পটচিত্র, মুখোশ, পোড়ামাটির ফলক, এবং আদিম জীবনভিত্তিক নিদর্শনগুলো এ জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ।
লোকজ বাদ্যযন্ত্র এবং তামা, কাসা, পিতলের তৈজসপত্রসহ গ্রামবাংলার নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীও এখানে প্রদর্শিত হয়। এগুলো দক্ষ কারিগরদের সৃষ্টিশীলতা এবং বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির রূপ ও রস ধারণ করে।
কারুশিল্প গ্রাম ও অন্যান্য আকর্ষণ
জাদুঘরের আরেকটি প্রধান আকর্ষণ হলো কারুশিল্প গ্রাম। এখানে স্থানীয় শিল্পীরা নকশিকাঁথা, মৃৎশিল্প, পাটশিল্প, এবং আরও অনেক ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের প্রদর্শনী করেন। এটি শুধুমাত্র একটি প্রদর্শনী নয়; বরং এটি একটি শিক্ষণীয় স্থান যেখানে দর্শনার্থীরা সরাসরি কারুশিল্প তৈরির প্রক্রিয়া দেখতে পারেন।
জাদুঘর প্রাঙ্গণে রয়েছে লোকজ মঞ্চ ও সেমিনার কক্ষ, যা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং গবেষণা সেমিনারের জন্য ব্যবহৃত হয়। সবুজে মোড়া উদ্যান এবং লেক দর্শনার্থীদের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে।
পরিদর্শন তথ্য
জাদুঘরটি প্রতি সপ্তাহে বুধবার এবং বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে। বাকি দিনগুলোতে এটি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ ফি জনপ্রতি ৫০ টাকা, তবে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এটি ৩০ টাকা। এই সাশ্রয়ী প্রবেশমূল্য দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে তোলে।
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
জাদুঘরের নিকটেই অবস্থিত ঐতিহাসিক পানাম নগর, যা "হারানো নগরী" নামে পরিচিত। পানাম নগর একসময় বাংলার ব্যবসায়িক কেন্দ্র ছিল এবং এর স্থাপত্যশৈলী এখনো দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। এটি জাদুঘরের দর্শকদের জন্য একটি অতিরিক্ত আকর্ষণ।
সোনারগাঁও কোথায় অবস্থিত: সব তথ্য বিস্তারিত
বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক শহর, যা দেশের প্রাচীন রাজধানীগুলোর একটি হিসেবে সুপরিচিত। এটি নারায়ণগঞ্জ জেলার উপজেলায় অবস্থিত। প্রাচীনকালে এটি বাংলা অঞ্চলের প্রশাসনিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল।
সোনারগাঁওয়ের ভৌগোলিক অবস্থান
ঢাকার কেন্দ্র থেকে প্রায় ২৫-৩০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এর সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থান নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত। এটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছাকাছি অবস্থিত, যা যাতায়াতের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক।
সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্ট: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন
বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক নগরী যা তার প্রাচীন স্থাপত্য, সংস্কৃতি এবং শিল্প-সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এই ঐতিহ্যবাহী স্থানেই অবস্থিত সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্ট, যা ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। প্রকৃতির শোভা, আধুনিক সেবাসমূহ এবং ঐতিহাসিক আবহ একত্রে এনে এটি একটি অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
অবস্থান ও যাতায়াত
সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্ট ঢাকার কাছাকাছি নারায়ণগঞ্জ জেলায় অবস্থিত, যা রাজধানী থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে সহজেই রিসোর্টে পৌঁছানো যায়। সোনারগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় স্থান এবং ঐতিহাসিক পানাম নগরের কাছাকাছি এর অবস্থান, যা পর্যটকদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ।
রিসোর্টের বৈশিষ্ট্যসমূহ
১. প্রাকৃতিক পরিবেশ
রিসোর্টটি সবুজে ঘেরা, যেখানে লেক, বাগান এবং খোলা জায়গা ভ্রমণকারীদের মনোরম অনুভূতি প্রদান করে। এখানে আগত অতিথিরা শীতল বাতাস এবং পাখির কলতানে প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য অনুভব করতে পারেন।
২. আধুনিক সুযোগ-সুবিধা
রিসোর্টে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সমারোহ। বিলাসবহুল কক্ষ, সুইমিং পুল, রেস্টুরেন্ট এবং কনফারেন্স হল রয়েছে। যারা ব্যক্তিগত বা কর্পোরেট অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
৩. ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্ট শুধু আধুনিক বিলাসিতাই নয়, ঐতিহ্যের সঙ্গেও সংযুক্ত। অতিথিরা কাছাকাছি থাকা ঐতিহাসিক স্থানগুলো যেমন পানাম নগর, লোকশিল্প জাদুঘর এবং গৌর দেউলের মতো স্থানে ভ্রমণ করতে পারেন।
৪. বিনোদনের ব্যবস্থা
রিসোর্টে বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। অতিথিরা স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটিজ, নৌবিহার এবং রিসোর্টের নিজস্ব সাংস্কৃতিক আয়োজন উপভোগ করতে পারেন। এটি শিশুদের জন্যও বিশেষ আকর্ষণীয়।
প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও উত্তর: (Frequently Asked Questions)
১. কোন আমলে সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশের রাজধানী ছিল?
মধ্যযুগে, বিশেষ করে সুলতানি আমলে এবং মুঘল আমলের প্রারম্ভে বাংলাদেশের রাজধানী ছিল। এটি ঐতিহাসিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল।
২. বাংলাদেশের লোকশিল্প জাদুঘরের বর্তমান নাম কি?
বাংলাদেশের লোকশিল্প জাদুঘরের বর্তমান নাম বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর। এটি সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত এবং দেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও কারুশিল্পকে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করে।
৩. সোনারগাঁওয়ের জাদুঘর টিকেট কত?
লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের টিকেট মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৩০ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা। বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য টিকেটের মূল্য ভিন্ন হতে পারে।
৪. বাংলাদেশের পূর্ব রাজধানীর নাম কি ছিল?
বাংলাদেশের পূর্ব রাজধানীর নাম ছিল সোনারগাঁও। এটি ঐতিহাসিকভাবে পূর্ব বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল।
৫. সোনারগাঁওয়ে কি কি আছে?
- পানাম নগর: একটি ঐতিহাসিক নগরী।
- লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর: বাংলাদেশের ঐতিহ্য সংরক্ষণ কেন্দ্র।
- গৌর দেউল: একটি প্রাচীন মন্দির।
- তাজমহল: একটি পর্যটন আকর্ষণ।
- প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্য।
৬. সোনারগাঁও প্রতিষ্ঠা করেন কে?
সোনারগাঁওয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে ইতিহাসে ইখতিয়ারউদ্দীন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির নাম উল্লেখযোগ্য। তবে সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ এখানে প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থাপন করেন।
৭. সোনারগাঁও কি জন্য বিখ্যাত?
- মধ্যযুগের রাজধানী হিসাবে।
- ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প এবং বস্ত্রশিল্পের জন্য।
- লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের জন্য।
- ঐতিহাসিক পানাম নগর এবং অন্যান্য স্থাপত্য নিদর্শনের জন্য।
৮. সোনারগাঁওয়ে জাদুঘর টিকেট মূল্য?
জাদুঘরের টিকেট মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৩০ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা।
৯. সোনারগাঁওয়ে উপজেলা কোথায়?
সোনারগাঁও উপজেলা নারায়ণগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। এটি ঢাকা থেকে প্রায় ২৫-৩০ কিলোমিটার দূরে।
১০. সোনারগাঁওয়ে তাজমহল কোথায় অবস্থিত?
তাজমহল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। এটি একটি আধুনিক পর্যটন স্থাপনা যা তাজমহলের আদলে তৈরি করা হয়েছে।
১১. সোনারগাঁওয়ে ইউনিভার্সিটি কোথায়?
ইউনিভার্সিটি ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত। এটি উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।