সর্বশেষ:

শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)
শেখ হাসিনা ওয়াজেদ: বাংলাদেশের রাজনীতির দীর্ঘতম অধ্যায়রাজনৈতিক জীবন ও চ্যালেঞ্জশাসনামলের সমালোচনাশেখ হাসিনার শিক্ষা ও বিবাহপারিবারিক হত্যা, নির্বাসন ও প্রত্যাবর্তনপ্রাথমিক রাজনৈতিক জীবনসামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন (১৯৮১-১৯৯১)বিরোধী দলীয় নেত্রী (১৯৯১–১৯৯৬)প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মেয়াদকাল (১৯৯৬–২০০১)প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়াদকালের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ (২০০৯-২০২৪)পদত্যাগ এবং বাংলাদেশ ত্যাগFAQ (প্রশ্নোত্তর)

শেখ হাসিনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

Facebook
Twitter
LinkedIn

শেখ হাসিনা ওয়াজেদ: বাংলাদেশের রাজনীতির দীর্ঘতম অধ্যায়

শেখ হাসিনা ওয়াজেদ (জন্ম: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭) একজন প্রভাবশালী বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ, যিনি দুইবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন—প্রথমবার ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল এবং পরবর্তীতে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। তিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। তবে, ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের ফলে তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। এর মাধ্যমে তার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে।

রাজনৈতিক জীবন ও চ্যালেঞ্জ

১৯৮১ সাল থেকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটানোর পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে তিনি খালেদা জিয়ার সরকারকে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য দায়ী করেন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি কিছু অর্থনৈতিক উন্নয়ন আনতে সক্ষম হন, যদিও তার মেয়াদকালে রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত ছিল।

২০০৮ সালে আবারও ক্ষমতায় ফিরে তিনি ধারাবাহিকভাবে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন। যদিও এই নির্বাচনে সহিংসতা ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রধানমন্ত্রীর পদে তার দীর্ঘ মেয়াদে তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান, তবে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে।

শাসনামলের সমালোচনা

২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে শেখ হাসিনার শাসনামল অর্থনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সমালোচিত হয়েছে। তার মেয়াদকালে বৈদেশিক ঋণ ও মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে এবং যুব unemployment পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো তার শাসনামলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলন ও সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এই আন্দোলন দমন করতে গিয়ে ব্যাপক সহিংসতা ঘটে, যা শেষে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারী নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। তিনি বিভিন্ন সময়ে টাইম, ফোর্বস এবং ফরেইন পলিসি সাময়িকীর গুরুত্বপূর্ণ তালিকায় স্থান পেয়েছেন। এছাড়া তিনি বিশ্ব নারী নেত্রী পরিষদের একজন সম্মানিত সদস্য।

শেখ হাসিনার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে উন্নয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলিও জড়িয়ে রয়েছে।

প্রাথমিক জীবন

হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পূর্ববঙ্গের টুঙ্গিপাড়ায় (বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া) একটি বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাতা ছিলেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিনি পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। পিতামাতার উভয় দিক থেকে তিনি ইরাকি আরব বংশোদ্ভূত ছিলেন। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন বাগদাদের ধর্ম প্রচারক শেখ আব্দুল আউয়াল দারবিশ, যিনি মুঘল যুগের শেষভাগে বাংলায় এসেছিলেন। ছোটবেলায় তিনি টুঙ্গিপাড়ায় মা ও নানীর তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন। পরে তার পরিবার ঢাকায় চলে আসার পর প্রথমে সেগুনবাগিচায় বসবাস শুরু করে।

১৯৫৪ সাল থেকে তিনি ঢাকায় মোগলটুলির রজনী বোস লেনের বাড়িতে পরিবারের সাথে বসবাস শুরু করেন। একই বছর তার পিতা মন্ত্রী হওয়ার পর, তারা মিন্টো সড়কের একটি সরকারি বাসভবনে চলে যান। ১৯৬০-এর দশকে তার পরিবার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে স্থায়ী হয়।

হাসিনা তার বাবার রাজনৈতিক বন্দী অবস্থায় পরিবারের জীবনের অভিজ্ঞতা বহুবার বর্ণনা করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেন যে ১৯৫৪ সালে তার পিতাকে রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যা তাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। পরিবারের সদস্যরা প্রায়ই তাকে কারাগারে দেখতে যেতেন। হাসিনা ও তার ভাইবোনেরা বাবার ব্যস্ত রাজনৈতিক জীবনের কারণে তার সাথে খুব কম সময় কাটাতে পারতেন।

এই ধরনের অভিজ্ঞতা তাকে রাজনৈতিক সচেতনতার পাশাপাশি দায়িত্বশীলতাও শিখিয়েছে।

শেখ হাসিনার শিক্ষা ও বিবাহ

শেখ হাসিনা তার প্রাথমিক শিক্ষা টুঙ্গিপাড়ার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু করেন। তার পরিবার ঢাকায় স্থানান্তরিত হলে, ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকার টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ এবং আজিমপুর গার্লস হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন এবং মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন।

১৯৬৫ সালে, তিনি গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি ইডেন কলেজে ভর্তি হয়ে স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তার ছাত্রজীবনে তিনি ১৯৬৬-৬৭ মেয়াদে ইডেন কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হন।

১৯৬৮ সালে, পড়াশোনার সময় শেখ হাসিনা বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এবং পদার্থবিজ্ঞানের ডক্টরেট ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে দুই সন্তান রয়েছে—সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি রোকেয়া হলে থাকতেন, যা ১৯৩৮ সালে মহিলা ছাত্রাবাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরে বেগম রোকেয়ার নামে নামকরণ করা হয়।

শেখ হাসিনা ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি রোকেয়া হলের মহিলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়ে ছাত্র রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

পারিবারিক হত্যা, নির্বাসন ও প্রত্যাবর্তন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কেবল শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবার বিদেশে থাকায় এই হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যান। ঘটনার সময় তারা পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন এবং সেখানকার বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের বাড়িতে আশ্রয় নেন।

এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রস্তাবে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। তারা ছয় বছর ধরে ভারতের নয়াদিল্লিতে নির্বাসিত জীবনযাপন করেন। এই সময়ে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে বাধা দেয়।

১৯৮১ সালে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। বাংলাদেশে ফেরার সময় তিনি হাজার হাজার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা লাভ করেন।

প্রাথমিক রাজনৈতিক জীবন

বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে পড়াশোনাকালীন শেখ হাসিনা ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন (১৯৮১-১৯৯১)

শেখ হাসিনা ভারতে নির্বাসিত থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় তিনি বহুবার আটক হন। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে তাকে গৃহবন্দি রাখা হয়।

১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করে এবং শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তার নেতৃত্বে গঠিত আট দলীয় জোটের আন্দোলন উল্লেখযোগ্য ছিল।

বিরোধী দলীয় নেত্রী (১৯৯১–১৯৯৬)

১৯৯০ সালের গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এরশাদের পতনের পর একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আওয়ামী লীগ বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মেয়াদকাল (১৯৯৬–২০০১)

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে, এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। তার প্রথম মেয়াদে:

  • ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর।
  • পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন।
  • বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ সম্পন্ন।
  • "একটি বাড়ি একটি খামার" প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন।

শেখ হাসিনার সরকার নারী অধিকার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারা প্রাথমিক শিক্ষায় নারী অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং স্থানীয় সরকারে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন চালু করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়াদকালের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ (২০০৯-২০২৪)

দ্বিতীয় মেয়াদকাল (২০০৯-২০১৪)

২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এই মেয়াদে তার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়। ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল।

এই সময়ে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, যেখানে সেনাবাহিনীর ৫৬ জন কর্মকর্তাসহ বহু প্রাণহানি ঘটে। শেখ হাসিনা বিচক্ষণ নেতৃত্বের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এছাড়া, এ মেয়াদে সংসদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে।

তৃতীয় মেয়াদকাল (২০১৪-২০১৯)

২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় লাভ করে। তবে বিরোধী দল বিএনপির বয়কটের কারণে নির্বাচন বিতর্কিত হয়। এই সময়ে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। ২০১৬ সালের ঢাকার হলি আর্টিজান হামলা এ মেয়াদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল।

সরকারের অন্যতম অর্জন ছিল রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়। এই সময়ে দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্রয় এবং অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়।

চতুর্থ মেয়াদকাল (২০১৯-২০২৪)

২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসে। এ সময়ে বড় প্রকল্প, যেমন পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল, উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা ছিল বড় বাধা।

২০২১ সালে সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে। তবে ২০২২ সালের অর্থনৈতিক সংকট এবং সরকারের সমালোচনার মুখে আইএমএফ থেকে আর্থিক সহায়তা নেওয়া হয়। এ সময় ইন্টারনেট বন্ধ এবং আন্দোলন দমনে কঠোর অবস্থান নেওয়া সরকারের সমালোচনার কারণ হয়।

পঞ্চম মেয়াদকাল (২০২৪)

২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় বিজয় অর্জন করে। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের মতো ঘটনা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়। ছাত্রদের দাবি এবং সহিংস বিক্ষোভ দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগকে উসকে দেয়।

এই সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে শেখ হাসিনা জোর দেন। জি২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জোরদার করা তার সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

পদত্যাগ এবং বাংলাদেশ ত্যাগ

শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পটভূমি

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন ঘেরাও ও ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর, তিনি জাতির উদ্দেশ্যে কোনো বক্তব্য দেননি। পদত্যাগের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক বিবৃতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরিকল্পনার কথা জানান।

দেশত্যাগের ঘটনা

পদত্যাগের দিন বিকাল ২:৩০-এ শেখ হাসিনা প্রথমে গাড়ি, পরে হেলিকপ্টার এবং অবশেষে একটি সি-১৩০জে হারকিউলিস পরিবহন বিমানে ভারত ত্যাগ করেন। তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা। বিমানটি ভারতের দিল্লির নিকটবর্তী হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। সেখানে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা জানান।

ভারতের ভূমিকা

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর জানান, শেখ হাসিনা স্বল্প সময়ের নোটিশে ভারতে প্রবেশের অনুমতি চান। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ প্রথমে বলেছিলেন যে, তার মা রাজনীতিতে আর ফিরবেন না। কিন্তু পরবর্তীতে ৭ আগস্ট তিনি জানান, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে সক্রিয় থাকবে। লন্ডনে আশ্রয় পাওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায়, শেখ হাসিনা সাময়িকভাবে ভারতে অবস্থান করেন। ফিনল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে তার অস্থায়ী বসবাসের পরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও তা নিশ্চিত হয়নি।

রাজনৈতিক অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়া

সজীব ওয়াজেদ দাবি করেন, একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার মদদে বিক্ষোভকারীরা হাসিনার পদত্যাগে ভূমিকা রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠলেও, হোয়াইট হাউস এসব অভিযোগ অস্বীকার করে।

২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত, শেখ হাসিনা ভারতের একটি গোপন স্থানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছেন। তার ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনো অনিশ্চিত।

FAQ (প্রশ্নোত্তর)

1. শেখ হাসিনার স্বামীর নাম কী?

উত্তর: শেখ হাসিনার স্বামীর নাম ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া। তিনি একজন প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ছিলেন এবং বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও গবেষণায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ড. ওয়াজেদ মিয়া তাঁর কর্মজীবনে সাদামাটা জীবনযাপন করতেন এবং ২০০৯ সালের ৯ মে মৃত্যুবরণ করেন।

2. প্রশ্ন: শেখ হাসিনার মা কোন ধর্মের?

উত্তর: শেখ হাসিনার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছিলেন মুসলিম। তিনি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা। বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ইসলাম ধর্ম মেনে চলতেন এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আচার-অনুষ্ঠানগুলো গুরুত্ব দিয়ে পালন করতেন।

3. প্রশ্ন: শেখ হাসিনা এখন কোথায়?

উত্তর: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ঢাকায় সরকারি বাসভবন গণভবনে অবস্থান করছেন। তবে, তিনি প্রায়শই দেশের বিভিন্ন স্থান সফর করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলন বা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য বিদেশেও যান। তার সর্বশেষ কার্যক্রম বা অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য জানার জন্য, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা সরকারি সংবাদমাধ্যমগুলো অনুসরণ করা উত্তম।

4. প্রশ্ন: শেখ হাসিনা কত তম প্রধানমন্ত্রী?

উত্তর: শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ১০ম এবং ১১তম প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন ২০০৯ সালে এবং তখন থেকে ধারাবাহিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী একজন নেতা।

5. শেখ হাসিনার জামাইয়ের নাম কি?

উত্তর: শেখ হাসিনার জামাইয়ের নাম হল খন্দকার মাশরুর হোসেন। তিনি শেখ হাসিনার বড় মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের স্বামী। খন্দকার মাশরুর হোসেন একজন পেশাদার ব্যাংকার এবং ব্যবসায়িক দিক থেকে একজন সফল ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তাঁদের দাম্পত্য জীবন দীর্ঘ এবং সুখী।

6. প্রশ্ন: শেখ হাসিনার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?

উত্তর: শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। তাঁর মূল বিষয় ছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্য

শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং এখান থেকেই তাঁর শিক্ষা জীবন শেষ করেন। তাছাড়া, তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন, যা তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে।

শিক্ষা জীবনের পাশাপাশি তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তথ্যসূত্র: বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ড এবং সরকারি তথ্যসূত্র.

7. প্রশ্ন: শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে কী প্রধান পার্থক্য?

উত্তর: শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া বাংলাদেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে, খালেদা জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন এবং দুইবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

প্রধান পার্থক্যগুলো হল:

  1. রাজনৈতিক আদর্শ:
    শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং প্রগতিশীল নীতি অনুসরণ করে। খালেদা জিয়ার বিএনপি জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মীয় সংবেদনশীলতার উপর বেশি জোর দেয়।
  2. শাসনকাল:
    শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম মেয়াদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন (২০০৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত)। খালেদা জিয়া ১৯৯১-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ সালে দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
  3. উল্লেখযোগ্য অবদান:
    শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের মতো প্রকল্পগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার সময়ে অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছিল।
  4. সম্পর্ক ও বিরোধ:
    এই দুই নেত্রীর মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ এবং প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি সাধারণ বিষয়। তাদের দ্বন্দ্ব বিভিন্ন সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্থিরতা তৈরি করেছে।

এটি একটি বহুল আলোচিত বিষয় এবং আরো জানতে হলে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বা উভয়ের রাজনৈতিক কর্মসূচি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

আপনার আরও প্রশ্ন থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। 😊

Facebook
Twitter
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

turan hossain rana