পাইকগাছা ( খুলনা ) প্রতিনিধি
খুলনার পাইকগাছার গদাইপুর ইউনিয়নের ঘোষাল গ্রামের গৃহবধূ ও মঠবাটী নবারুণ মহিলা সমিতির প্রতিষ্ঠাতা তৃপ্তি রানী রায় সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। ১৯৮৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তাঁর ৪৪ বছরের এক পুত্র ও ৩৪ বছরের এক প্রতিবন্ধী কন্যা রয়েছে। সংসারের দায়িত্ব পালন করে তিনি নারীদের কল্যাণে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে কাজ করে চলেছেন। নবারুণ মহিলা সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাঁর উদ্যোগে দর্জি বিজ্ঞান, মাদুর বুনন, মৎস্য চাষ, কাঁকড়া চাষ, হর্টিকালচার, হাস-মুরগি পালন, সমাজ সচেতনতা কর্মসূচি, বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রতিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, গরিব মেয়েদের বিবাহে সহায়তা, এবং প্রতিবন্ধী নারীদের কল্যাণে নানা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এছাড়া, বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তিতে সহায়তা করার মাধ্যমে তিনি গ্রামের নারীদের আর্থিক স্বাবলম্বী করতে অবদান রেখেছেন।
২০১১ সালে তিনি সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, পাইকগাছা শাখা থেকে ৬০ জন মহিলার নামে ডিপিএস হিসাব খুলে দেন এবং নিয়মিত কিস্তি জমা করার ব্যবস্থা করেন। ২০২১ সালে অধিকাংশ ডিপিএস ম্যাচিউড হওয়ায় নারীরা আর্থিকভাবে লাভবান হন। তৃপ্তি রানী নিজেও দর্জি বিজ্ঞানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দক্ষতা অর্জন করেছেন এবং এলাকার অনেক নারীকেও এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করেছেন।
প্রতিবন্ধী কন্যা থাকার কারণে তিনি প্রতিবন্ধী নারীদের কল্যাণে বিশেষভাবে সক্রিয়। ১৯৯৯ সালে তিনি ও তার স্বামী যৌথভাবে ব্রততী রায় শিশু ও প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন, যার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী নারীদের উন্নয়নে নানা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
তৃপ্তি রানী রায় দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে নবারুণ মহিলা সমিতির মাধ্যমে গ্রামের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। তাঁর মতো সৃজনশীল ও মানবিক উদ্যোগ সমাজে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। তিনি বিশ্বাস করেন, সবাই যদি নারীদের কল্যাণে এগিয়ে আসে, তবে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।