সর্বশেষ:

সুপার সাইক্লোন সিডর দিবস আজ, বাগেরহাটের শরণখোলায় দানবরূপী ঘুর্নিঝড় সিডরের ১৮ বছর পরও আতঙ্ক কাটেনি দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের

Facebook
Twitter
LinkedIn

আবু হানিফ, বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ

আজ ভয়াল ১৫ নভেস্বর। সুপার সাইক্লোন সিডর দিবস। ২০০৭ সালে এই দিনে দানবরূপী ঘুর্ণিঝড় সিডরে লন্ডভন্ড হয়ে দেশের উপকূলসহ বাগেরহাটর সুন্দরবন সংলগ্ন শরনখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়ন। এদিন প্রায় ২৪০ কিলোমিটার গতির ঘুর্ণিঝড় সিডরে বেড়ীবাধ ভেঙ্গে শুধু সাউথখালীতে মারা যায় হাজারেরও বেশী মানুষ।
সেই রাতের ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটের শরণখোলা পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। সেই বিভীষিকা আজও ভুলতে পারেনি শরণখোলার মানুষ। প্রবল জলোচ্ছ্বাসে মুহুর্তেই ভেসে গিয়েছিল মানুষের বসতঘর, গবাদিপশু, গাছপালা ও ক্ষেতের ফসল। চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ। সবখানেই শোনা যাচ্ছিল স্বজনহারা মানুষ বিলাপ। টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় সিডরের আঘাতে নাজুক বাঁধ ভেঙে বলেশ^র নদের জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংস্তুপে পরিনত হয় শরণখোলার সাউথখালীসহ বাগেরহাটের উপকূলীয় জনপদ।

ক্ষতিগ্রস্থরা বলছিলেন সেদিনের ভয়াবহ ক্ষতিরকথা। তার স্ত্রীসহ ৩ সন্তান মারা গেলেও প্রাণে বেচে যান অনেকে।সিডরের প্রায় ৯বছর পর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোড বলেশ্বর নদের তীরে শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী থেকে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ৬২ কিলোমিটার বাঁধের কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালে ১৪ ডিসেম্বর। নদী শাষন না করেই বাধ নিমানের দুই বছর যেতে না যেতেই বাঁধটি ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। বলেশ্বর নদের তীর রক্ষাবাঁধের ২০ কিলোমিটারের বেশিরভাগ এলাকাতেই ভয়াবহ ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। অন্তত ১১টি স্থানের সিসি ব্লক ধসে মূল বাঁধেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই ও নির্মাণে ত্রুটি এবং নদী শাসন না করে নির্মাণের ফলে বাঁধ এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাঁধের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে শরণখোলার বলেশ্বর পারের মানুষের মনে জেগে ওঠে সিডরের সেই ভয়ঙ্কর রাতের দুর্বিসহ স্মৃতি। এমন ভয়াবহ ভাঙন দেখে শরণখোলাবাসীর আক্ষেপ, সিডরের ১৮ বছর পর এসেও বাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে। আতঙ্কে দিন কাটছে বলেশ্বর নদের তীরের বাসিন্দাদের।

বাধ নির্মানের পর নদীর তীরবর্তী স্থানে বাধ ভেঙে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন কর্মকর্তারা। অধিক ঝুকিপূর্ণ স্থানে ভেঙে যাওয়া বাধ টেন্ডারের মাধ্যমে দ্রুত সংষ্কার করা হবে দাবী পানি উন্নয়ন বোর্ডের।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-১) মাধ্যমে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি শুরু হয় এই বাঁধ নির্মাণের কাজ। ‘সিএইচডবিউই’ নামের চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এই কাজ বাস্তবায়ন করে। তিন বছরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা অজুহাতে প্রকল্পটি শেষ হতে সময় লাগে প্রায় সাত বছর। কাজ শেষে ২০২৩ সালে ১৪ ডিসেম্বর বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বাঁধটি হস্তান্তর করে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু হস্তান্তরের দুই বছর যেতে না যেতেই বাঁধটি ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। বলেশ্বর নদের তীর রক্ষাবাঁধের ২০ কিলোমিটারের বেশিরভাগ এলাকাতেই ভয়াবহ ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। অন্তত ১১টি স্থানের সিসি ব্লক ধসে মূল বাঁধেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই ও নির্মাণে ত্রুটি এবং নদী শাসন না করে নির্মাণের ফলে বাঁধ এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাঁধের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে শরণখোলার বলেশ্বর পাড়ের মানুষের মনে জেগে ওঠে সিডরের সেই ভয়ঙ্কর রাতের দুর্বিসহ স্মৃতি।
এমন ভয়াবহ ভাঙন দেখে শরণখোলাবাসীর আক্ষেপ, সিডরের ১৭ বছর পর এসেও বাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে। আতঙ্কে দিন কাটছে বলেশ্বর নদের তীরের বাসিন্দাদের। নদতীরবর্তী গাবতলা গ্রামের বাসিন্দা মিজান হাওলাদার, দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর খান, উত্তর সাউথখালী গ্রামের আনোয়ার হাওলাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টেকসই বেড়িবাঁধ ছিলোনা বলে সিডরে আমরা স্বজন হারিয়েছি। ঘরবাড়ি সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদের জীবন ও সম্পদের বিনিময়ে একটি টেকসই ও উঁচু বেড়িবাঁধ চেয়েছিলাম। উচুঁ বাঁধ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা টেকসই হয়নি। নদী শাসন না করে বাঁধ নির্মাণ করায় বছর না যেতেই ভাঙন শুরু হয়েছে। দ্রুত নদী শাসনের ব্যবস্থা করা না হলে দুই-তিন বছরের মধ্যেই বাঁধ ভেঙে বিলিন হয়ে যাবে।

এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অধিক ঝূঁকিপূর্ণ প্রায় এক হাজার মিটার এলাকার ভাঙনরোধে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে শরণখোলার বগী এলাকার প্রায় ৭০০ মিটারে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ এবং সিসি ব্লক ও মোরেলগঞ্জ সীমানার ফাসিয়াতলা এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

turan hossain rana