বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে আসছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নারী, পোষ্য এবং পুরুষ কোটাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থা এবার বিলুপ্ত হতে চলেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত "সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫"–এর খসড়া অনুযায়ী, এখন থেকে শিক্ষক নিয়োগ হবে প্রায় সম্পূর্ণভাবে মেধার ভিত্তিতে।
২০১৯ সালের প্রচলিত নিয়োগ বিধিমালায়:
নারী কোটা ছিল ৬০%
পোষ্য কোটা ২০%
পুরুষ কোটা ২০%
কিন্তু ২০২৫ সালের নতুন খসড়া বিধিমালায় এই তিন কোটা পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে ২০% অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রার্থীদের। এটি মেধা ও বিষয়ের গুরুত্বকে প্রাধান্য দেওয়ার একটি সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে:
৯৩% পদে হবে মেধাভিত্তিক নিয়োগ
৭% পদ সংরক্ষিত থাকবে নির্দিষ্ট কোটা গ্রুপের জন্য, যার মধ্যে:
৫%: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান
১%: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী
১%: প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীরা
এতে বোঝা যাচ্ছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে চায় সরকার।
বিধিমালার খসড়া ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এটি যাচাই-বাছাইয়ের পর যাবে আইন, অর্থ মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি)। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ হাজার ৪৩টি সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। তবে প্রক্রিয়া চলাকালীন এই সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চূড়ান্ত বিধিমালা প্রকাশের পরই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে, এবং এই সংখ্যা বেড়ে ১০ থেকে ১২ হাজারে পৌঁছাতে পারে।
শুধু সাধারণ সহকারী শিক্ষক নয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগেও নতুন পদ তৈরি করা হয়েছে। এই নিয়োগ হবে “ক্লাস্টার ভিত্তিতে”:
প্রতি ক্লাস্টারে (২০-২৫টি বিদ্যালয়) থাকবে ১ জন সংগীত শিক্ষক ও ১ জন শারীরিক শিক্ষক
সারাদেশে মোট ক্লাস্টার: ২,৫৮৩টি
মোট নিয়োগ: ৫,১৬৬ শিক্ষক
সংগীত বিষয়ে: ২,৫৮৩ জন
শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে: ২,৫৮৩ জন
এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার মান ও পরিপূর্ণতা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিষয়ের নাম | নতুন সিদ্ধান্ত |
---|---|
নারী কোটা | বাতিল |
পোষ্য কোটা | বাতিল |
পুরুষ কোটা | বাতিল |
মেধাভিত্তিক নিয়োগ | ৯৩% |
সংরক্ষিত কোটা (বিশেষ গ্রুপ) | ৭% |
বিজ্ঞান স্নাতক প্রার্থীদের অগ্রাধিকার | ২০% |
নতুন পদ | সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক |
মোট নতুন পদ | ৫,১৬৬ |
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে যে পরিবর্তন আসছে, তা শুধু একটি বিধিমালার হালনাগাদ নয়—এটি একটি মেধা ও দক্ষতাভিত্তিক সমাজ গঠনের অংশ। পছন্দনীয়, ন্যায্য এবং সুপরিকল্পিত এই পদ্ধতি ভবিষ্যতের প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।