
এস,এম,আলাউদ্দিন সোহাগ,পাইকগাছা (খুলনা )
একসময় যেখান থেকে আলো ছড়াত, বইয়ের পাতায় জ্ঞান খুঁজে ফিরত শতশত শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রত্যাশী ও পাঠক—সেই পাইকগাছা উপজেলা পাঠাগার আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অব্যবস্থাপনা, অযত্ন ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে পাঠাগারটি কার্যত অকেজো হয়ে পড়েছে। ধুলোবালি, ফাটা ছাদ, ভাঙা দরজা-জানালা আর বখাটেদের দৌরাত্ম্যে জ্ঞানচর্চার পরিবেশে এখন শুধুই হতাশা।
একসময় এই পাবলিক লাইব্রেরী পাঠাগারে প্রতিদিন ভিড় করত বহু শিক্ষার্থী। এখন কেবল হাতে গোনা কয়েকজন চাকরি প্রত্যাশীই এখানে আসেন, তাও নিরাশ হয়ে ফিরে যান। পাঠকরা অভিযোগ করেন, পাঠাগারে নেই নতুন বই, নেই পর্যাপ্ত পত্রিকা বা পাঠের উপযোগী পরিবেশ। নেই পানির ব্যবস্থা, নেই স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট—বরং পাঠাগারের সামনে পথচারীদের প্রস্রাবের দুর্গন্ধও বইপড়ার ইচ্ছাকে গলা টিপে মারে।
স্থানীয় শিক্ষক ও সচেতন নাগরিকরা বলছেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি ছাড়া পাঠাগার পরিচালনা এখন কার্যত অসম্ভব। ই-লাইব্রেরি, গবেষণাভিত্তিক ডেটাবেজ, ই-বুক, অনলাইন পত্রিকা ইত্যাদি সংযোজন না করলে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ ফেরানো সম্ভব নয়। প্রযুক্তির যুগে পাঠাগারের ভবিষ্যৎ রক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তর জরুরি।
পাইকগাছা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, পাবলিক লাইব্রেরী “পাঠাগারটি একসময় প্রাণবন্ত ছিল। আজ সেখানে পাঠক নেই বললেই চলে। সংস্কার, বই সংযোজন এবং ডিজিটাল সুবিধা ছাড়া পাঠাগার বাঁচবে না।”
পাঠকরা আরও অভিযোগ করেন, পাবলিক লাইব্রেরী নিরাপত্তার অভাব প্রকট। নেই নিরাপত্তাকর্মী, নেই নজরদারির ব্যবস্থা। ফলে বখাটেদের আনাগোনা এবং মাদকাসক্তদের কারণে পাঠাগারের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহা বলেন, “পাঠাগারে পাঠক কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি সংযোজন অত্যন্ত জরুরি।”
এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন বলেন, “আমরা পাইকগাছা পৌরসদরে পাঠাগারকে আধুনিক রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছি। ডিজিটাল সুবিধা, নতুন বই, আসবাবপত্র ও সিসিটিভি ক্যামেরা সংযোজনের মাধ্যমে পাঠাগারকে আবারও প্রাণবন্ত করা হবে।”
পাঠাগার কেবল বই পড়ার স্থান নয়, এটি একটি সমাজের বিবেক, মানবিকতার পাঠশালা। সেই পাঠশালাকে বাঁচাতে স্থানীয় প্রশাসন, শিক্ষা বিভাগ এবং সচেতন জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।