নিজস্ব প্রতিবেদক :
খুলনার মুহসিন মহিলা কলেজের বরখাস্তকৃত সাবেক অধ্যক্ষ মো আব্দুল লতিফের প্রায় সোয়া কোটি টাকার দূর্নীতি ঢাকতে গিয়ে বর্তমান অবৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নওরোজী কবির কলেজের সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ সহ ৭জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন অন্যায় ভাবে স্থগিত করার প্রতিবাদে কলেজের সামনে যশোর-খুলনা মহাসড়কে অভিভাবক সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানা যায়,কলেজের অভ্যন্তরীণ অডিটে সাবেক অধ্যক্ষ মো আব্দুল লতিফ এর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রশাসনিক অন্যান্য অনিয়মের প্রমান পাওয়ায় তাকে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ গত ৩১ জুলাই সাময়িক বরখাস্ত করে এবং একই দিনে কলেজের উপাধ্যক্ষ মো মাহফুজার রহমান কে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
এদিকে অধ্যক্ষ বরখাস্ত থাকা অবস্থায় ১৪ আগষ্ট কলেজের ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক নওরোজী কবিরকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে একটি চিঠি প্রদান করেন । এব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে অবহিত করণ পত্রের মাধ্যমে জানানো হয়েছে অত্র কলেজে নওরোজী কবিরের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করার কোন সুযোগ নেই এবং তার এই দায়িত্ব গ্রহণ বিধি বহির্ভিত । অন্যদিকে একই পত্রে মো মাহফুজার রহমান বিধি সম্মত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে । তারপরও অজানা কারণে গত ১৭ নভেম্বর তারিখে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থিত সদস্যদের মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি তোয়াক্কা না করে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জ অধ্যাপক ইকবাল হোসেন ও নওরোজী কবির জোর করে তার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ভুতাপেক্ষা নিয়োগ অনুমোদন করেন। এদিকে উপাধ্যক্ষ পদে মো মাহফুজার রহমান সহ অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, ল্যাব সহকারী (পদার্থ, রসায়ন ও জীব বিজ্ঞান) ,অফিস সহায়ক পদের ৭ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর এমপিও সম্পন্ন হয়ে বেতন আসলেও বিধি বহির্ভ‚ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নওরোজী কবির সকলের বেতন কোন কারণ ছাড়াই স্থগিত করে ইএফটিতে কলেজের অন্য সকলের বেতন সাবমিট করেছেন । কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ইকবাল হোসেন বলেন, কলেজের সকল বিষয়ে সভাপতির সাথে পরামর্শ করার নিয়ম থাকলেও সদস্য সচিব নওরোজী কবির তা না করে নিজের মতো করেই সবকিছু করছেন। বিধি মোতাবেক যাদের এমপিও সম্পন্ন হয়ে বেতন এসেছে তাদের বেতন বন্ধ রাখার কোন সুযোগ নেই । তবে এমন হঠকারীভাবে উপাধ্যক্ষ সহ ৭ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন বন্ধ করায় কলেজের শিক্ষক কর্মচারীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এমনকি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত ব্যতীত ৭জন কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন বন্ধ করার কারণ জিজ্ঞেস করায় শিক্ষক প্রতিনিধি মো জগলুল আলমকে শোকজ করা হয়েছে মো আব্দুল লতিফ এর আর্থিক দূর্নীতি নিয়ে বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর আমলী আদালত, দৌলতপুরে মামলা চলমান যার নং- সিআর ২৩৯/২৫ । এদিকে গত ১৩ জুলাই আলাদা তিনটি নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে কলেজে ৭ টি শুন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষা গৃহীত হয় । পরীক্ষার ২/৩ দিন পরে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে মো তানভীর আহমেদ ও ল্যাব সহকারী (পদার্থ বিজ্ঞান) পদের হাদিউজ্জামান এই দুজন প্রার্থী তাদের প্রার্থীত পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ এনে সভাপতি বরাবর আবেদন করেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে নিয়োগ আপাতত বন্ধ রেখে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করায় । কিন্তু তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় নাই বলে মতামত দিয়ে কলেজ কতৃপক্ষের নিকট তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেন । একই সাথে উক্ত দুজন নিয়োগ প্রার্থী দৌলতপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, খুলনাতে একই অভিযোগ করে মামলা রুজু করেন যার নং- দেওয়ানী ১১৫/২৫ এবং নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আদালতে দরখাস্ত দাখিল করেন । কিন্তু মাননীয় আদালত শুনানি শেষে তাদের অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে দরখাস্ত নামঞ্জুর করে দিয়ে আদেশ দেন । ফলে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ সার্বিক বিষয় আলোচনা করে পদ ভিত্তিক নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রাপ্ত সকলকে নিয়োগ প্রদান করেন ।
কাগজ পত্র যাচাই করে দেখা যায় বরখাস্তকৃত সাবেক অধ্যক্ষ মো আব্দুল লতিফ অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় জুলাই মাসের ১৬ তারিখের আগেই সকলকে যোগদান করিয়েছেন। ইতোমধ্যে চলমান অডিটে সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সীমাহীন দূর্নীতির প্রমাণ প্রকাশ্যে আসলে তিনি কৌশলে তা ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সাবেক সভাপতি শেখ কামরুজ্জামান এর বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিত্তিহীন রটনা রটানো শুরু করেন এবং নিয়োগ নিয়ে মুখরোচক কথা প্রচার করতে থাকেন। এসব রটনার সত্যতা আজও পাওয়া যায়নি। এরপর উক্ত অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের প্রার্থী মো তানভীর আহমেদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একই বিষয় নিয়ে অভিযোগ করলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিষয়টি তদন্তের জন্য প্রতিনিধি মনোনয়ন করে কলেজে চিঠি পাঠায়। একই বিষয় নিয়ে বিচারিক আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বিধায় কলেজ পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি শেখ কামরুজ্জামান হাইকোর্টে রিট করেন এবং মহামান্য হাইকোর্ট জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত সংক্রান্ত উক্ত অফিস আদেশ স্থগিত করেন এবং একই বিষয় নিয়ে অন্য কোন কতৃপক্ষের তদন্ত করার আইনগত সুযোগ নেই জানিয়ে আদেশ দান করেন ( রিট নং- ১৫১৩০/২০২৫) । মহামান্য হাইকোর্টের স্থগিত আদেশ থাকা সত্বেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড মো নুরুল ইসলাম ও প্রোক্টর ডক্টর ফারুক আহম্মদ গত ৭/১১/২৫ তারিখ কলেজে এসে তদন্ত করে গেছেন এবং আদালতের আদেশ ব্যতিত তারা নিয়োগ পরীক্ষার সকল পদের লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র সাথে করে নিয়ে গেছেন । কলেজের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে শিক্ষক কর্মচারী, শিক্ষার্থী, ছাত্রী, অভিভাবক সহ এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে । তারা সকলেই আশু সমাধানের জন্য যথাযথ কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন । অন্যথায় মুহসিন মহিলা কলেজটিতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়া সহ বড় ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হতে পারে