
এস,এম,আলাউদ্দিন সোহাগ,পাইকগাছা, ( খুলনা )
পাইকগাছায় মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ জনজীবন। শুধু সন্ধ্যা বা রাতই নয়, দিনেও মশারি টানিয়ে বা কয়েল জ্বালিয়ে থাকতে হচ্ছে পৌরসভা সহ অন্যান্য এলাকার মানুষকে। এতে শহরজুড়ে চালানো পরিচ্ছন্নতার প্রকৃত কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে। মশার উপদ্রব শুধু নগর অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয় এটা ছড়িয়েছে গ্রামেও।
মশা নিধনে উপজেলা ও পৌরসভার থেকে কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় মূলত এসমস্যা নগর থেকে গ্রামের সর্বত্র এমন চিত্র। মশা নিধনে যদিও উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলার বিভিন্ন প্রোগ্রামে জনপ্রতিনিধি সহ দায়িত্বরতদের নানাভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন। সেটার কার্যকরী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন শুধু ফটোসেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। পৌরসভার সরল মাঝেপাড়া, নবপল্লী, কলেজরোড, বাসস্ট্যান্ড, শীলপাড়া, কালিবাড়ী, হসপিটাল রোড়, আল্ আমিন মসজিদ রোড, হসপিটাল, থানা, মাছকাটা, পোনা মার্কেট, স্বর্ণ পট্টি সহ বাজার, লোনাপানি কেন্দ্র, সরল উত্তরপাড়া, বাতিখালীর কলেজ রোড়, কবরখানা রোড়, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বালিকা বিদ্যালয় রোড়, কোর্ট এলাকা, শিববাটি, ৩ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন অলিগলি রাস্তা সহ বিভিন্ন এলাকার ভিতরের পাড়ামহল্লায় ঘুরে ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২ থেকে ৩ বছরের বেশি সময় তারা এলাকায় ফগার মেশিনের শব্দ শুনতে পাননি। দু’চারজন দেখেছেন ফেসবুকে।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এফএমএ রাজ্জাক বলেন, পাইকগাছা পৌরসভাটাই আস্ত ময়লা আবর্জনার স্তূপ। কপিলমুনি, বাঁকাবাজার, চাঁদখালী বাজার সহ যেখানেই শহর গড়ছে সর্বত্রই মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ। অকর্মণ্যরা চেয়ারে বসে থাকে। শুধু যে জনসাধারণের শরীরে কামড়াচ্ছে তা কিন্তু না, তাদের শরীরেও লাগছে। তারপরও সংশ্লিষ্টরা কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। মশার ঔষধ কেনার নামে লাখ লাখ টাকা তছরুপ করছে।
কোর্টে কাজ নিয়ে আসা কয়েকজনেরা জানান, বাপরে বাপ আপনাদের পৌরসভায় মশার একি উৎপাত। যে কোনো স্থানে একটু বসলেই যেন হাজার হাজার মশা। কিছু কিনে খেতে গেলে তারমধ্যেও মশা বসছে। উকিল মোহরাদের সাথে কথা বলব উপায় নেই। মশার অসহ্য যন্ত্রণায় সেখানে থাকতে পারলাম না। মশা তাড়িয়ে কতক্ষণ থাকা যায়! একটু বসামাত্রই মশা কামড়ে হাত-পা ফুলিয়ে ফেলেছে।’
গৃহিণী তাপসী, আফরোজা, সাহানারা জানান, ‘মশার জ্বালায় আমাদের সন্তানদের কে এক মূহুর্তের জন্য বাহিরে রেখে কাজ করব তার উপায় নেই। দিনেরাতে মশারীর ভিতর রাখতে হচ্ছে। মশার কয়েল জ্বালালে ধোঁয়ায় হ্যাঁচকা, সর্দি সহ শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছে’।
সহকারী অধ্যাপক আবু সাবাহ বলেন, ‘মশার যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ঠ। মশার যন্ত্রণায় শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে পারছে না। শুধু রাত বা সন্ধ্যা নয়, দিনেও মশার উপদ্রবে মানুষ অতিষ্ঠ’। বাতিখালী এলাকার সামাদ, সম্পারা বলেন, গত দুই বছরের মধ্যে একদিনও পৌরসভার মধ্যে কাউকে মশা মারতে দেখেনি। ফগার মেশিনের আওয়াজও শুনিনি। পৌরসভায় কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়াতেই মশার এমন প্রকোপ বেড়েছে।
পৌর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ নেই। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন জমে থাকা নোংরা পানি মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া পৌরসভার ডাস্টবিন ও আবর্জনা ফেলার স্থানগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার বংশবিস্তার হচ্ছে। সরল এলাকার বাসিন্দার খলিলুর, দিপকরা বলেন, ‘প্রতি বছর শীত মৌসুমের শেষের দিকে মশার উপদ্রব বাড়ে। এবছর বহু গুণ বেড়েছে। মশার কারণে ছেলেমেয়েরা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারছে না। কয়েল, স্প্রে, ইলেকট্রিক ব্যাট ব্যবহার করেও মশার উৎপাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া কয়েল জ্বালালে সেই ধোঁয়ায় নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
মশার প্রকট এতটাই খোদ পৌরভবন এবং অফিসপাড়ায় অনেকের রুমে কয়েল জ্বালিয়ে কাজ করতে দেখা যায়। হসপিটাল, ক্লিনিকেও অসুস্থ রোগীরা ভোগান্তিতে।
এব্যাপারে এ প্রতিনিধিকে মশার উপদ্রবের কথা স্বীকার করে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, ‘ঋতু পরিবর্তনের সময় স্বাভাবিকভাবে মশার উপদ্রব বাড়ে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’ পৌরসভার পাশাপাশি জনগণকেও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রত্যকের বাড়ির আশপাশ এবং নালা-নর্দমা পরিষ্কার রাখতে হবে। নালা-নর্দমায় আবর্জনা পড়ে পানি সরবরাহের পথ বন্ধ হলে সেখানে মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়। আর সেখান থেকেই উৎপত্তি হয় মশার।’
এদিকে, অর্থের অপচয় ও নাগরিক নির্যাতন না করে মশা নিধনের কীটনাশক বা কেমিক্যাল কেনার আগে পৌরসভাকে কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শ নিয়ে এক্সপার্টদের নিয়ে মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী।