সর্বশেষ:

kath puriye koyla toyrir khomotar utso ki

পাইকগাছায় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির ক্ষমতার উৎস কি!

kath puriye koyla toyrir khomotar utso ki
Facebook
Twitter
LinkedIn

পাইকগাছা ( খুলনা ) প্রতিনিধি

অবৈধভাবে কাঠ পুড়িয়ে সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে কয়লার চুল্লি।ফলে হুমকির মুখে পরিবেশ। প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে কয়লার চুল্লি। কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরিতে পরিবেশ বিপর্যয় মুখে।এ নিয়ে বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে নড়ে চড়ে বসে চুল্লির গোলা মালিকরা। অধিক লাভজনক হওয়ায় সবদিক ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসায় নেমে পড়েছেন এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। অবৈধভাবে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর ক্ষমতার উৎস কি রয়ে গেছে মানুষের অজানা!

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, খুলনা জেলার পাইকগাছা-কয়রা উপজেলার প্রধান সড়কের পাশে, চাঁদখালী বাজার সংলগ্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণে কয়লার চুল্লি গড়ে উঠেছে।এ চুল্লিতে প্রতিদিন শত শত মন কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে এতে করে পরিবেশের ব্যাপকভাবে ক্ষতি হচ্ছে।

প্রতিদিন এমন ভাবে কাঠ পুড়তে থাকলে বনজসম্পদ উজাড় হয়ে যাবে। ফলে জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণীর অস্তিত্বকে হুমকির মুখে পড়বে। এছাড়াও এটি জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমিধস, বন্যা,খরা ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি বাড়িয়ে মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। স্থানীয় সচেতন মহল বলেছেন অবৈধভাবে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।

স্থানীয় সূত্রে জানাযায়,একটি চুল্লিতে প্রতিবার দুই থেকে চার’শ মন পর্যন্ত কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিবার কমপক্ষে পঁচিশ হাজার মন কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিমাসে প্রত্যেকটি চুল্লিতে তিন থেকে চারবার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করা হয়। প্রতিমাসে কয়লার চুল্লিতে আশি হাজার থেকে এক লক্ষ মন কাঠ পোড়ানো হয়।কয়লার চুল্লির এই গোলায় ১২ মাস চলে এতে প্রতি বছর হাজার হাজার মন কাঠ পোড়ানো হয় এ গোলায়। ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক সহ সামাজিক বনায়ন। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। এদিকে বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকায় বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, প্রকৃতি ধ্বংস সহ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও অদৃশ্য কারনে এতদিন কর্তৃপক্ষ্য নিরব। এবং গোলার মালিকরা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

kath puriye koyla toyrir khomotar utso ki

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়লার চুল্লির ধোঁয়ার কারনে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কয়লার চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ায় পথচারীরা এ সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় চোখ জ্বালা সহ যেনো দম বন্ধ হয়ে যায় তাদের। এলাকাবাসীর অভিযোগ কয়লার চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ার কারনে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।বিশেষ করে চোখের বিভিন্ন সমস্যা সহ শ্বাসতন্ত্র জনিত সমস্যা যেন লেগেই থাকে। কয়লার চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে চান এলাকাবাসী।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অবৈধ চুল্লি ধ্বংস বা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করেন খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রট মো. আসিফুর রহমান ও সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম।সে সময়ে ৬৯টি চুল্লির মধ্যে স্কাভেটর দিয়ে ৫টি ধ্বংস করা হয়েছিলো। বাকী কয়লা চুল্লি গুলো বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। মানবিক কারনে ১ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ ও অপসারণ করার শর্তে স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু শাহাজাদা ইলিয়াস মুচলিকা দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেন। তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও বন্ধ হয়নি কয়লার চুল্লি, অভিযান পরিচালনার পরে পুনরায় নড়েচড়ে বসে মালিকপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এ প্রতিবেদককে জানান, এই কয়লার গোলা মালিকদের একটা সমিতি রয়েছে।তাদের একটি ফান্ডও আছে, মাসিক চাঁদা উঠিয়ে সেই ফান্ডে রাখে এবং সেটা দিয়ে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে। তারা খুব ক্ষমতাশালী, সব দিক ম্যানেজ করে তারা চলে যার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ কেউ করে না। কয়লার এই গোলা স্থায়ী ভাবে বন্ধ করতে না পারলে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে।

পাইকগাছা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী এফএমএ রাজ্জাক বলেন, প্রতিবছর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এই বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে যেয়ে কিছু টাকা জরিমানা করে। কিন্তু স্থায়ী ভাবে এই অবৈধভাবে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা বন্ধ করতে না পারলে পরিবেশের জন্য এটি হুমকিস্বরূপ। এই ভাবে চলতে থাকলে পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। তাই দ্রুত কয়লার চুল্লি গুলো স্থায়ী ভাবে বন্ধ করা প্রয়োজন।

কাঠের চুল্লিতে ব্যবহার, অধিক জনসংখ্যার চাপ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বন উজাড় হচ্ছে। বনজ সম্পদ রক্ষা করা না হলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে, যার প্রভাব পড়বে প্রকৃতিতে। দিনের পর দিন এমনি ভাবে বনজ সম্পদ উজাড় করার ফলে পরিবেশ আজ বিপর্যয়ের মুখে।ফলে হুমকির মুখে পড়েছে গ্রামবাসী। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

এবিষয়ে উপজেলার চাঁদখালী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ সরদার জানান, এই কয়লার চুল্লি গুলো ১২ (বারো) মাস চলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন অভিযান চালায় স্থানীয় প্রশাসন। কয়েকটি চুল্লি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে এবিষয়ে তার কাছে কোন অভিযোগ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন কেউ অভিযোগ করেনি, অভিযোগ করলে আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তিনি আরো বলেন এই কয়লার চুল্লি পরিবেশের ক্ষতি করছে। এছাড়াও বায়ু দূষণ সহ এলাকার গাছপালা উজাড় করে ফেলেছে।

এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ বেগম জানান, আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Facebook
Twitter
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

turan hossain rana