মোঃপারভেজ খাঁন ইমন লবনচরা(খুলনা) প্রতিনিধি
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আব্দুল্লাহ’র দ্বিতীয় প্রকৌশলী খুলনার মো. তৌফিকুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন উৎকণ্ঠায়। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেলে ঘটনা জানার পর থেকে দুশ্চিন্তা কাটছে না তাদের। পরিবারের দাবি, দ্রুত সবাইকে ভালোভাবে ফিরিয়ে আনার।
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি মো. তৌফিকুল ইসলাম খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ২০/১ করিমনগর এলাকার মো. ইকবাল এবং দিল আফরোজা দম্পতির ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে সবার ছোট।
বুধবার (১৩ মার্চ) সকালে তৌফিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা মো. ইকবাল বিমর্ষ মুখ নিয়ে নিউমার্কেটে তার মোবাইল ফোনের দোকানে যাচ্ছেন। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই কানে আসে কান্নার আওয়াজ। দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন তৌফিকের স্ত্রী জোবাইদা নোমান।
জোবাইদা নোমান বলেন, মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে আমার স্বামী আমাকে ফোন করে দুপুরে তাদেরকে জিম্মি করার কথা জানায়। সে তার বাবা-মায়ের সঙ্গেও কথা বলে। তিনি বলেন, আমাদের দাবি দ্রুত যেন আমার স্বামীসহ সকলকে উদ্ধারে সরকার পদক্ষেপ নেয়। আমি আমার স্বামীকে দ্রুত ফিরে পেতে চাই। আমার স্বামী কী অবস্থায় আছে তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছি। ২০০৮ সাল থেকে আমার স্বামী জাহাজে চাকরি করলেও এ ধরনের বিপদে এই প্রথমবার।
তৌফিকের মা দিল আফরোজা বলেন, ছেলেকে জিম্মি করার কথা শোনার পর তাকে কয়েকটি দোয়া পড়ার কথা বলি। তখন সে আমাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। কথা বলার একপর্যায়ে জলদস্যুরা তার ফোন কেড়ে নেয়। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর কথা বলতে পারিনি। গত ২৫ নভেম্বর সে বাড়ি থেকে চট্টগ্রামে ওই জাহাজটিতে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। জানি না সে কী অবস্থায় আছে। আমাদের দাবি, শুধু আমার ছেলে না সবাইকে দ্রুত সুস্থভাবে উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হোক। তিনি বলেন, ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে তো অন্তত স্বস্তিতে থাকতে পারতাম।
তৌফিকের ৭ বছরের মেয়ে তাসফিয়া তাহসিনা ও ৫ বছরের ছেলে আহমদ মুসাফি বাবার খবর শুনে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই কাঁদছে। তৌফিকের অসুস্থ বাবার দুশ্চিন্তাও বেড়ে গেছে।
২৩ বাংলাদেশি নাবিকসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ গত রোববার মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিল। সোমবার ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এটি। পণ্যবাহী জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। মঙ্গলবার (মার্চ ১২) দুপুর ১টার দিকে জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠীটির কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, ‘গোল্ডেন হক’ নামের জাহাজটি কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পরে এর নাম দেয়া হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। গত বছর এটি সংগ্রহ করে সাধারণ পণ্য পরিবহন করতে থাকে কেএসআরএম গ্রুপ। ২০১৬ সালে তৈরি হওয়া জাহাজটি লম্বায় ১৯০ মিটার।
২০১১ সালে একই মালিকের ‘এমভি জাহান মনি’ নামের আরেকটি জাহাজ আটক করে সব নাবিক ও ক্রুকে জিম্মি করে সোমালিয়ান জলদস্যুরা।