নিউজ ডেক্স:
জ্ঞান একটি আশীর্বাদ হতে পারে, তবে কখনো কখনো এটি অভিশাপের রূপ ধারণ করে। জ্ঞানার্জনের ফলে মানুষ কীভাবে নতুন কিছু শিখে, তা বিভিন্নভাবে তাদের জীবনকে প্রভাবিত করে। কিন্তু, অতিরিক্ত জ্ঞান কখনো কখনো আমাদের বিপদে ফেলে দিতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো, কীভাবে অত্যধিক অধ্যয়ন এবং জ্ঞানার্জন জীবনে অপ্রত্যাশিত সমস্যার জন্ম দেয়।
জ্ঞানার্জনের অভিশাপ বলতে বোঝায় সেই অবস্থা, যখন একজন ব্যক্তি এত বেশি জ্ঞানার্জন করেন যে, তাদের জন্য সাধারণ বা বেসিক কোনো বিষয় বোঝা বা অন্যকে বোঝানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এটি একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে আমরা এতটাই অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান অর্জন করি যে, অন্যদের জ্ঞান বা দক্ষতার সীমাবদ্ধতা আমাদের কাছে অস্পষ্ট হয়ে যায়। ফলে, আমরা অন্যদের দুর্বলতা বা তাদের প্রশ্নের কারণ বুঝতে ব্যর্থ হই।
অধ্যয়ন করা এবং শেখা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যখন এটি একটি সীমা অতিক্রম করে, তখন তা ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াতে পারে। অধিক অধ্যয়নের কারণে আমরা এমন একটি জায়গায় পৌঁছাতে পারি যেখানে নতুন তথ্য গ্রহণ করা বা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য সাধারণ সমাধান খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। আমরা এত বেশি চিন্তায় মগ্ন হয়ে যাই যে, সহজ বিষয়ে আমাদের প্রতিক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। আমাদের মন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয় না, কারণ আমরা খুব গভীরভাবে চিন্তা করতে শুরু করি।
যখন একজন ব্যক্তি অত্যন্ত শিক্ষিত হয়ে ওঠেন, তখন তারা ছোটখাটো সমস্যা সমাধানে জটিল সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এতে সময় নষ্ট হয় এবং প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জটিলতায় ফেলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি সাধারণ সমস্যা সমাধানের জন্য যদি আপনি আপনার জ্ঞানের সমগ্র ক্ষেত্রকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন, তবে আপনি প্রাথমিক সমস্যাটি দ্রুত সমাধান করতে ব্যর্থ হবেন।
জ্ঞানার্জনের আরেকটি বড় অভিশাপ হলো, আপনি যখন অন্যদের শেখানোর চেষ্টা করেন, তখন আপনার শিক্ষার পরিমাণ এত বেশি হয়ে যায় যে, অন্যরা সেটি সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে না। আপনি যে বিষয়টি সহজ মনে করছেন, সেটি অন্যের জন্য কঠিন হতে পারে। ফলে, জ্ঞানভাগাভাগি করার প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং আপনি অন্যকে যথাযথভাবে শেখাতে ব্যর্থ হন।
জ্ঞানার্জনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু উপায় রয়েছে। প্রথমত, আমাদের নিজেদেরকে বুঝতে হবে যে, আমরা যতই শিখি না কেন, সবকিছু সবাই জানবে না। তাই আমাদের শিক্ষার পদ্ধতি এবং বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানকে সরল রাখা উচিত, যাতে তা অন্যদের কাছে সহজবোধ্য হয়।
দ্বিতীয়ত, নিজের জ্ঞানকে অন্যদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার সময় ধৈর্যশীল হতে হবে। আমরা যেটা জানি, অন্যরা তা জানবে না—এই বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের শেখানোর পদ্ধতি তৈরি করতে হবে।
অত্যধিক জ্ঞান এবং অধ্যয়ন জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এর নির্দিষ্ট কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যখন আমরা অতিরিক্ত শেখার মধ্যে ডুবে যাই, তখন আমাদের জন্য জ্ঞান ভাগাভাগি করা এবং দ্রুত সমস্যা সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আমাদের উচিত নিজের জ্ঞানকে পরিমিত রাখতে এবং অন্যদের বুঝতে সাহায্য করার জন্য সহজ পদ্ধতিতে শিক্ষার প্রয়াস চালানো।