গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ফেসবুকের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে যে, ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে একদিকে যেমন পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতির আবাসন বিক্রির বিজ্ঞাপন চলছে, তেমনি গাজায় মোতায়েন ইসরায়েলি সেনাদের জন্য অর্থ সহায়তা আহ্বান জানানো বিজ্ঞাপনও প্রকাশ পাচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেসবুকে পাওয়া শতাধিক বিতাপ্রবণ বিজ্ঞাপনের মধ্যে অন্তত ৫০টি সরাসরি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তৈরি, এবং অন্যগুলো পশ্চিম তীরের দখলকৃত এলাকায় বসতি স্থাপনকে বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টা চালায়।
এই বিজ্ঞাপনগুলোর অধিকাংশই উগ্র ডানপন্থি জায়নবাদী গোষ্ঠী এবং ইসরায়েলি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, যেমন ‘রামাত আদেরেত’ ও ‘গাবাই রিয়েল এস্টেট’ পরিচালিত প্রকল্পের প্রচার ছিল। এসব প্রকল্প আন্তর্জাতিকভাবে অবৈধ দখলকৃত ভূখণ্ডে গড়ে উঠেছে।
সবচেয়ে বিতর্কিত বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে ছিল ডানপন্থি প্রতিষ্ঠান ‘রেগাভিম’-এর প্রচারণা। এতে ফিলিস্তিনি স্কুল ধ্বংসের প্রশংসা, অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান এবং এমনকি ফিলিস্তিনিদের আনন্দ-বিনোদন স্থাপনা ভেঙে ফেলার দাবি জানানো হয়েছে। একটি বিজ্ঞাপনে বলা হয়, “আমাদের টাকায় ফূর্তি করছে ফিলিস্তিনিরা”।
এই বৈষম্যমূলক বার্তার বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ব্রিটিশ এমপি ব্রায়ান লেইশম্যান বলেন, “ফেসবুক এখন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।”
মেটা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব বিজ্ঞাপন স্বয়ংক্রিয় অ্যালগরিদমের ত্রুটির কারণে প্রচারিত হয়েছে। তবে ডিজিটাল নীতিনির্ধারক ও গবেষকরা বলছেন, এই বিজ্ঞাপনগুলো সাধারণ কনটেন্টের আড়ালে নীতিমালার ফাঁক গলে গোপনে চালু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইনে বলা হয়েছে, দখলদার রাষ্ট্রের নাগরিকদের দখলকৃত এলাকায় বসতি স্থাপন করানো একটি যুদ্ধাপরাধ। আর সেই কাজের প্রচার মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক ব্যবহৃত হওয়ায়, প্রতিষ্ঠানটি যুদ্ধাপরাধে পরোক্ষ সহযোগী কি না—এই প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাজ্যের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নেভ গর্ডন বলেন, “ফেসবুক শুধু এই অপরাধ থেকে মুনাফা করছে না, বরং যুদ্ধাপরাধকে স্বাভাবিক ও বৈধ করতেও ভূমিকা রাখছে।”