
আন্তর্জাতিক ডেস্ক irane afganistander jonno somoysimar dis ses aj
ইরানে বসবাসরত লাখ লাখ আফগান শরণার্থী ও অভিবাসীর জন্য কঠিন এক সময় শুরু হতে চলেছে। দেশটির সরকার জানিয়েছে, আজ রোববার (৬ জুলাই) ইরানে অবৈধভাবে অবস্থানরত আফগানদের স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগের শেষ দিন। আগামীকাল থেকে যেসব আফগান এখনও দেশে ফেরেননি, তাদের আটক করে ফেরত পাঠানো হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ। খবর আল জাজিরার।
এই কঠোর পদক্ষেপ এমন এক সময় নেওয়া হলো, যখন ইসরায়েলের সঙ্গে টানা ১২ দিনের সংঘর্ষ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের পরমাণু স্থাপনায় বিমান হামলার ঘটনায় গোটা দেশজুড়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ চরমে পৌঁছেছে।
চলতি বছরের মার্চে ইরান সরকার একটি নির্দেশ জারি করে, যেখানে জানানো হয়—যেসব বিদেশি বৈধ কাগজপত্র ছাড়া দেশটিতে অবস্থান করছেন, তাদের ৬ জুলাইয়ের মধ্যে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে হবে। এই সময়সীমা পেরিয়ে গেলে, গ্রেপ্তার ও জোরপূর্বক প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইরানের এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, এই ধরনের গণপ্রত্যাবাসন আফগানিস্তানে মানবিক ও রাজনৈতিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে। বহু আফগান শরণার্থী তালেবান শাসন, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ এবং চরম দারিদ্র্যের কারণে ইরানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। অনেকের জন্মই হয়েছে ইরানে, যাদের কাছে ইরানই তাদের পরিচিত একমাত্র আবাসস্থল।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, ২০২৩ সাল থেকে ইরান কর্তৃপক্ষ অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যাবাসনের জন্য বিশেষ অভিযান শুরু করে। মার্চে সময়সীমা ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ আফগান ইরান ছেড়েছেন, যার মধ্যে শুধু জুন মাসেই সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার।
বর্তমানে ইরানে আনুমানিক ৪০ লাখ আফগান অভিবাসী ও শরণার্থী অবস্থান করছেন, যাদের একটি বড় অংশ সেখানে চাকরি, ব্যবসা বা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। অনেকের জীবনের ভিত্তিই তৈরি হয়েছে ইরানে।
তেহরানে বসবাসরত এক আফগান রেস্তোরাঁ মালিক, বতৌল আকবরি বলেন, “আমরা এখন স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি, ইরানে ‘অ্যান্টি-আফগান’ মনোভাব ছড়িয়ে পড়েছে। এটা অত্যন্ত কষ্টদায়ক, কারণ এটাই আমাদের একমাত্র পরিচিত ঘর।”
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানায়, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ হাজার আফগানকে ইরান থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অথচ পূর্বে এই গড় ছিল দিনে প্রায় ২ হাজার।
ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি বলেন, “ইরান সবসময় অভিবাসীদের আশ্রয় দিয়ে এসেছে, তবে জাতীয় নিরাপত্তা এখন আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের অবশ্যই নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।”
তেহরান থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক রেসুল সেরদার জানান, দেশটির অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি ও সামাজিক চাপের জন্য আফগানদের দায়ী করা হচ্ছে। ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতের পর এসব অভিযোগ আরও তীব্র হয়েছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাজনৈতিক বক্তব্যে বলা হচ্ছে, কিছু আফগান ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত—যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।