এইচ এম সাগর
হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে প্রভাশালীরা ডুমুরিয়ায় হরি ও ভদ্রা নদীর সরকারি জায়গা দখল করে আবারও পরিচালনা করছেন অবৈধ ইটের ভাটাসহ নানা স্থাপনা। নিষিদ্ধ অবৈধ ইটভাটার মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহম্মেদের চাচাতো ভাই আ’লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান গাজী তহিদুজ্জামানের সেতু ব্রিকস, সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমীনা পারভীন রুমার পিতা আঃ লতিফ জমাদ্দারের (জেবি ব্রিকস), মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের ছোট কাকা শাহাজাহান জমাদ্দারের (নুরজাহান ব্রিকস), বাবুর আলির (লুইন ব্রিকস), মশিউর রহমানের (মেরি বা এমবিআই ব্রিকস)সহ ৫টি অবৈধ ভাটার কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছেন। প্রসংগত ২০২২ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে খুলনার ডুমুরিয়ায় হরি ও ভদ্রা নদীর তীরে দুই পাশে ৪ কিলোমিটার সরকারি জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ ১৪টি ইটভাটা উচ্ছেদপূর্বক অপসারণ করা হয়। কিন্তু আদালত নির্দেশিত অবৈধ ১৪টি ইটভাটার মধ্যে স¤প্রতি ৫ট ইটভাটার কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছে ওই সকল মালিকগণ। এছাড়া লোকালয়ে লাইসেন্স বিহীন ও পরিবেশের কোন ছাড়পত্র ব্যতিরেকে ভদ্রা ও হরি নদীর চরে সাবেক উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান শারমীনা পারভীন রুমার কাকা ইকবাল জমাদ্দারের স্টোন ব্রিকসসহ একাধিক ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। কিন্তু দখলমুক্ত ও সরকারি জমি উদ্ধারে তেমন কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই মাঠ প্রশাসনের। এমনটি অভিমত ব্যক্ত করেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এবং সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া, আটলিয়া ও রুদঘরা ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের খোরস্রোতা ভদ্রা ও হরি নদী। প্রবহমান এ নদীর দুই তীরে ৪ কিলোমিটার চরভারাটি সরকারি জায়গা দখলে নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক ভূমি মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহম্মেদসহ পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরা অবৈধভাবে বিগত ১৮ বছর যাবৎ গড়ে তোলেন ইটভাটা। যা নিয়ে বিগত ২০২১ সালের ১২ ফেব্র“য়ারি একাধিক জাতীয় ও আঞ্চলিকপত্র পত্রিকায় স্বচিত্র সংবাদ প্রকাশ হয়। এ নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ওই বছেরের ২২ ফেব্র“য়ারি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। শুনানী অন্তে হাইকোর্ট স্থানীয় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা সাবেক জেলা খুলনা প্রশাসক, সাবেক ডুমুরিয়া ইউএনও, এসিল্যান্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সাবেক খুলনা জেল পুলিশ সুপার ও ডুমুরিয়া থানা ওসিসহ ৫ জন মাঠ প্রশাসনের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা “কেনো কোন পদক্ষেপ নেন নাই” বিষয়টি জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেন। কিন্তু বিবাদীগণ যথাসময়ে আদালতের আদেশ প্রতিপালন না করায় আদালত অবমাননার শামিল বলে পরিগণিত হয়। পরবর্তীতে হাইকোর্ট খুলনার সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার, সাবেক পুলিশ সুপার মাহবুব হাসান, পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার সাবেক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান ও সাবেক ডুমুরিয়া থানার ওসি আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। পরবর্তীতে এক আদেশে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের স্ব-শরীরে আদালতে হাজির হয়ে জবাব দাখিল করতে আদেশ দেন। ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি ধার্য তারিখে বিবাদীগণ হাজির হয়ে হাইকোর্টে নিঃস্বার্থ ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এরপর আদালত ডুমুরিয়ায় নদীর চরে সরকারি জায়গা থেকে ১৪টি অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ পূর্বক সকল স্থাপনা অপসারণ করতে নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক গত ২০২২ সালে খুলনার সাবেক ডিসি মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার, সাবেক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব রহমান, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, সাবেক ইউএনও আসিফ শরিফ রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ওই সকল অবৈধ ইটভাটাসহ স্থাপনা উচ্ছেদ পূর্বক অপসারণ করতে সক্ষম হয়। এতে সরকারি জায়গা হয় দখল মুক্ত।
কিন্তু স¤প্রতি স্বার্থান্বেষী ওই মহলটি আবারও সেই সকল জায়গা অবৈধভাবে দখল করে ইটের ভাটা ও ইট তৈরির খোলাসহ নানা স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এর ফলে প্রবাহমান নদীর পানির গতিপথ রোধ হয়ে জলাবদ্ধতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে সরকারি জায়গা রয়েছে প্রভাবশালীদের দখলে।
ঘটনা প্রসঙ্গে সেতু ব্রিকসের মালিক গাজী তহিদুজ্জামানের ভাই গাজী আব্দুল হক বলেন, কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছি। সে কারণে চলতি মৌসুমি ইটভাটা পরিচালনা করছি। আগামীতে বন্ধ করে দিবো। জেবি ব্রিকসের মালিক আঃ লতিফ জমাদ্দার বলেন ১৪টি ভাটার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে আমারটি কোর্ট থেকে খালাস পেয়েছি। সে জন্য ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
এ প্রসঙ্গে খর্নিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ দিদারুল ইসলাম দিদার বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ফলে জনস্বার্থে জলাবদ্ধতা নিরসন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে নদীর চরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটাসহ দখলদার উচ্ছেদ পূর্বক অপসারণ করা জরুরি। তিনি আরও বলেন আইন অমান্য করে পরিচালিত ওই সকল ইটভাটা বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের উর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় প্রশাসনের উপজেলা প্রধান ইউএনও মুহাম্মাদ আল-আমিনের ব্যবহৃত সরকারি সেল ফোনে কল দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।