এইচ, এম, সাগর (হিরামন) :
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর তৃণমূল রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা কামরুল ইসলাম শিপার। রাজনৈতিক প্রতিকূলতা, আন্দোলন-সংগ্রাম ও ব্যক্তিগত নির্যাতনের মধ্যেও যিনি জনগণের পাশেই থেকেছেন। এমনটাই মনে করেন বটিয়াঘাটাবাসী। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলা,পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য, দলীয় মূল্যবোধ এবং ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা নিয়ে খুলনায় একান্ত সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
প্রশ্ন: আপনি কবে,কখন এবং কীভাবে বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন?
কামরুল ইসলাম শিপার : আমার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা বিচারপতি আব্দুল সাত্তারের নেতৃত্বে গঠিত জাগোদলের মাধ্যমে। পরবর্তীতে জাগোদলসহ একাধিক রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করে। ১৯৭৮ সালের ৩জুন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ওই ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন। সেই নির্বাচনী প্রচারণার মধ্য দিয়েই মূলত আমার সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি গঠিত হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই জাতীয়তাবাদী যুবদল প্রতিষ্ঠিত হয়। আমি যুবদলের বটিয়াঘাটা থানা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং জেলা যুবদলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হই। পাশাপাশি সুরখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করি। পরবর্তীতে জেলা কমিটির সদস্য, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, বটিয়াঘাটা উপজেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং সুরখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হিসেবে কাজ করেছি। আজও আমি দলের একজন কর্মী হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
প্রশ্ন: আপনাকে বটিয়াঘাটার একটি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য বলা হয়, এর কারণ কী?
কামরুল ইসলাম শিপার : আমাদের পরিবার রাজনীতির সঙ্গে বহু প্রজন্ম ধরে সম্পৃক্ত। ব্রিটিশ আমলে ইউনিয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হলে আমার প্রপিতামহ খবির উদ্দিন আহমেদ ওই ইউনিয়নের পঞ্চায়েত প্রধান এবং পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি টানা ৩৬ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তার একমাত্র পুত্র, আমার পিতা আফসার উদ্দিন আহমেদ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এবং ব্রিটিশ সরকারের অধীনে কোনো চাকরি গ্রহণ করেননি। তিনিও দীর্ঘ ২৮ বছর ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং খুলনা জজ কোর্টের জুরি বোর্ডের সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে আমার পিতা মরহুম নুরুল ইসলাম ১২ বছর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও থানা কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আমিও পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম জনগণের সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়ে আছি।
প্রশ্ন: বিএনপি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
কামরুল ইসলাম শিপার : বিএনপি এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল। আমি এ দলের একজন ক্ষুদ্র কর্মী মাত্র। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচিতে অনুপ্রাণিত হয়ে এই দলে যুক্ত হয়েছিলাম। তার নেতৃত্ব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি এবং বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কর্মী হিসেবে কাজ করছি—এটি আমার জন্য গর্বের। জিয়ার ১৯ দফা, বেগম খালেদা জিয়ার বিধবা ভাতা, বৃদ্ধ ভাতা, শিক্ষাবৃত্তি, বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির মতো জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং তারেক রহমানের ৩১ দফা কর্মসূচি শুধু বাংলাদেশের নয়—এশিয়া ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও রোল মডেল হয়ে উঠেছে।
প্রশ্ন: আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণের কিছু স্মৃতি জানতে চাই। কামরুল ইসলাম শিপার : ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে বিরোধী দলের কোনো কর্মসূচিই শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে দেওয়া হয়নি। খুলনা থেকে ফুলতলা পর্যন্ত সর্ববৃহৎ মানববন্ধনে পাওয়ার হাউজ মোড়ে আমাদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়। আমি গুরুতর আহত হই এবং আজও সেই আঘাতের রেশ বহন করছি। ঢাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে বারবার বাধা ও হামলার শিকার হতে হয়েছে। একবার ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে পদ্মা নদীর ফেরি বন্ধ থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে পার হয়ে ঢাকায় পৌঁছাই। শুধু আমি নই, হাজার হাজার নেতাকর্মী এমন দুর্ভোগ সহ্য করেছেন। ২০২৩ সালের ২৮ জুলাই ও ২৮ অক্টোবরের মহা সমাবেশের ঘটনাও ইতিহাসের অংশ। আমার নিজ বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
প্রশ্ন: তারেক রহমানকে আপনি আফ্রিকা-এশিয়ার রাজনৈতিক আকাশের ‘উদীয়মান সূর্য’ বলেছিলেন, এখন কী মনে করেন? কামরুল ইসলাম শিপার : এক কথায় বলব, সেই উদীয়মান সূর্য এখন মধ্যাকাশে পূর্ণ উজ্জ্বলতায় দীপ্তিমান।
প্রশ্ন: মানুষ আপনাকে প্রচারবিমুখ, সৎ ও পরোপকারী রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখে, এর রহস্য কী?
কামরুল ইসলাম শিপার : আমি নিজেকে রাজনীতিবিদ মনে করি না, আমি একজন সাধারণ কর্মী। মানুষ আমাকে যে চোখে দেখে, তা তাদের উদারতার পরিচয়। আমি এখনো রাজনীতি শিখছি, এই ভালোবাসা ধরে রাখতে পারলেই নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করব।
প্রশ্ন: আগামী দিনের জন্য আপনার প্রত্যাশা কী?
কামরুল ইসলাম শিপার : ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়, এই আদর্শে বিশ্বাস করি। জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণ সঠিকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে গঠিত সরকার বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করবে।
পরিশেষে কিছু বলতে চান? কামরুল ইসলাম শিপার :
আপনারা জাতির বিবেক। আমি শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শে একজন কর্মী হিসেবে রাজনীতি শুরু করেছি এবং আমৃত্যু কর্মী হিসেবেই থাকতে চাই। যদি কোথাও ভুল হয়ে থাকে,ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমাকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।