পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
খুলনার পাইকগাছার দেলুটির আলোচিত চিংড়ি ঘেরের দখল ফিরে পেয়েছে স্থানীয় ঘের মালিকরা। ৮ বছর পর গত ৫ আগস্ট স্থানীয় ঘের মালিক মোস্তফা সরদার গংরা তাদের চিংড়ি ঘেরের দখল ফিরে পান। চিংড়ি ঘেরটি এর আগে ও ১৯৮৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩০ বছর মোস্তফা গংদের দখলে ছিল। এর মাঝে ২০১৭ সাল থেকে ৮ বছর ঘেরটি বেদখল হয়ে যায়। স্থানীয় প্রতিপক্ষ রবীন্দ্রনাথ সরদার গংদের পক্ষে বহিরাগত শেখ আকবর আলী টানা ৮ বছর দখলে রাখে। ঘেরের বিরোধ নিয়ে ইতোপূর্বে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক মামলা হয়েছে। যার কিছু মামলা এখনো চলমান রয়েছে। এদিকে প্রতিপক্ষ রবি আকবর গংরা চিংড়ি ঘেরের দখল ফিরে পাওয়া নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার করছে বলে অভিযোগ করেছেন বর্তমানে দখলে থাকা মোস্তফা গংরা।
উল্লেখ্য উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের দেলুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে মাগুরা দেলুটি মৌজার ১৮০ বিঘা আয়তনের একটি চিংড়ি ঘের নিয়ে দেলুটি পূর্বপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদ সরদারের ছেলে মোঃ মোস্তফা সরদার গংদের সাথে একই এলাকার দেলুটি পশ্চিম পাড়া গ্রামের রবীন্দ্রনাথ রবি সরদার গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছে। মোস্তফা গংরা স্থানীয় ১৫ জন মিলে হারি দিয়ে এবং নিজেদের জমিতে যৌথভাবে ১৯৮৫ সাল থেকে গণঘের করে আসছিল। ১৮০ বিঘার ঘেরের মধ্যে ৯০৭ দাগের ৬০ বিঘা জমি নিয়ে প্রতিপক্ষ রবি গংদের সাথে বিরোধ দেখা দেয়। মোস্তফা গংরা টানা ৩০ বছর ভোগদখলে থাকা অবস্থায় ২০১৬ সালের শেষের দিকে রবি গংদের পক্ষে বহিরাগত শেখ আকবর আলী চিংড়ি ঘের টি দখলে নেয়। এ নিয়ে একদিকে যেমন দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। অপরদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও থানা পুলিশ সহ বিভিন্ন কতৃপক্ষের নিকট একাধিক শালিসি বৈঠক হয়। শালিসের মাধ্যমে মোস্তফা গংরা ওই সময় ঘেরের ৮০ বিঘা জমির অংশ নিজেদের অনুকূলে ফিরে পায়। অবশিষ্ট ১০০ বিঘার অংশ রবি গংদের পক্ষে আকবর আলী এ বছরের ৪ আগস্ট পর্যন্ত দখলে রাখে। যদি ও এ সময়ে আকবর হোসেন ঠিক মতো হারির টাকা না দিয়ে জোর করে দখলে ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেক জমির মালিক।
৭৫ বছরের খোকন বৈরাগী ও বিজয় লক্ষী দম্পতি বলেন চিংড়ি ঘেরের মধ্যে আমাদের কিছু জমি আছে। মোস্তফার বাবা যখন ঘের করতো তখন আমাদের ডেকে ডেকে হারি এবং মাছ দিতো, আকবর মাছ তো দুরের কথা ঠিক মতো কখনো হারির টাকা দেয়নি।
এদিকে দীর্ঘ ৮ বছর পর গত ৫ আগস্ট সরকার পট পরিবর্তনের দিন মোস্তফা গংরা আলোচিত চিংড়ি ঘেরের পুনরায় দখল ফিরে পেয়ে বর্তমানে ভোগ দখলে রয়েছে বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে এমনটাই দেখা গিয়েছে। এ ব্যাপারে গৃহবধূ পারুল সরকার বলেন বর্তমানে মোস্তফারা দখলে রয়েছে তবে এ ঘের নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে। অশোক সরকার ও তারুনী রাণী বলেন প্রথম দিকে মোস্তফারা, মাঝে আকবর এবং বর্তমানে মোস্তফারা পুনরায় দখলে রয়েছে। দেলুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অঞ্জন কুমার সরকার বলেন আমি ২০০০ সালে স্কুলে যোগদান করেছি, ওই সময় মোস্তফারা দীর্ঘদিন দখলে ছিল, এরপর আকবর এবং বর্তমানে মোস্তফারা পুনরায় দখলে রয়েছে। শিক্ষক পবিত্র কুমার মন্ডল বলেন আমি এখানকার বাসিন্দা না, এজন্য কাগজপত্র অনুযায়ী ঘের কাদের সেটা বলতে পারবো না, তবে স্কুলে যোগদানের পরে মোস্তফারা ভোগ দখলে ছিল সেটাই দেখেছি। আসাদুল সরদার বলেন আকবর দখলে থাকাকালীন স্থানীয় জমির মালিকরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ঘেরের মধ্যের অনেক পরিবার গৃহছাড়া হয়েছে, কবরের ঘেরা পর্যন্ত দিতে দেয়নি তারা। মোস্তফা সরদার বলেন চিংড়ি ঘেরটি আমরা কেউ একক ভাবে করছি না, ১৫ জন মিলে আমরা যৌথভাবে গণঘের হিসেবে করে আসছিলাম। আমরা টানা ৩০ বছরের ও বেশি সময় ভোগদখলে থাকা অবস্থায় শেখ আকবর আলী নামে বহিরাগত একজন ২০১৬ সালের শেষের দিকে জোরপূর্বক দখল করে নেয়।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন হলে আকবর ও তার লোকজন ঘের ফেলে রেখে চলে যায়। পরে আমরা জমির মালিকরা ঘেরের দখল বুঝে নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোগদখলে রয়েছি। ঘের সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এলাকার কারোর সাথে কোন সমস্যা হয়নি। বরং আমরা দখল ফিরে পাওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে সম্প্রতি রবি ও আকবর সহ কিছু লোকজন সংবাদ সম্মেলন সহ নানাভাবে এটা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার করছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় এ ঘের মালিক। এ ঘেরের উপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে দাবি করেন শেখ আকবর আলী। এটা নিয়ে যাতে কোন সংঘাত না হয় এবং এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকে এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন এলাকাবাসী।