এইচ এম সাগর (হিরামন) খুলনা ব্যুরো :
খুলনার বটিয়াঘাটায় চলতি মৌসুমে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ২ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ১৭০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে।
এসব তরমুজের বাজারমূল্য ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। উৎপাদিত এসব তরমুজ উচ্চমূল্যে বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষক। গত বছরের বৃষ্টিতে তরমুজ চাষের ক্ষতি পুষিয়ে এবার লাভবান চাষিরা। তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। উপকূল এলাকার চারপাশে লবণপানি, বেড়ীবাধের মধ্যে মিষ্টি পানির আঁধার তৈরি করে বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সরকারী কৃষি কর্মকর্তা বিভিন্ন স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত সরদার আব্দুল মান্নান বলেন,
উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নে ১৫ শত হেক্টর গঙ্গারামপুর
ইউনিয়নে ৭৬০ হেক্টর, বটিয়াঘাটা সদরে ১১৯ হেক্টর,
ও জলমা ইউনিয়নে ৬ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে।
উপজেলায় এ বছর তরমুজের আবাদ হয়েছে ২ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছে ৩৮ টন। মোট ফলন ১ লাখ ১৭০ টন। যার বাজার মূল্য ৩০০ কোটি টাকার টাকার বেশী হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ তরমুজ ক্ষেত। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে তরমুজ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তবে বৃষ্টি যদি হতো তাহলে তরমুজের ফলন দ্বিগুণ বেড়ে যেত। ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে জড়ো করে রেখেছেন বিক্রির জন্য। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা তরমুজ কিনতে ক্ষেতে গিয়ে চাষিদের সঙ্গে দরদাম করে ক্ষেতসহ কিনে নিচ্ছেন। এই তরমুজ ক্ষেত থেকে ট্রলি বোঝাই করে ট্রাক ও কার্গ ভর্তি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। শ্রমিকরা ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে ট্রলিতে করে এনে ট্রাক ও কার্গ লোড করছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে তুলে বাজারজাত করার জন্য ব্যস্ত চাষি ও ব্যাপারীরা। বাজার দাম ভালো পাওয়ায় খুশি কৃষকেরা। কেউ খেত হিসাবে তরমুজ বিক্রি করছেন আবার কেউবা পাইকারি বাজারে তরমুজ বিক্রি করছেন। এতে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ তরমুজ খেত বিক্রি হয়ে গেছে। ৬০ শতাংশ তরমুজ কৃষকের খেতে রয়েছে। বটিয়াঘাটা সহ পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক তরমুজ ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছে ব্যাবসাহীরা।
স্থানীয় সুকদাড়া এলাকার কৃষক তমাল গোলদার, নিখিল রায়,উজ্জ্বল বিশ্বাস, ও রায়পুর এলাকার মান্নান শেখ, আরোজ আলী শেখ, আলম সরদার জানান, বিগত বছরে তরমুজ চাষে আর্থিকভাবে লোকসান হলেও এবার লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। তবে অনাবৃষ্টির কারণে পানি দিতে অধিক টাকা খরচ হয়েছে।
বটিয়াঘাটা সদর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দীপন কুমার হালদার বলেন ,তরমুজ চাষ করতে বিঘা প্রতি খরচ হয়, ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা । প্রতি বিঘা তরমুজ ৯০ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে । আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আবু বকর সিদ্দিক বলেন , এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। তবে মিষ্টি পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় তরমুজ চাষে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এসব এলাকায় খাল খনন করে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করতে পারলে তরমুজের চাষ আরও বাড়ানো যেত। এখন পর্যন্ত বাজারে তরমুজের দাম সন্তোষজনক। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ক্ষেতের ৪০/৪৫ ভাগ তরমুজ বিক্রি হয়ে গেছে। এ বছর বাম্পার ফলন হওয়ায় আগামীতে তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।