সর্বশেষ:

BNP and Jamaat

বিএনপির সাথে জামায়াতের রাজনৈতিক দূরত্ব কি সত্যিই বাড়ছে?

BNP and Jamaat
Facebook
Twitter
LinkedIn
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এখন এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে, যেখানে আওয়ামী লীগ কার্যত নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোগী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী আবারও মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠলেও, তাদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে।

তৃণমূল স্তর থেকে শুরু করে দল দুটির শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ লক্ষ্য করা গেছে, যা গত কয়েকদিনে আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। বিশেষ করে গত অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সময় দেয়া নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ভিন্নমত প্রকাশ করে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়। বিএনপি বলছে যে নির্বাচন আয়োজনের জন্য আরও সময় প্রয়োজন, অন্যদিকে জামায়াত তাদের মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আসছে। এতে করে দুই দলের মধ্যে দীর্ঘদিনের ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

এতদিন রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে ২৫ বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করা বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে হঠাৎ করে কেন এই মতবিরোধ দেখা দিলো, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনার পতনের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে যে ঐক্য ছিল, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে। অনেকেই ভাবছেন, এতদিনের মিত্রদের মধ্যে কেন হঠাৎ এমন সম্পর্কের অবনতি ঘটলো এবং এর পেছনের কারণ কী হতে পারে।

সম্প্রতি, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান একটি বক্তব্য দিয়েছেন যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন যে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। তার এই বক্তব্য বিএনপির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিএনপির অনেক নেতা মনে করছেন, এই বক্তব্য জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে দিচ্ছে এবং তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় তৈরি করছে। বিএনপির কিছু নেতার মতে, জামায়াতের এমন বক্তব্য তাদের দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক কৌশলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

তবে, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে বিএনপির সাথে তাদের বোঝাপড়ায় কোনো সংকট নেই এবং দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক অটুট রয়েছে। তার মতে, কিছু রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও, তা বড় কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। জামায়াত ও বিএনপির দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং বোঝাপড়া এখনও দৃঢ় রয়েছে বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “জামায়াত একটি স্বাধীন রাজনৈতিক দল। তাদের মতামত ও অবস্থান তাদের নিজস্ব এবং বিএনপির সাথে জামায়াতের বিরোধের কোনো কারণ নেই।” তিনি আরও বলেন যে, “বিএনপি এবং জামায়াত বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করতে পারে, কিন্তু এর মানে এই নয় যে তাদের মধ্যে কোনো বৈরি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।”

বিগত কয়েক দশকের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ককে বেশ জটিল বলে মনে করা হয়। দুই দল একত্রে কাজ করলেও, বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা গেছে, যা কখনও কখনও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের মধ্যে এই মতবিরোধ কীভাবে সমাধান হবে এবং রাজনৈতিক মাঠে তাদের ভবিষ্যৎ কৌশল কী হবে, তা নিয়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আলোচনা করছেন।

তাছাড়া, শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করতে বিএনপি ও জামায়াত কীভাবে নিজেদের অবস্থানকে পুনর্বিন্যাস করবে, তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে জল্পনা চলছে।

 

সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা
Facebook
Twitter
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

turan hossain rana