
অভিবাসন নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে কড়াকড়ির দেশ হিসেবে ধরা হলেও বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। গত পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বেশি ভারতীয় নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি আরব। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভিসা সংক্রান্ত অনিয়ম ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের কারণে সৌদি আরবে ভারতীয়দের বহিষ্কারের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সেখানে অবস্থান করা, বৈধ ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া কাজ করা এবং শ্রম আইন ভঙ্গ—এই কারণগুলোই বহিষ্কারের পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী।
লোকসভায় দেওয়া বক্তব্যে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিং বলেন, শুধু ভিসা ওভারস্টেই নয়, অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তার কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া, অবৈধভাবে কাজ করা এবং দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলায় জড়িয়ে পড়ার কারণেও ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
রিয়াদে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে রেকর্ডসংখ্যক ভারতীয় নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
২০২১ সালে: ৮,৮৮৭ জন
২০২২ সালে: ১০,২৭৭ জন
২০২৩ সালে: ১১,৪৮৬ জন
২০২৪ সালে: ৯,২০৬ জন
২০২৫ সালে (এখন পর্যন্ত): ৭,০১৯ জন
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন আইন কঠোর হলেও সেখানে ভারতীয়দের বহিষ্কারের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ভারতীয় মিশনের তথ্যমতে, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩,৪১৪ জন ভারতীয়কে ফেরত পাঠানো হয়েছে—যা সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হলেও সৌদি আরবের সংখ্যার তুলনায় তা অর্ধেকেরও কম।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহর যেমন হিউস্টন, সান ফ্রান্সিসকো, নিউইয়র্ক ও শিকাগোতে এই সংখ্যা আরও কম। হিউস্টনে ফেরত পাঠানো হয়েছে মাত্র ২৩৪ জন ভারতীয়, আর বাকি শহরগুলোতে সংখ্যাটি দুই বা তিন অঙ্কেই সীমাবদ্ধ।
এই পরিসংখ্যান আবারও দেখিয়ে দিল—মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করতে গিয়ে অভিবাসন ও শ্রম আইন মেনে চলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, নচেৎ জীবনের স্বপ্ন পূরণের পথ যে কত সহজেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে পারে।