খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার খরাস্রত শৈলমারী নদী এখন ছোট নালায় পরিণত হয়েছে। উজানের পানির চাপ না থাকায় পলি জমে এক সময়ের খরস্রোতা এ নদী বর্তমানে এমন অবস্থায পৌঁছেছে। অপরদিকে একের পর এক নদীর চর দখলের কারণে সংকুচিত হয়ে পড়ছে নদীর প্রশস্ততা। ফলে বর্ষায় পানির চাপে প্লাবিত হচ্ছে দুই পারের লোকালয়।
দুর্ভোগ বাড়ছে দুই কূলের হাজারো মানুষের। জানা যায়, উপজেলা সদরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈলমারী নদী চলে গেছে পশ্চিম দিকে। ডুমুরিয়া উপজেলায় গিয়ে মিশেছে নদীর শাখা। বটিয়াঘাটা থেকে একটু পশ্চিম দিক এগোলে শৈলমারী খেয়াঘাট। শৈলমারী নদীর মুখে রয়েছে ১০ ভেন্টের (কপাট) স্লুইস গেট। এরপর নদী পারে বাঁধ দিয়ে দুই নদীর সম্মিলন স্থানে রয়েছে একটি ইটখোলা। এটি তৈরি করেছিলেন সাবেক আ'লীগ এমপি শেখ নূরুল হক। এখন তার উত্তরাধিকাররা এটির মালিক। শৈলমারী নদীর মুখে ১০ ভেন্টের (কপাট) স্লুইস গেটে রয়েছে একটি সাইন বোর্ড। তাতে লেখা ব্যক্তি মালিকানাধীন এই জমিতে স্লুইস গেট তৈরি করেছে পাউবো। এখানে সঠিক সময় পানি সরবরাহসহ নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি সহকারী কমিশনার (ভূমি) বটিয়াঘাটার নির্দেশে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা তদন্ত করে শৈলমারী নদীর খাস জমিতে অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে জেলা প্রশাসক খুলনার কার্যালয়ের অভিযোগ শাখায় ৩টি ইটভাটার নাম উল্লেখ্য করে প্রতিবেদন জমা দেন। এ ছাড়া নদীর দুই পাশে জেগে উঠা চর এক শ্রেণির ভূমিদস্যুসহ এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রাতারাতি দখল করে নিচ্ছে। এই নদীতে এক সময় ছিল প্রবল স্রোত। নদীর দুই পারের শত শত বিঘা জমি ও বসতির পানি গিয়ে পড়ত এই নদীতে। শত শত বিঘা জমির চাষাবাদ হতো এই নদীর ওপর নির্ভর করে। তবে এখন উজানের পানি না পাওয়ায় জোয়ারের পানিতে বিপুল পলি জমেছে এই নদীর বুকে। ফলে এ নদীর বেশির ভাগ অংশ ভাটার সময় পানি শুকিয়ে যায়। তখন শৈলমারীর খেয়াঘাট অচল হয়ে পড়ে। মানুষ হেঁটে নদী পার হয়।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৮-১০ বছর ধরে আস্তে আস্তে এই নদীর মৃত্যু ঘটেছে। একসময় এই নদীর প্রবল স্রোতের কারণে নৌকা চালানো কঠিন ছিল। অথচ এখন ভাটার সময় পানি এত কমে যায় যে, নৌকা চালানোর উপায় থাকে না। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর দুই পাড়জুড়ে বিশাল চর। জোয়ার এলে ডুবে যায়,জোয়ার শেষে ফের ভেসে ওঠে। উপকূলীয় নদীগুলো প্রাকৃতিকভাবে জোয়ারের নিয়ন্ত্রণাধীন। উজানের পানিই এসব নদীর ভারসাম্য তৈরি করে। কিন্তু নদী ব্যবস্থাপনার নামে অপরিকল্পিত বাঁধ, স্লুইস গেট নির্মাণ, ইটভাটা গড়ে তোলা নদী দখল ইত্যাদি কারণে মারা যাচ্ছে নদী। যাহা পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। কর্তৃপক্ষের কাছে উপজেলা বাসীর দাবি, নদীটি খনন করে তার স্বাভাবিক চলাচলের পথ ফিরিয়ে দেওয়াসহ সব অবৈধ দখলদারকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করার। এক সময় এই নদীতে ফেরি চলাচল করতো। তখন দক্ষিণ এলাকার মানুষ শহরের সঙ্গে যোগাযোগ এর একমাত্র মাধ্যম ছিলো ফেরি পারাপার। একালাবাসী খরস্রোতা শৈলমারি নদী খননের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শিল্পপতি প্রফুল্ল কুমার রায় সরকারি শোলমারী নদী বাধ দিয়ে গড়ে তুলেছে বিশাল ইটভাটা। তিনি বলেন,সরকার ভূমিহীনদের দিয়ে দিয়েছে। সরকারি জমি থাকলে তারা জমি মেপে বের করে নিয়ে যাক। আমি লীজ নিয়ে দখলে আছি।
বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে য়ারা তান্নি বলেন, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। খুলনা পানি উন্নয়ন বিভাগ-১ বাপাউবো (অঃ দঃ) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম বলেন,নদীটা পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে,পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে খননের প্রস্তুতি চলছে। আশা করি তাড়াতাড়ি ঐ নদী খনন করে কৃষকদের ধান চাষ এবং মৎস্য চাষিদের মৎস্য আহরণ করার সুযোগ পাবে। পাশাপাশি অবৈধ দখলদার দের উচ্ছেদ করারও প্রস্তুতি চলছে।