পাইকগাছা ( খুলনা ) প্রতিনিধি
খুলনার পাইকগাছায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মিথ্যা মামলার ঘটনায় পুলিশ বাদীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ধারায় পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। জি,আর-৪৭/২৫ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোস্তাফিজুর রহমান দীর্ঘ তদন্ত সম্পন্ন করে পাইকগাছার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিলের পর ২৭ মার্চ বাদীর বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় প্রতিবেদন দিয়েছেন।
এ ঘটনায় এলাকায় রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট'রা বলছেন, কারোর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হলে পুলিশ তদন্ত করে এমন কড়াকড়ি পদক্ষেপ নিলে মিথ্যা মামলার প্রবনতা কমবে এবং কেউ মিথ্যা মামলা করার সাহস পাবেনা। জানাগেছে, উপজেলার চাঁদখালী'র হাসিমপুরে মাত্র ১২ শতক কৃষি জমি নিয়ে কাশেম সরদার পরিবার ও প্রতিবেশী রজব আলী সরদার পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলছিল।
৩ বছর পুর্বে স্থানীয় মোন্তাজ-সামাদ গাজীর কাছ থেকে রজব আলী তার বাড়ী সংলগ্ন ১২ শতক জমি কোবলামূলে ক্রয় করলেও দখলে যেতে পারেনি।
গত ৫ আগস্টের পর আবুল কাশেম ও তার ছেলে খায়রুল পরিবারের কাছ থেকে রজব-রুস্তম'রা এ জমি' দখল করে নেয়। এখান থেকে শুরু হয় দু'পরিবারের মধ্যে পাল্টা-পাল্টি মামলা। এ পর্যন্ত একাধিক মামলার ঘটনা ঘটেছে। সুত্র বলছেন, রজব-রুস্তম পরিবার প্রতিপক্ষ কাশেম-খায়রুল সরদার পরিবারের বিরুদ্ধে পাইকগাছা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিআর-১১৭/২৫ ও থানায় জিআর-১০/২৫ মামলা করেন।
অপরদিকে আবুল কাশেম'র পরিবার রজব-রুস্তম গংদের বিরুদ্ধে জি,আর-১১/২৫, ২৫/২৫, ৪৭/২৫, এমআর-৫৯/২৫ ও "খ "অঞ্চল খুলনা, নারী-শিশু আদালতে পিটিশন-১৬/৩৫ মামলা করেন। জানাগেছে, দু'পক্ষই সবগুলো মামলায় জামিনে আছে। এদিকে কাসেম সরদারের ছেলে নজরুল সরদারের দায়ের করা জিআর-৪৭/২৫ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোস্তাফিজুর রহমান দীর্ঘ তদন্ত সম্পন্ন করেছেন।
স্বাক্ষ্য প্রমানে মামলাটি মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় তিনি আসামী রুস্তম সরদার ও তার ছেলে সাদ্দাম,রজব আলী ও তার হাসান, মান্নান গাজী আসামীদের নাম উল্লেখ করে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে উল্টে বাদী নজরুল সরদারের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
পুলিশ প্রতিবেদন ও অনুসন্ধানে জানাগেছে, হাসিমপুরের আবুল কাশেমের ছেলে রবিউল ইসলাম ইতোপুর্বে স্থানীয় মান্নান গাজী বিরুদ্ধে আদালতে সিআর-১২৪৭/২৪ মামলা করেন।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারী আদালতে এ মামলার নথি উপস্থাপন করে মান্নান গাজী জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত বাদীকে তলব করলে রবিউল তার নিয়োগকৃত আইনজীবী'র মারফত খবর পেয়ে ভাই নজরুল সরদারের মোটরসাইকেলে বাড়ী থেকে পাইকগাছার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
দ্রুত বেগে আসার পথে বেলা ২ টার দিকে শিববাটী ব্রীজের অপররপ্রান্তে ভ্যানের সঙ্গে মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা ঘটে । এতে রবিউলের নাক ফেটে রক্তাক্ত জখম হয়। তাকে
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনাটি রহস্যজনক ভাবে অন্যদিকে মোড় নেয়। প্রতিপক্ষের সাথে জমির বিরোধ'কে কেন্দ্র করে দুর্ঘটনায় রবিউল সরদারের আহতের ঘটনাটি তার ভাই নজরুল সরদার বাদী হয়ে রজব-রুস্তম সহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৩৪২/১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৫০৬ (২)/ ১১৪ ধারায় জিআর-৪৭/২৫ মামলা করেন। এ মামলায় অনেকেই জেল খেটেছেন।
পুলিশ অনুসন্ধানে নেমে দফায়-দফায় তদন্ত করে এর কোন সত্যতা পায়নি। মামলা তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,তদন্তকালে ঘটনা সম্পর্কে কোন ব্যক্তি বা দোকানদার কোন তথ্য বা কিছুই বলতে পারেনি। তাছাড়া আসামীদের মোবাইলের সিডিআর চেক করে দেখা যায় ঐদিন ঘটনার সময় আশপাশে কোথাও আসামীদের অবস্থান ছিলনা। তিনি আরোও বলেন, বাদী মামলা করেই ক্ষ্যান্ত। তদন্তকাজে কোন রকম সহয়তা করেনি। এমনকি আহত ভিটটিমের স্বাক্ষ্য ও হাসপাতালের ছাড়পত্র দেয়নি। বার-বার তাগাদার পর শেষ মুর্হুতে মেডিকেল সার্টিফিকেট দেয়। এভাবেই শুধু হয়রানী করেছেন।
জিআর-৪৭/২৫ মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবী এফএমএ রাজ্জাক জানান, দুর্ঘটনার আহত ব্যক্তি'কে পূঁজি করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মামলার ঘটনাটি খুবই আলোচিত। মিথ্যা মামলায় বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতে প্রেরিত তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন'কে তিনি সাধুবাদ জানান। মিথ্যা মামলা করে কারোর ক্ষতি ও হয়রানী হবার সুযোগ নেই এমন মন্তব্য করে ওসি মোঃ সবজেল হোসেন জানান, জিআর-৪৭/২৫ মামলায় বাদীর বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।