খুলনা প্রতিনিধি :
রাতারাতি রাজনৈতিক পরিচয় পালাবদল হয়েছে বালু সিন্ডিকেট চক্রের। আগে ছিল শেখ পরিবার এখন হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি বলে অভিযোগ। এসব রাজনৈতিক নাম ভাঙিয়ে বালু সিন্ডিকেট চক্র তাদের বালু ব্যবসা রমরমা ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও খুলনা জেলার বিভিন্ন নদ-নদী,খাল-জলাশয় থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদী ভাঙন তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে। নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি, লীজঘের। হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন সড়ক। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে ।
রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার গ্রাম গুলো। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরেও থেমে নেই বালু সিন্ডিকেট চক্রের বালু উত্তোলন। নতুন করে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। আইন মানছেন না এই বালু সিন্ডিকেট চক্র। দিনরাত নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় চলছে আত্মঘাতী সহ বলগেট ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন।
প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তারা বলছেন, ভিন্ন কথা। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারীদের দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। শুধু তাই নয় বালু আইনে আরো গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বালু উত্তোলনকারী চক্র কোন অদৃশ্য শক্তির জোরে দিনের পর দিন, প্রকাশ্য দিবালোকে নদী ভাঙ্গন এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করে চলেছে। এ বিষয়ে মিডিয়ার সাথে কথা বলতে রাজি হয় না উর্দ্ধতন প্রশাসন।
সম্প্রতি বটিয়াঘাটা- পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন নদনদী থেকে বালু উত্তোলনের সংবাদ প্রকাশ হয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের পরেই আরো নড়ে চড়ে বসে এই সিন্ডিকেট চক্র। বালু উত্তোলনের কর্মকাণ্ড ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করেছে তারা। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন,আমরা সরকারি অনুমোদন নিয়েই বালু উত্তোলন করছি। কিন্তু তারা কোন কাগজপত্র দেখাতে রাজি নয়।
উপজেলার রায়পুর এলাকার আলতাফ হোসেন বলেন, এই বালু উত্তোলন কারী ড্রেজার গুলোর কর্মচারীদের বালু ওঠাতে নিষেধ করলে তারা বিভিন্ন নেতা, সরকারী আমলাদের কথা বলে অবাধে এই চক্র আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু উত্তোলন করে চলেছে। বারোআড়িয়া বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ মল্লিক ও অধির মন্ডল বলেন, বালু উত্তোলনের কারনে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বালু কাটা ও উত্তোলন বন্ধ না হলে অচিরেই বারোআড়িয়া বাজার সহ বটিয়াঘাটা ও পাইকগাছা সড়কটি নদী গর্ভে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা নির্বাহী অফিসারের
সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, এটা দণ্ডনীয় অপরাধ। নদী ভাঙ্গন এলাকার আশে পাশে কোথাও বালু উত্তোলন করা যাবে না। আইনের দৃষ্টিতে কর্মকর্তারা উচিত কথা বলেন। উপজেলার বারোআড়িয়া, বিগরদানা, মধুখালী, জিরবুনিয়া,মাগরো-দেলুটি,ফুলবাড়ি,রায়পুর,চাদগড়,বিরালা,শরাফপুর,গাওঘরা,মাইলমারা,বটিয়াঘাটা সদর, শৈলমারী,সহ আরো অনেক গ্রাম দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙ্গনের শিকার। শতশত পরিবার হারিছে তাদের জমি যায়গা ও বাড়িঘর। ডুমুরিয়া উপজেলার জালিয়াখালী ও চাঁদগড় নামক দুটি গ্রাম ভদ্রানদী ভাঙ্গনে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন সেখানে নদী আর নদী। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সেখান থেকেও চলছে বালু উত্তোলন। নদী ভাঙ্গন রোধে ভদ্রা নদীর পাশে দিয়ে অবস্থিত বারোআড়িয়া,বিগরদানা, মধুখালী,জিরবুনিয়া,গেওয়াবুনিয়া এলাকায় চলছে কোটি টাকার জিও ব্যাগের কাজ। একদিকে নদী রক্ষার্থে চলছে সরকারি কোটি টাকার কাজ,আর অন্যদিকে চলছে বালু সিন্ডিকেট চক্রের বালু উত্তোলন। বটিয়াঘাটা, পাইকগাছার রায়পুর সড়কটি এখন রয়েছে নদী ভাঙ্গনের কবলে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা বারোআড়িয়া বাজারের সামানে দিয়ে চলছে প্রকাশ্য বালু উত্তোলন। সুরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন লিটু এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ঠিক না। আর এই বালু উত্তোলনের কারণেই এলাকায় নদী ভাঙ্গন লেগেই রয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যাতে ভদ্রানদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়।
বটিয়াঘাটা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার নজরে থাকলেও থেমে নেই বালু উত্তোলন। বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান বলেন, তদন্ত করব বালু উত্তোলন কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।