সর্বশেষ:

রাঙা সূর্যমুখী

চারিদিকে হলুদ গালিচা; সৌন্দের্যের শোভা বর্ধন করছে ফাগুন রাঙা সূর্যমুখী

রাঙা সূর্যমুখী
Facebook
Twitter
LinkedIn

এস,এম,আলাউদ্দিন সোহাগ,পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি

সময় তখন ঠিক দুপুর ১২টা, মাথার উপর সূর্যটা জানান দিচ্ছে আজ ফাগুনের শেষ দিন। প্রকৃতিতে আগমন ঘটছে চৈত্রের। ফাগুনের বাতাসে দুলছে সূর্যমুখী। সূর্যের দিকে তাকিয়ে হাসছে সূর্যমুখী। চারিদিকে হলুদ গালিচায় সৌন্দের্যের শোভা বর্ধন করছে ফাগুন রাঙা সূর্যমুখী। ফাল্গুনকে বিদায় ও চৈত্রকে স্বাগত জানাতে সূর্যটা যখন চৈত্রের রূপে অবতীর্ণ এমন প্রখর রোদের মাঝে সূর্যমুখীর পরিচর্যায় ব্যস্ত তখন খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার সফল কৃষি উদ্যোক্তা জিল্লুর রহমান টুটুল।

জিল্লুর রহমান উপজেলার বেতবুনিয়া গ্রামের এসএম শওকত আলীর ছেলে। পরিবার পরিজন নিয়ে খুলনায় স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও উদ্যোক্তা জিল্লুর রহমান কৃষি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে জন্মস্থান পাইকগাছায়। তিনি ২০১৭ সালে উপজেলা সদরের পাশেই বয়রা এলাকায় ৫০ বিঘা জমিতে মৎস্য খামার করেন। খামারে তিনি ১২টি পুকুর খনন করেন। প্রথম দিকে ৩টি পুকুরের পাড়ে তিনি কুল চাষ করেছেন। কুল থেকে তিনি প্রতিবছর ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা বাড়তি আয় করে থাকেন।

পুকুর গুলোতে লবণ পানির চিংড়ি চাষ করায় টানা কয়েক বছর লোকসান গুনছেন। ফলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন মিষ্টি পানির মাছ চাষ করার পাশাপাশি পুকুরের পাড়ে কৃষি ফসল উৎপাদন করে চিংড়ির ক্ষতি পুষিয়ে নিবেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী চলতি মৌসুমে তিনি ৯টি পুকুরের পাড়ে ৬ বিঘা জমিতে হাইসান ৩৬ জাতের উন্নতমানের সূর্যমুখীর চাষ করেছে। ইতোমধ্যে ফুলে ফুলে ভরে গেছে প্রতিটি সূর্যমুখী গাছ। প্রথম বছরেই ভালো ফলনের আশা করছেন উদীয়মান কৃষি উদ্যোক্তা জিল্লুর রহমান। জিল্লুর রহমানের ন্যায় কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় অনেকে সূর্যমুখী চাষে এগিয়ে আসায় উপক‚লীয় এ উপজেলাতে চলতি বছর সূর্যমুখীর আবাদ বেড়েছে।

সাধারণ কৃষকের পাশাপাশি সরকারি পতিত জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করতে এগিয়ে এসেছেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে ইউএনও বাংলোর পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন। ইউএনও’র পাশাপাশি বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট লোনাপানি কেন্দ্রে বেশ অনেকটা জায়গায় সূর্যমুখী চাষ করেছেন কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ লতিফুল ইসলাম। এ সব প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিজ জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অসীম কুমার দাস বলেন, সূর্যমুখী চাষ অনেক সহজ এবং লাভ জনক। এটি একদিকে যেমন সৌন্দর্যের শোভা বর্ধন করে পাশাপাশি সূর্যমুখীর পাশে গিয়ে মানুষ প্রশান্তি লাভ করে। সরিষার চেয়ে সূর্যমুখীতে তেলের পরিমাণ অনেক বেশি, এটি কোলেস্টেরল মুক্ত। লবণ সহিষ্ণু, সেচ এবং পরিচর্যা কমলাগে।

এজন্য উৎপাদন খরচ কম হয়। সূর্যমুখী স্থানীয় সরিষার মিলে মাড়াই করা যায়। সরিষা তেলের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। প্রতি ১০ লিটারে ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম শুকনো লবণ দিয়ে সূর্যমুখী তেল সংরক্ষণ করা যায়। এসব কারণে অত্র উপজেলায় সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষিবিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন ২০২১-২২ বছরে অত্র উপজেলায় সূর্যমুখীর আবাদ ছিল মাত্র ১০ হেক্টর। ২০২২-২৩ বছরে ১৯৩ হেক্টর। যা বর্তমান বছরে প্রায় ৩শ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে।

আমদানী নির্ভরতা কমিয়ে আনতে এবং স্বাস্থ্য সম্মত তেল ব্যবহারের জন্য উপক‚লীয় অঞ্চলে সূর্যমুখীর আবাদ বাড়ানোর উপর তাগিদ দিয়ে সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান বলেন আমি নিজেই সূর্যমুখী চাষ করেছি।

আমাদের কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। বহুমুখী ফসল উৎপাদনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। লবণ পানি পরিহার করে পরিবেশ বান্ধব কৃষি ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সকলের প্রতি আহবান জানান স্থানীয় এ সংসদ সদস্য।

Facebook
Twitter
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

turan hossain rana