হিরামন সাগর :
এবার বটিয়াঘাটায় অসময়ের তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন কৃষকদের। উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মধ্যে সুরখালী,গঙ্গারামপুর,বটিয়াঘাটা সদর,জলমা ও ভান্ডারকোট ইউনিয়নের লবণাক্ত এলাকায় অসময়ের তরমুজ চাষে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছেন কৃষকরা। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ-সহকারীরা কৃষকদের ক্ষেতে নিয়মিত খবরাখবর নিচ্ছে।
উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সরদার আব্দুল মান্নান বলেন,লবণাক্ত এলাকায় ৩৭৫ বিঘা জমির লীজ ঘেরের ভেড়িতে চলতি মৌসুমে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বটিয়াঘাটা কৃষি অফিসের ২১জন উপ-সহকারী কৃষি অফিসাররা কৃষকদের সার্বিক খজখবর নেন। সব সময় তাদের পাশে থেকে বিভিন্ন পরামর্শ ও বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
এবারও আশার আলো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা। গতবারের তুলনায় এবার ফলের দামও অনেক বেশী। কেজি প্রতি তরমুজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা করে। পাকিজা, হানিকুইন, ব্লাকবেবি, ছক্কা, সাগর কিং ও হিরা ড্রাগন কিং জাতের তরমুজ চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে এ-অঞ্চলের তরমুজ চাষিরা। ঘেরের ভেড়ির উপর মাচায় তরমুজ চাষে ব্যাপক ফলন দেখা যাচ্ছে। এছাড়া তরমুজের আবাদে সহজে সেচ দেয়ার ব্যবস্থাসহ আবাদ জমিতে তেমন সার ও সেচের প্রয়োজন হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন তরমুজ চাষিরা। যার কারনে লাভবান হচ্ছে বেশি কৃষকরা।
যে কারণে অসময়ে তরমুজ চাষে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন গুনছেন চাষিরা। চলতি বছরে উপজেলায় সব থেকে বেশি চাষ এবং বাম্পার ফলন হয়েছে আস্থা জাতীয় তরমুজ চাষে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর অসময়ে তরমুজ চাষে বেশি ফলন হয়েছে সুরখালী ইউনিয়নে। চাষি নারায়ন মন্ডল, আরিফুর রহমান, শেখর মন্ডল,পবিত্র বিশ্বাস ও ইনামুল হক সহ অনেকে
বলেন, সুরখালী ইউনিয়নে দায়িত্ব প্রাপ্ত জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সরদার আব্দুল মান্নান স্যারের পরামর্শে আমরা লবণাক্ত জমির ঘেরের ভেড়িতে মাচা করে তরমুজ চাষ শুরু করি। অল্প খরচে আমরা ব্যাপক লাভবান হচ্ছি।
২০২১-২২ অর্থ বছরে ক্লাইমেট স্মাট প্রকল্পের মাধ্যমে ১০টি প্রদর্শনীতে ৫/৬ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিলো বর্তমানে ১০টা প্রদর্শনীতে ৩০/৩৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হচ্ছে। সূত্রে প্রকাশ,প্রতি বিঘা জমিতে তরমুজ চাষে খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। প্রতিটা তরমুজ ৪ থেকে ৫ কেজি ওজন হয়। যার বর্তমান বাজার মুল্য কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি হয়ে থাকে। তরমুজ ভালো হলে লাখ টাকার উপরেও বিক্রি হয়। তাছাড়া তরমুজ চাষের পাশাপাশি সীম,বরবটি, উস্তে ও টমেটো চাষ হচ্ছে।
বটিয়াঘাটা সদরের কৃষক সমিরন জোয়ার্দার,সুজন মন্ডল ও অনিক গাইন বলেন,আমাদের এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার দিপন কুমার হালদার এর পরামর্শে আমরা ঘেরের ভেড়িতে তরমুজ চাষ শুরু করি। অল্প খরচে অধিক লাভবান হয়েছি। তাছাড়া,তরমুজের পাশাপাশি সীম,বরবটি,উচ্ছে ও টমেটো,লাউ,ঝিঙ্গা চাষ করছি । চলতি মৌসুমে সেচ দেওয়া লাগেনা,ফলে উৎপাদন খরচও কম হয়।
বটিয়াঘাটা কৃষি অফিসার মোঃ আবু বকর সিদ্দিক বলেন,অফসিজন তরমুজ চাষ করে কৃষকরা বিঘা প্রতি অধিক লাভবান হচ্ছে। বতর্মান বটিয়াঘাটায় যে পরিমান তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে তাতে আগামীতে তার দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে কৃষকরা অধিক লাভবান হওয়ায় তাদের জীবন যাত্রার মানের অনেক পরিবর্তন ঘটবে। তাছাড়া বটিয়াঘাটা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সার্বিক ভাবে সহযোগীতা করা হয়ে থাকে।