সর্বশেষ:

বেকু মেশিনের তাণ্ডব, প্রশাসনের নীরবতা পাইকগাছার বোয়লিয়া ব্রিজ এলাকায় কৃষিজমি ও নদী গিলে খাচ্ছে (এস বি) অবৈধ ইটভাটা

Facebook
Twitter
LinkedIn

এস,এম,আলাউদ্দিন সোহাগ | পাইকগাছা (খুলনা)

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নের বোয়লিয়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় এখন আর শুধু কৃষিজমিই নয়—নদীও রেহাই পাচ্ছে না। নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায় নদীতে চর জেগে উঠতেই শুরু হয়েছে মাটি কাটার প্রকাশ্য উৎসব। সেই চর ও আশপাশের ফসলি জমি থেকে বেকু মেশিন দিয়ে নির্বিচারে মাটি কেটে চালানো হচ্ছে অবৈধ ইটভাটা। পুরো এলাকাজুড়ে চলছে পরিবেশ, নদী ও কৃষিজমি লুটের এক ভয়াবহ মহোৎসব।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট হয়ে চর পড়ার পরই প্রভাবশালী একটি চক্র সেখানে বেকু মেশিন নামিয়ে দেয়। কোনো ইজারা নেই, নেই কোনো সরকারি অনুমতি বা পরিবেশগত ছাড়পত্র। নদীর চর কেটে তুলে নেওয়া মাটিতেই গড়ে তোলা হয়েছে এস বি ভাটা নামের ইটভাটা—যেন আইন, প্রশাসন কিংবা রাষ্ট্র বলে কিছুই নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর বুক চিরে তৈরি করা হয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত। এতে নদীর নাব্যতা আরও মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে, বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন—নদী রক্ষার দায়িত্ব যেখানে রাষ্ট্রের, সেখানে নদী ধ্বংসের এই প্রকাশ্য তাণ্ডব কার অনুমতিতে চলছে?

নদীর পাশাপাশি উর্বর কৃষিজমিও রেহাই পায়নি। ধানক্ষেত ও সবজি আবাদি জমি কেটে মাটি নিয়ে যাওয়ায় বহু কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। বৃষ্টির সময় এসব গর্তে পানি জমে চাষাবাদ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ক্ষুব্ধ এক কৃষকের ভাষায়,

“নদী কেটে চর বানালো, চর কেটে ভাটা চালালো—এখন আমাদের বাঁচার শেষ আশাটুকুও শেষ।”

উদ্বেগের বিষয় হলো, এস বি ভাটাটি উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নে অবস্থিত হলেও বোয়লিয়া ব্রিজের একেবারে সন্নিকটে হওয়ায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও ধ্বংসের আশঙ্কায় দিন পার করছেন এলাকাবাসী। ভারী যান চলাচল, মাটি বহন ও বেকু মেশিনের কম্পনে ব্রিজটির স্থায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

আরও ভয়াবহ চিত্র হলো—ভাটার আশপাশে রয়েছে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অবৈধ ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও কালো ছাইয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা। শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকলেও বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই।

সবচেয়ে ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক বিষয় হলো প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা। দিনের আলোতে বেকু মেশিন চললেও নেই কোনো অভিযান, নেই কোনো উচ্ছেদ, নেই কোনো জবাবদিহি। প্রশ্ন উঠছে—তবে কি অবৈধ ইটভাটা ও মাটি কাটার এই সিন্ডিকেট প্রশাসনের ছত্রছায়াতেই পরিচালিত হচ্ছে?

পরিবেশ ও নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর চর থেকে মাটি কাটা এবং কৃষিজমি ধ্বংস করা সরাসরি পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ইটভাটা (নিয়ন্ত্রণ) আইন ও নদী রক্ষা নীতিমালার চরম লঙ্ঘন। এর পরিণতি শুধু বর্তমান নয়—আগামী প্রজন্মকেও ভয়াবহ মূল্য দিতে হবে।

এলাকাবাসীর জোর দাবি—অবিলম্বে নদীর চর ও কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ করতে হবে, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় বোয়লিয়া ব্রিজ এলাকা শুধু নদী আর জমিই হারাবে না—হারাবে আইনের শাসনের শেষ চিহ্নটুকুও।

এ বিষয়ে এস বি ভাটার প্রোপাইটার ডালিমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Facebook
Twitter
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

turan hossain rana