সর্বশেষ:

ধোঁয়ার বিষে নীরবে মরছে পাইকগাছা অবৈধ ইটভাটার আগ্রাসনে হুমকিতে মানুষ ও প্রকৃতি

Facebook
Twitter
LinkedIn

এস,এম,আলাউদ্দিন সোহাগ,পাইকগাছা ( খুলনা )

খুলনার পাইকগাছার আকাশ এখন শুধু কুয়াশা নয়, বিষাক্ত ধোঁয়ায় ভরা। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরও উপজেলার ১৫টি অবৈধ ইটভাটা নির্বিঘ্নে চলতে থাকায় স্থানীয় মানুষ ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব বাড়ছে। ভোরের আলোকে ঢেকে দেয় কালো ধোঁয়া, দূর থেকে কুয়াশার মতো মনে হলেও কাছে গেলে বোঝা যায়—এটি মৃত্যু ঘাতী ধোঁয়ার আগ্রাসন।চিমনির নিচে দাঁড়িয়ে আইন যেন অসহায়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ধোঁয়ার আড়ালে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যারা পরিবেশ আইন, কৃষিজমি সুরক্ষা আইন ও জনস্বাস্থ্যের সমস্ত বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ইট উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। বছর ঘুরলেও পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়নি, বরং ভাটা মালিকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁদখালী, গদাইপুর, রাড়ুলী, হরিঢালী ও কপিলমুনি ইউনিয়নের মোট ১৫টি ইটভাটা সরাসরি কৃষিজমিতে স্থাপিত। এর মধ্যে মাত্র একটি ভাটার বৈধ কাগজপত্র রয়েছে, বাকি ১৪টি সম্পূর্ণ অবৈধ। রাড়ুলীর দুটি ভাটার মালিক দাবি করছেন, তারা সাতক্ষীরা জেলার আওতাভুক্ত, তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অথচ এসব ভাটাই নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে, নদী ও পরিবেশ ধ্বংসের মহোৎসবে মেতে উঠেছে।জনজীবনও বিপর্যস্ত। শুকনো মৌসুমে ভাটা থেকে বের হওয়া ধুলাবালিতে সড়ক ঢেকে যায়, বর্ষায় তা কাদায় পরিণত হয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হয়। শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা, মাথাব্যথা এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ এখন নিত্যসঙ্গী।

ভয়াবহ ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ অধিকাংশ ভাটায় নেই ফায়ার এক্সটিংগুইশার, প্রশিক্ষিত শ্রমিক বা জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিম্নমানের কাঠ ও ঝুঁকিপূর্ণ জ্বালানি ব্যবহার করা হচ্ছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড বা প্রাণহানির আশঙ্কা প্রবল।গত বছর সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন এক প্রশাসনিক সভায় এক সপ্তাহের মধ্যে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ না হলে আইন অনুযায়ী ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সভায় প্রশাসনের কর্মকর্তা, ভাটা মালিক ও রাজনৈতিক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। তবে এক বছর পেরিয়েও মাঠপর্যায়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, তিনি সদ্য দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, “অবৈধভাবে কোনো ইটভাটা চলতে দেওয়া হবে না। বৈধতা না থাকলে তা ধ্বংস করা হবে।”পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আসিফুর রহমানও জানিয়েছেন, “পাইকগাছা একটি ক্রিটিক্যাল এলাকা। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অভিযান চালানো হবে। পরিকল্পনা থাকলেও গত বছর বাস্তবায়ন হয়নি। এবার অবশ্যই মাঠ পর্যায়ে অভিযান হবে।”

তবে মানুষের দাবি একটাই—এটি যেন কাগজে সীমাবদ্ধ না থাকে, মাঠে দৃশ্যমান হোক। নইলে এই ধোঁয়া শুধু ইট নয়, মানুষের জীবন, কৃষি ও পরিবেশকেও পুড়িয়ে দেবে। পাইকগাছার আকাশের ধোঁয়া এখন কেবল স্থানীয় সমস্যা নয়; এটি প্রমাণ করে, কতটা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে প্রশাসনের অনীহা ও বেপরোয়া ব্যবসায়ীদের লোভ।

 

Facebook
Twitter
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

turan hossain rana