
বিশেষ প্রতিনিধি :
খুলনায় এক বাড়িওয়ালা কর্তৃক ভাড়াটিয়ার ঘরের মালামাল,টাকা পয়সা ও স্বর্ণালংকার চুরির অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটেছে,খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ১১২, পশ্চিম বানিয়া খামার, আন্দিরপুকুর এলাকায়। তার বাড়িতে ভাড়া থাকতো এক প্রবাসীর স্ত্রী ও মেয়ে। গত বছর ঐ বাড়ির নিচতলায় ভোররাতে গ্যারেজে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসে এসে আগুন নেভানোর জন্য চেষ্টা করে। আগুন নেভানোর সময় উক্ত এ্যাপার্টমেন্টের সবচেয়ে নিকটস্থ দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া প্রবাসীর স্ত্রীর দুইরুমের ভিতর পানি ও ধোঁয়া যায়। অগ্নিকান্ডের ধোঁয়ায ভাড়াটিয়া সানজিদা সোমা শিউলি ও মেয়ে পূর্ণতা অসুস্থ হয়ে পড়লে আত্মীয়দের সহযোগিতায় জরুরীভাবে খুলনা মেডিকেলে চিকিৎসা নেন। এঘটনা শুনে ভিকটিম সানজিদা সোমা শিউলীর মা স্ট্রোক করেন। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে হাসপাতাল থেকে ফিরে তৎক্ষনাৎ গ্রামের বাড়িতে চলে যান তারা। ঘটনার দুদিন পর বাড়ীওয়ালার ছেলে অসীম উক্ত এ্যাপার্টমেন্টের পানির লাইনের কাজ করার কথা বলে রাত ১০ টার দিকে ভিকটিমের ফ্লাটের চাবি জোরপূর্বক নিয়ে নেয়। এর পরদিন ফ্লাটে ফিরে প্রবাসীর স্ত্রী দেখে তার ওয়্যারড্রয়ারে রাখা সাড়ে চার ভরি স্বর্ণের অলংকার ও সৌদি প্রবাসী স্বামীর রেখে যাওয়া ১০০০ সৌদি রিয়াল ড্রয়ারে নেই। তখন গহনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে, বাড়ীওয়ালার স্ত্রী জানান, “আমি ভালো মনে করে তার বাসা থেকে বেডশিট, কাপড়চোপড় ড্রয়ার থেকে বের করে আবার ধুয়ে রেখে দিয়েছি, গহনার বিষয় কিছু জানিনা”।
এ বিষয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েও কোন সুরাহা না পেয়ে ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্ত্রী সানজিদা সোমা শিউলী বাদী হয়ে কাজী সফিউল ইসলাম, তার স্ত্রী রেখা বেগম ও সন্তান অসীমকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা করার পর বাড়ির মালিক কাজী সফিউল ইসলাম সহ তার সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী শিউলিকে কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই ফ্লাট থেকে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য এবং মামলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ ও ভয়ভীতি প্রদান করতে থাকে। এ অবস্থায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় গত ইংরেজি ১১/০৮/ ২০২৫ তারিখে উক্ত ফ্লাটের মালামাল আনতে যেয়ে দেখা যায়, পুনরায় তার ঘরের ভিতরে থাকা মালামাল পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে হতবাক হয়ে স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র,টিভি, ফ্রিজসহ মূল্যবান সামগ্রীর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য গত ১২/০৮/২০২৫ তারিখ সোমবার সোনাডাঙ্গা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন সানজিদা সোমা শিউলী।
বাড়িওয়ালার নাম কাজী সফিউল ইসলাম। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলাধীন কুশলিয়া গ্রামে । ১৫ বছর আগে কাজী সফিউল ইসলাম খুলনায় আসেন। শুরুতেই কাজী সফিউল ইসলামের তেমন কিছুই ছিল না। কোন এক আশ্চর্য আলাদিনের চেরাগের মাধ্যমে জিরো থেকে রাতারাতি বনে যান হিরো। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই খুলনা শহরে গড়ে তোলেন আলিশান বাড়ি। জানা যায়,,কেডিএ থেকে ৬ তলা ফাউন্ডেশন পাশ করে সেখানেই সে সাড়ে ৭ তলা আলীশান ভবন গড়ে তুলেছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী তার এই বাড়ি করার পিছনে শুভঙ্করের কোন ফাকি আছে কিনা, সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন সহ সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন । অভিযোগ রয়েছে, তার এই হিরো হওয়ার পিছনে রয়েছে ভয়ংকর বেশ কিছু অপরাধ জগতের কর্মকাণ্ড ও আর্থিক দূণীর্তি । মাদক সিন্ডিকেট চক্রের সাথে রয়েছে তার বিশাল সখ্যতা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাতক্ষীরা,খুলনা সহ কেন্দ্রের একাধিক রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ছিল তার গভীর সখ্যতা বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। খুলনার বেশ কিছু আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কাউন্সিলের (কমিশনার) সাথে ছিলো তার গভীর সখ্যতা। সূত্র আরো জানায়,বিগত সময়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়ায় এই অপরাধ জগতের কর্মকাণ্ড চালাতো সে। বর্তমান ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেতাদের সাথেও রয়েছে সুচতুর শফিউলের গভীর সখ্যতা। এসব নেতারা বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে বর্তমানেও তাকে শেলটার দিচ্ছে বলে সূত্র প্রকাশ। অভিযোগ রয়েছে,বিভিন্ন বর্ডার দিয়ে আমদানী রপ্তানী ব্যবসা অবৈধভাবে পরিচালনা করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া বাড়িওয়ালা কাজী সফিউল ইসলাম তার রাজনৈতিক পরিচয় পাল্টে ফেলেছেন।
সাতক্ষীরার জনৈক ব্যক্তি বিডি নিউজ কে অভিযোগ করেন তার পিতার সাথে যৌথ ব্যবসা করতেন কাজী শফিউল, কিন্তু একপর্যায়ে ব্যবসার টাকা মেরে দিয়ে খুলনায় চলে আসেন শফিউল ইসলাম। পরে এই শোকে তার আব্বা মারা যান বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়াও এলাকায় বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতির সাথে জড়িত কাজী শফিউল ইসলাম, শফিউলের স্ত্রী রেখা বেগম ও তাদের ছেলে অসীম।
কথিত আছে, উচ্ছৃঙ্খলতার জন্যই শফিউলের মেয়ে পুলিশের এসআই স্বামীর নিকট থেকে ডিভোর্স নিয়ে বাপের বাড়ী চলে আসে।
এদিকে ভুক্তভোগী সানজিদা সোমা শিউলী সাংবাদিকদের বলেন,
“কাজী সফিউল ইসলামের বাড়ীতে ২ বছর ধরে সাত তলা ভবনের দোতলার একটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে থাকতাম। গত ২৭/০৭/২০২৪ তারিখ ভোর রাতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ধোয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ উক্ত ফ্লাট হতে বাড়িওয়ালার হেফাজতে আমার ফ্লাটের চাবি থাকা অবস্থায় সাড়ে চার ভরি স্বর্ণের গহনা (যাহার বাজার মূল্য- ৭,৮০,০০০/-টাকা) ও ১০০০ সৌদি রিয়াল খোয়া যায়। এ বিষয়ে তৎকালীন সময়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয় এবং উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে খুলনা মেট্রোপলিটন আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। উক্ত মামলা চলমান অবস্থায় গত ০২/০৬/২০২৫ তারিখে সিআইডি তদন্ত করে আমার উক্ত ফ্লাটের মালামাল পরিদর্শন করেন। কিন্তু আমরা গত ১১/০৮/২০২৫ তারিখ বিকালে উক্ত ফ্লাটে যেয়ে দেখতে পাই সুপরিকল্পিত ভাবে ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল সরিয়ে ফেলা হয়েছে, উক্ত মালামালের মধ্যে ছিল হাতিল ব্রান্ডের বক্স খাট ১টি, স্যামসাং ব্রান্ডের ৩২ইঞ্চি টিভি ১টি, তামা সহ ফ্রিজের কম্প্রেসার ও স্টাবিলাইজার ১টি, মাইক্রো ওভেন ১টি, ইলেক্ট্রিক চুলা ১টি, গ্যাসের চুলা ১টি, গ্যাসের সিলিন্ডার ১টি, নিজের ব্যবহৃত (নতুন+পুরাতন) ৫০টির অধিক থ্রী-পিছ, ৩০টির অধিক শাড়ী, সৌদী থেকে আনা ৩টি লাগেজ ভর্তি কসমেটিক্স ও বিভিন্ন সামগ্রী, বিলিন্ডার ১টি ও হ্যান্ড বিলিন্ডার ১টি, বেডসিট ৮টি, সিলিং ফ্যান ২টি, পাকিস্তানি স্ট্যান্ড ফ্যান ১টি, সেলাই মেশিন ১টি, বাচ্চাদের বাই সাইকেল ১টি, বিদেশী কার্পেট ২টি, বিদেশী কম্বল ৫টি, স্মার্ট ফোন ২টি, নকশী কাথা ২টি সহ সংসারে ব্যবহৃত বেশ কিছু মালামাল এবং গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। বাড়িওয়ালার এধরনে কর্মকান্ডে আমি ও আমার স্বামী মানসিক ভাবে বিপর্যস্থ ও আর্থিক ভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ ।” পরবর্তীতে আইনি সহায়তায় উক্ত মালামাল ফেরতের জন্য আমি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি।