
তথ্য ডেস্ক
আজকের পৃথিবীতে সামরিক শক্তির সংজ্ঞা শুধু সেনা সংখ্যা বা যুদ্ধবিমানে সীমাবদ্ধ নয়—আধুনিক যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বেলেস্টিক মিসাইল প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি শুধুমাত্র দূর থেকে আঘাত হানার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে না, বরং একটি দেশের কৌশলগত ও রাজনৈতিক অবস্থানকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। আর এই দিক থেকে ইরান এখন বিশ্বের অন্যতম আলোচিত এবং চর্চিত একটি নাম।
গত এক দশকে ইরান তার মিসাইল কর্মসূচিতে বিপুল বিনিয়োগ করে বিভিন্ন শ্রেণির ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে—যার মধ্যে রয়েছে স্বল্প, মধ্য ও দূরপাল্লার বেলেস্টিক মিসাইল, অত্যাধুনিক ক্রুজ মিসাইল এবং স্বয়ংক্রিয় ড্রোন প্রযুক্তি। তারা নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার অজুহাতে এ সব অস্ত্র তৈরি করলেও, এর ব্যবহার ও বিস্তার মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষ করে ইরানের এই মিসাইল ও ড্রোনগুলো ইসরায়েল, সৌদি আরব ও মার্কিন ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে উঠেছে। এমনকি বিভিন্ন প্রো-ইরানি গোষ্ঠী, যেমন হিজবুল্লাহ, হুথি বিদ্রোহী এবং গাজাভিত্তিক হামাস, এই মিসাইল সহায়তা পাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত।
এই প্রতিবেদনে আমরা বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করবো—
✅ বেলেস্টিক মিসাইল কীভাবে কাজ করে,
✅ ইরান কীভাবে এবং কোথায় এটি ব্যবহার করছে,
✅ তাদের মজুদে কত মিসাইল রয়েছে,
✅ এবং আরও কী ধরনের আধুনিক অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে তাদের হাতে।
চলুন, ডুবে যাই এই আধুনিক যুদ্ধপ্রযুক্তির জটিল কিন্তু রোমাঞ্চকর জগতে।
বেলেস্টিক মিসাইল কীভাবে কাজ করে?
বেলেস্টিক মিসাইল হলো এক ধরনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ব্যবহার করে। এই মিসাইলগুলো সাধারণত তিনটি ধাপে কাজ করে:
-
লঞ্চ ফেইজ (Launch Phase): রকেট ইঞ্জিন দ্বারা উৎক্ষেপণ।
-
বুস্ট ফেইজ (Boost Phase): উচ্চ বেগে আকাশের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
-
টার্মিনাল ফেইজ (Terminal Phase): লক্ষ্যবস্তুতে পতন ও বিস্ফোরণ।
এর গতি শব্দের চেয়ে বহু গুণ বেশি হতে পারে এবং এটি পারমাণবিক বা প্রচলিত ওয়ারহেড বহন করতে পারে।
ইরান কিভাবে বেলেস্টিক মিসাইল ব্যবহার করে?
ইরান তাদের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC)‘র মাধ্যমে বেলেস্টিক মিসাইল ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তারা মূলত এই অস্ত্রগুলো ব্যবহার করে:
-
প্রতিরক্ষা কৌশলে
-
মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাব বিস্তারে
-
বিপক্ষ দেশের ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণে
🧨 সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবহৃত বেলেস্টিক মিসাইল:
-
Fateh-110
-
Shahab-3
-
Emad
-
Khorramshahr
উল্লেখ্য, ইরান হামাস, হুথি, ও হিজবুল্লাহর মতো গোষ্ঠীগুলোকে সামরিক সহায়তা হিসেবে কিছু মিসাইল সরবরাহ করেছে বলে পশ্চিমা গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।
ইরানের মজুদে কত বেলেস্টিক মিসাইল আছে?
সঠিক সংখ্যা গোপন রাখা হলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে:
-
ইরানের মজুদে আনুমানিক ৩,০০০+ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
-
এদের মধ্যে দূরপাল্লার ও মধ্যপাল্লার মিসাইল রয়েছে প্রায় ১,০০০টি।
তাদের মিসাইল প্রযুক্তি বর্তমানে এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে তারা ২০০০+ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
ইরানের অন্যান্য মিসাইল ও অস্ত্রের ধরন
অস্ত্রের ধরন | নাম | পাল্লা | বৈশিষ্ট্য |
---|---|---|---|
ক্রুজ মিসাইল | Soumar, Hoveyzeh | ১,৫০০+ কিমি | ভূমি বা জাহাজ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য |
ড্রোন | Shahed-136, Mohajer-6 | ১,০০০+ কিমি | নজরদারি ও আত্মঘাতী হামলার জন্য |
রকেট আর্টিলারি | Zelzal, Fajr | ২০০-৩০০ কিমি | ভূমি থেকে ভূমিতে স্বল্প পাল্লার আক্রমণ |
অ্যান্টি-শিপ মিসাইল | Noor, Ghader | ৩০০+ কিমি | যুদ্ধজাহাজ লক্ষ্য করে ব্যবহৃত |
উপসংহার
ইরানের বেলেস্টিক মিসাইল কর্মসূচি শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক প্রভাব বিস্তারেরও অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই কর্মসূচিকে একটি নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখছে। তবে ইরান বরাবরই দাবি করে এসেছে, এটি তাদের সার্বভৌম প্রতিরক্ষার অধিকার।