সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ গাইড (2025) [যাতায়াত সব তথ্য]
সেন্টমার্টিন দ্বীপ: বাংলাদেশের দক্ষিণের প্রবাল দ্বীপ
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত একটি ছোট প্রবাল দ্বীপ। এর আয়তন প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার এবং এটি টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমারের উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। প্রচুর নারকেল পাওয়ার কারণে এটি স্থানীয়ভাবে "নারিকেল জিঞ্জিরা" নামে পরিচিত। দ্বীপটি সমুদ্রপ্রেমীদের জন্য জনপ্রিয় একটি পর্যটনকেন্দ্র, যা বিশেষত হুমায়ূন আহমেদের "দারুচিনি দ্বীপ" চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আরও বেশি পরিচিতি লাভ করেছে।
ইতিহাস ও নামকরণ
সেন্ট মার্টিনের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। আরব বণিকরা একে প্রথমে "জিঞ্জিরা" নামে অভিহিত করে। ১৮৯০ সালে কিছু বাঙালি এবং রাখাইন জনগোষ্ঠী দ্বীপটিতে বসতি স্থাপন শুরু করে, যা ধীরে ধীরে একটি বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত হয়। ১৯০০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে এটি ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং সেন্ট মার্টিন নামে পরিচিতি পায়। চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মার্টিনের নামে এ নামকরণ করা হয় বলে ধারণা করা হয়।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
দ্বীপটির আয়তন ৮ থেকে ১৫ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে পরিবর্তিত হয়, যা জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভরশীল। এটি উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ৫.৬৩ কিলোমিটার লম্বা এবং প্রস্থ ২০০ থেকে ৭০০ মিটারের মধ্যে। এর তিনটি প্রধান অংশ হলো উত্তর পাড়া (নারিকেল জিঞ্জিরা), দক্ষিণ পাড়া এবং গলাচিপা। দক্ষিণে একটি ছোট দ্বীপ "ছেঁড়া দ্বীপ" নামে পরিচিত, যা জোয়ারের সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
জীববৈচিত্র্য
সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানে ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ এবং ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। দ্বীপটি সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম পাড়ার জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও স্পঞ্জ, লবস্টার এবং নানা ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীর আবাসস্থল এটি।
পরিবেশ ও সংরক্ষণ
২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি সেন্ট মার্টিন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১,৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটি পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল একটি এলাকা, যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অনন্য সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র্য এবং সমুদ্রতীরবর্তী পরিবেশ পর্যটক ও গবেষকদের জন্য আকর্ষণীয়। সংরক্ষণ উদ্যোগের মাধ্যমে এর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেন্টমার্টিনে যেতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে অনলাইনে
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের জন্য এখন থেকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটন মৌসুমে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম হয় বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে। কিন্তু পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ দ্বীপে ভ্রমণের ওপর নতুন নিয়মকানুন আরোপ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দ্বীপে প্রবেশের জন্য পর্যটকদের নির্দিষ্ট ফি দিয়ে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। দিনপ্রতি দ্বীপে কতসংখ্যক পর্যটক অবস্থান করতে পারবেন, তা দ্বীপের ধারণক্ষমতার ভিত্তিতে নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই প্রবাল দ্বীপটি স্থানীয়ভাবে ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ নামে পরিচিত। দ্বীপটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাতে বসেছে অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে, তাই পরিবেশ সুরক্ষায় এসব নিয়ম কার্যকর করা হচ্ছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়নের মূল দায়িত্বে থাকবে, যার সঙ্গে সহযোগিতা করবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এছাড়া পর্যটকদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন একত্রে কাজ করবে।
এই নতুন নিয়মগুলো সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ রক্ষা এবং সুষ্ঠু পর্যটন ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পর্যটকদের জন্য নিয়মকানুন মানা বাধ্যতামূলক হওয়ায় দ্বীপের পরিবেশ ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হবে, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষণে সহায়ক হবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান বিস্তারিত তথ্য
সেন্টমার্টিন দ্বীপ, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশির মাঝে অবস্থিত এই দ্বীপটি তার সুন্দর পরিবেশ, নির্জনতা এবং অনন্য জীববৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যা ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করে। আসুন এই দ্বীপের কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নিই।
১. চেয়ারম্যান ঘাট
সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রবেশের প্রধান ঘাট হলো চেয়ারম্যান ঘাট। এখানে নৌকা এবং ট্রলার ভ্রমণের জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে। ঘাট থেকে নীল সমুদ্র এবং দ্বীপের সৌন্দর্য দেখতে অসাধারণ অনুভূতি হয়। এটি স্থানীয় বাজারের কাছাকাছি হওয়ায় সহজেই পর্যটকরা এখান থেকে কেনাকাটা করতে পারেন।
২. দরিয়া নগর বা বিচ
সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ এর সমুদ্র সৈকত। নীল জলরাশি এবং সাদা বালির সৈকত পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এখানে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দেখার জন্য বিশেষ স্থান রয়েছে। তাছাড়া সৈকতের চারপাশে ছোট ছোট শামুক এবং প্রবালের টুকরো দেখার অভিজ্ঞতা সত্যিই অনন্য।
৩. নারিকেল জিঞ্জিরা
সেন্টমার্টিন দ্বীপের আরেকটি নাম হলো নারিকেল জিঞ্জিরা। এই অংশে নারিকেল গাছের সারি এবং নির্জন পরিবেশ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যারা শান্ত পরিবেশে কিছু সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য এটি আদর্শ স্থান।
৪. ছোট দ্বীপ বা ছেঁড়া দ্বীপ
সেন্টমার্টিন থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছেঁড়া দ্বীপ, যা সেন্টমার্টিনের একটি অংশ। এই ছোট দ্বীপটি প্রবালের জন্য বিখ্যাত। ট্রলার বা স্পিডবোটে সহজেই ছেঁড়া দ্বীপে পৌঁছানো যায়। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি স্নরকেলিং-এর মাধ্যমে সমুদ্রের নিচের জীববৈচিত্র্য উপভোগ করা যায়।
৫. প্রবাল দ্বীপের জীববৈচিত্র্য
সেন্টমার্টিন দ্বীপ তার প্রবালের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। সাগরের নিচে প্রবাল প্রাচীর এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছের উপস্থিতি এখানে পর্যটকদের মুগ্ধ করে। স্নরকেলিং এবং ডাইভিং করতে আগ্রহীদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
৬. লাইটহাউস এলাকা
সেন্টমার্টিন দ্বীপের লাইটহাউস এলাকা পর্যটকদের একটি পছন্দের গন্তব্য। এখান থেকে পুরো দ্বীপ এবং সাগরের চারপাশের অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়। এটি বিশেষত রাতে দারুণ সুন্দর, যখন লাইটহাউসের আলো সাগরের জলে প্রতিফলিত হয়।
৭. স্থানীয় বাজার এবং খাবার
সেন্টমার্টিনের স্থানীয় বাজার এবং এখানকার খাবারও দর্শনীয়তার একটি অংশ। বিশেষত তাজা সামুদ্রিক মাছ এবং কাঁকড়ার খাবারের স্বাদ পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। স্থানীয় হস্তশিল্পের দোকানগুলো থেকেও ভ্রমণের স্মারক সংগ্রহ করা যায়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের এই দর্শনীয় স্থানগুলো প্রকৃতি এবং শান্তি উপভোগ করতে চাওয়া মানুষের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে। বিশাল সমুদ্র, প্রবাল প্রাচীর, এবং নারিকেল গাছের ছায়ায় মোড়ানো এই দ্বীপে সময় কাটানো সত্যিই স্মরণীয়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ কোন জেলায় অবস্থিত?
সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এবং দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হিসেবে বিশেষ পরিচিত।
ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক পরিচিতি
সেন্টমার্টিন দ্বীপের অপর নাম 'নারিকেল জিঞ্জিরা', যা নারিকেল গাছের প্রাচুর্যের জন্য পরিচিত। দ্বীপটি বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত এবং এটি একটি ছোট্ট দ্বীপ হলেও তার সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। দ্বীপটির প্রবালপ্রাচীর এবং সমুদ্রতলের জীববৈচিত্র্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের অন্যান্য দ্বীপ
বাংলাদেশের বিভিন্ন দ্বীপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- ভোলা: এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ এবং বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত। ভোলা নদীবেষ্টিত এবং কৃষিকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- নোয়াখালী: নোয়াখালী জেলার হাতিয়া দ্বীপ তার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য এবং ম্যানগ্রোভ বনের জন্য পরিচিত।
- চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম উপকূলে সন্দ্বীপ একটি ঐতিহাসিক দ্বীপ, যা কৃষি ও মৎস্যসম্পদে সমৃদ্ধ।
- কক্সবাজার: কক্সবাজারে সেন্টমার্টিন ছাড়াও মহেশখালী দ্বীপ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এটি মন্দির এবং পাহাড়ের জন্য বিখ্যাত।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
2017 সালের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা নিয়োগ পরীক্ষায় সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কিত প্রশ্ন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেন্টমার্টিন দ্বীপ সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শুধুমাত্র ভৌগোলিক নয়, পরিবেশগত, অর্থনৈতিক এবং পর্যটন দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
- অবস্থান: কক্সবাজার জেলা
- বিশেষত্ব: বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ
- স্থানীয় নাম: নারিকেল জিঞ্জিরা
- পর্যটন গুরুত্ব: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত
সেন্টমার্টিন দ্বীপ কত কিলোমিটার?
সেন্টমার্টিন দ্বীপ, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হিসেবে পরিচিত, যা কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত। এই দ্বীপটি তার অপরূপ সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলা যায়, দ্বীপটির মোট আয়তন প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার। এটি উত্তরের দিক থেকে দক্ষিণের দিকে প্রসারিত, এবং এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭.৩ কিলোমিটার। প্রস্থের দিক থেকে এটি প্রায় ১ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে কিছু এলাকায় প্রস্থ আরও কম, যা জোয়ারের সময় পানির নিচে চলে যেতে পারে।
দ্বীপের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং আকর্ষণ:
- প্রবাল প্রাচীর: এই দ্বীপটি মূলত প্রবালের উপর ভিত্তি করে গঠিত। এটি বাংলাদেশের সমুদ্রবিজ্ঞান এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
- সমুদ্র সৈকত: সেন্টমার্টিন দ্বীপে বিস্তৃত সাদা বালুকাময় সৈকত রয়েছে, যা ভ্রমণকারীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
- চর অঞ্চল: দ্বীপের দক্ষিণ অংশে একটি চর রয়েছে, যা স্থানীয়দের কাছে ‘চর কুত্তা’ নামে পরিচিত।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের জন্য শীতকাল সবচেয়ে ভালো সময়, কারণ এসময় আবহাওয়া শুষ্ক এবং মনোরম থাকে। জাহাজে করে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘণ্টা। দ্বীপটি তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও এর প্রতিটি কোণেই রয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্য।
সেন্টমার্টিন রিসোর্ট: কোথায় থাকবেন এবং কীভাবে?
সেন্টমার্টিন, বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান, যেখানে প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমায়। পর্যটকদের সুবিধার জন্য এখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মানের রিসোর্ট, কটেজ ও হোটেল। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনায় সঠিক রিসোর্ট বা হোটেল নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিচে আমরা জনপ্রিয় কিছু রিসোর্ট সম্পর্কে আলোচনা করবো এবং বুকিংয়ের আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে তা জানাবো।
সেন্টমার্টিন রিসোর্ট: একটি সার্বিক ধারণা
সেন্টমার্টিনে আপনি পাবেন প্রিমিয়াম লাক্সারিয়াস রিসোর্ট থেকে শুরু করে সাশ্রয়ী মূল্যের কটেজ ও হোটেল। এটি নিশ্চিত করে যে, যেকোনো বাজেটের পর্যটক এখানে আরামদায়কভাবে থাকতে পারবেন।
বুকিংয়ের আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন
- অবস্থান এবং দূরত্ব: দ্বীপের কেন্দ্রীয় এলাকা বা সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি থাকা রিসোর্টগুলো ভ্রমণের জন্য সুবিধাজনক।
- সুবিধাসমূহ: হোটেলে নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে কিনা, পানির সহজলভ্যতা, জেনারেটরের ব্যবস্থা, এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- রুমের মান এবং ভাড়া: রিসোর্ট বুক করার আগে রুমের মান যাচাই করে এবং ভাড়া নিয়ে দরদাম করার সুযোগ থাকে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
জনপ্রিয় রিসোর্টগুলোর তালিকা
সেন্টমার্টিনে বেশ কিছু জনপ্রিয় রিসোর্ট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- প্রিমিয়াম লাক্সারিয়াস রিসোর্ট: সমুদ্রের কাছাকাছি এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন। বিলাসবহুল থাকার জন্য এ ধরনের রিসোর্ট আদর্শ।
- সাশ্রয়ী মূল্যের কটেজ: যারা বাজেট-ফ্রেন্ডলি অপশন খুঁজছেন, তাদের জন্য এগুলো উপযুক্ত।
- পরিবারবান্ধব রিসোর্ট: যারা পরিবার নিয়ে ভ্রমণ করেন, তারা নিরাপত্তা এবং আরামের দিকটি বিশেষভাবে বিবেচনা করতে পারেন।
রিসোর্টের সুবিধা অনুযায়ী নির্বাচন করুন
আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে রিসোর্ট নির্বাচন করুন। যদি আপনার লক্ষ্য প্রকৃতি উপভোগ করা হয়, তাহলে সমুদ্রের কাছাকাছি রিসোর্ট বেছে নিন। অন্যদিকে, বাজেট সীমিত থাকলে সাশ্রয়ী হোটেল বা কটেজ আপনার জন্য উপযুক্ত হবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের ছবি: প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য
সেন্টমার্টিন দ্বীপ, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার কাছে অবস্থিত। দ্বীপটি তার নীল জলরাশি, সাদা বালির সৈকত, এবং প্রবাল প্রাচীরের জন্য বিখ্যাত। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ছবি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অপরিহার্য সম্পদ। ছবিগুলো এই দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে।
এই দ্বীপের প্রাকৃতিক দৃশ্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় আকাশ এবং সমুদ্রের রঙের খেলা অনন্য রূপে ধরা পড়ে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিভিন্ন ছবি ঘুরে বেড়ানোর জায়গাগুলোর ভিন্নতা এবং বৈচিত্র্য তুলে ধরে। চর কুত্তা, প্রবাল প্রাচীর, নারকেল গাছের সারি, এবং বিশাল সমুদ্রের দৃশ্য ছবি তুলতে উৎসাহী পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে যারা ভ্রমণ পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য এই ছবিগুলো দ্বীপের সৌন্দর্যের প্রাথমিক ধারণা দেয়। ড্রোন ক্যামেরার সাহায্যে তোলা ছবিগুলো দ্বীপের পুরো ভৌগোলিক সৌন্দর্যকে এক নজরে দেখার সুযোগ করে দেয়।
সেন্টমার্টিন: প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
সেন্টমার্টিন কেন বিখ্যাত?
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। এর নীল জলরাশি, সাদা বালির সমুদ্র সৈকত, প্রবাল প্রাচীর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই দ্বীপকে অত্যন্ত বিখ্যাত করেছে। এটি ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ কোনটি?
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হলো সেন্টমার্টিন। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত।
কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার ভাড়া কত?
কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যেতে হলে প্রথমে টেকনাফ পর্যন্ত বাস বা গাড়িতে যেতে হয়। এরপর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে জাহাজে করে যেতে হয়।
- বাস ভাড়া: কক্সবাজার থেকে টেকনাফের বাস ভাড়া প্রায় ২০০-৩০০ টাকা।
- জাহাজের টিকিট: টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য জাহাজ ভাড়া ৭০০ থেকে ২০০০ টাকা (শ্রেণি অনুযায়ী) হতে পারে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের জনসংখ্যা কত?
সেন্টমার্টিন দ্বীপের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১০,০০০। অধিকাংশ স্থানীয় বাসিন্দা মৎস্যজীবী এবং কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের অপর নাম কি?
সেন্টমার্টিন দ্বীপকে স্থানীয়ভাবে নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও ডাকা হয়। এটি দ্বীপের প্রচুর নারকেল গাছের কারণে এ নাম পেয়েছে।
সেন্টমার্টিনে ভ্রমণের সেরা সময় কখন?
সেন্টমার্টিনে ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হলো শীতকাল (নভেম্বর থেকে মার্চ)। এ সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে এবং সমুদ্র শান্ত থাকে, যা ভ্রমণকে উপভোগ্য করে তোলে।
সেন্টমার্টিনে থাকার জায়গা কেমন?
সেন্টমার্টিনে বিভিন্ন মানের রিসোর্ট, কটেজ, এবং হোটেল রয়েছে। আপনি প্রিমিয়াম লাক্সারি রিসোর্ট বা সাশ্রয়ী মূল্যের কটেজ, উভয় ধরনের অপশন পাবেন।
সেন্টমার্টিন কীভাবে গঠন হয়েছিল?
সেন্টমার্টিন মূলত প্রবাল দ্বারা গঠিত একটি দ্বীপ। এটি প্রাকৃতিক কারণে বঙ্গোপসাগরে জেগে উঠেছে এবং পর্যায়ক্রমে এটি একটি স্থায়ী ভূখণ্ডে রূপান্তরিত হয়েছে।
সেন্টমার্টিনে কী কী করা যায়?
সেন্টমার্টিনে আপনি সমুদ্র সৈকতে হাঁটা, নৌকাভ্রমণ, স্কুবা ডাইভিং, এবং প্রবালদর্শন করতে পারবেন। এছাড়া সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উপভোগ করা, চরে হাঁটা, এবং স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেওয়া অন্যতম আকর্ষণ।
সর্বশেষ বাংলা খবর পেতে ভিজিট করুন