হিরামন মন্ডল সাগর : :
ঘেরের পানিতে সাতার কাটছে নানা প্রজাতির মাছ। পাড়ে কৃষকবৃন্দ অফসিজন বা (বর্ষা কালিন) তরমুজের আবাদ।
ঘেরের মাচায় ঝুলছে রসালো ফল তরমুজ। বাতাসে দোল খাচ্ছে এই ফল। যেনো ছিড়ে না পড়ে তার জন্য নেটের ব্যাগ দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে। লীজ ঘেরের পাড়ের জমি আগে পতিত থাকতো। এখন সেখানে ফলছে সোনালী ফসল তরমুজ। খরার সময় কৃষক কিছুটা লোকসান দিলেও এই মৌসুমে লাভের স্বপ্ন দেখছেন তারা। গত বছরের চেয়ে এ বছর আবাদ তিনগুনেরও বেশী হয়েছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে খুলনা জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রার ছিলো ৪০০ হেক্টর। কিন্তু আবাদ করা হয়েছে ৯২৯ হেক্টর। তার মধ্যে বটিয়াঘাটায় আবাদ হয়েছে ৫৫০ হেক্টর জমিতে। বর্ষা মৌসুমে সেচের প্রয়োজন হয় না। এখন পানির লবণ কমেছে। ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন লাভের জন্য। মাচার ওপরে সবুজের সমরহ। আর নীচে ঝুলছে হাজারোও তরমুজ। নিয়মিত সার ও কীট নাশক প্রয়োগ করা হয়েছে। সরকার দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলে কৃষি বিপ্লব ঘটানোর জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
যে কারণে কৃষক ঘেরের পাড়ে তরমুজ চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অধিক দামে বিভিন্ন হাট বাজরে বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করছেন। একটি সুত্রে জানা গেছে,খুলনা জেলায় সব থেকে বেশি অফসিজন তরমুজ চাষ হয়েছে বটিয়াঘাটা উপজেলায়। এবছরে ৫৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সরদার আব্দুল মান্নান বলেন, কিছু দিন আগে এই এলাকায় লবণ পানির ঢেউ খেলতো। কোন প্রকার ফসল উৎপাদন হতো না। তাই কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন ট্রেনিং,পথসভা এমনকি উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়ার কারণে লবণ পানির এলাকায় আজ সোনা ফলছে।
তিনি আরও বলেন,চলতি বছরে ঘেরের মাচায় তরমুজ চাষ হয়েছে আস্হা ৩৯০ হেক্টর, ইয়োলো বার্ড ২৫ হেক্টর, হিরা ড্রাগন কিং ৪০ হেক্টর,তৃপ্তি ৪০ হেক্টর, ব্লক বেবি ১০ হেক্টর,হানি কুইন ৩০ হেক্টর ও পাকিজা ৫৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। তবে উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ৫৫০ হেঃ জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে এর মধ্যে সব থেকে বেশি চাষ হয়েছে আমার ব্লক অর্থ্যাৎ সুরখালী ইউনিয়ন চাষ ৫০০ হেঃ জমিতে। তিনি আরও বলেন, ক্লাইমেট স্মার্ট প্রকল্প পরিচালক শেখ ফজলুল হক মনি'র মাধ্যমে ক্লাইমেট স্মার্ট প্রকল্প ২০২১ সালে ১০ টি প্রদর্শনীর মাধ্যমে ৭০ হেঃ জমিতে অফসিজন তরমুজ চাষ শুরু হয়। ২০২৩ সালে ৩০০ হেঃ এবং ২০২৪ সালে ৫০০ হেঃ এসে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন,১ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করতে খরচ ২০/২৫ হাজার টাকা কিন্তু বিক্রি হবে ৯০ হতে এক লাখ টাকা।
যে কারণে শিক্ষিত বেকার যুবকেরা তরমুজ চাষে ঝুকে পড়েছে। আগে ঐ সকল জমিতে ধান চাষ করে বিঘা প্রতি লাভ হতো ২০/২৫ হাজার টাকা। অথচ সেই জমিতে অফসিজন তরমুজ চাষ করে লাভ হচ্ছে ৮০/৯০ হাজার টাকা। সার্বিক বিষয় বটিয়াঘাটা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আবু বকর সিদ্দিক জানান,গত বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজ চাষ তিন গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। তরমুজের বাজার মূল্য ছাড়িয়া যাবে কোটি টাকা। গত বছর চাষ হয়েছিলো ৩০০ হেক্টর জমিতে,এবছর সেখানে চাষ হয়েছে ৫৫০ হেক্টর জমিতে। আশা করছি যদি প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হয়। তাহলে ১৮ হাজার মেঃ টন ফলন উৎপাদন হবে। যার বাজার মুল্য প্রায় একশ কোটি টাকা। তিনি আরও বলেন,আমার ২১ জন উপসহকারী কৃষি অফিসার দিন রাত কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শের কারণে আজ এই সাফল্য।