খানজাহান আলী থানা প্রতিনিধি |
সীমান্তবর্তী এলাকার পদলিয়া নদীর পাড়ের বাংলাদেশ সীমানা হতে ভারতে পাচারকালে বিথী খাতুন (১৯) নামে এক যুবতীকে উদ্ধার করেছে। সেই সাথে ভারতীয় নাগরিকসহ মানব পাচারকারী ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। বিশেষ এ অভিযান পরিচালনা করে খানজাহান আলী থানা পুলিশ ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন মানব পাচারকারী দলের সদস্য ভারতের মুর্শিদাবাদের নাগরিক শেখ ওলির ছেলে শেখ জাবেদ (৩৫), বাংলাদেশের ২ নারী পাচারকারী সদস্য খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার হাজীগ্রামের হায়াত লস্করের মেয়ে সোনিয়া খাতুন (২৩) ও নুর ইসলামের মেয়ে কুলসুম বেগম (২৫)।
শনিবার কেএমপি প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় বিথী খাতুন নামে এক যুবতীকে সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্রের হেফাজতে রয়েছে। এমর্মে খানজাহান আলী থানায় গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) সাধারণ ডায়েরি করেন ভিকটিমের ফুফু মমতাজ বেগম। ওই সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে ভিকটিমকে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেন থানা পুলিশ। যুবতীকে উদ্ধারে এবং মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের দায়িত্ব দেওয়া হয় থানার এসআই ইশতিয়াক আহম্মেদ, দোলা দে ও নিতিশ বিশ্বাসকে।
তারা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় তৎপরতা চালিয়ে মহেশপুর থানা পুলিশের সহায়তায় গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) দিবাগত গভীর রাতে ভারতীয় সীমান্তবর্তী পদোলিয়া নদীর পাড়ের বাংলাদেশ সীমান্ত হতে ভারতে পাচারকালে ওই যুবতীকে উদ্ধার করে। একই সাথে মানবপাচারকারী দলের সদস্য ভারতীয় নাগরিকসহ বাংলাদেশী দুই নারী সদস্যকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। শনিবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ভিকটিমের ফুফু মমতাজ বেগম বাদী হয়ে ২০১২ সালের মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের ৬/৭/৮ ধারায় খানজাহান আলী থানায় মামলা দায়ের করেছেন (নং-১৬ তাং ২৬/০৮/২০২৩)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ইসতিয়াক বলেন, মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য মানব পাচারকারী সদস্যদের রিমান্ডে আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, খানজাহান আলী থানার ফুলবাড়িগেট এলাকার মোড়র আব্দুস সাত্তারের বাড়ির ভাড়াটিয়া অসচ্ছল এক গৃহবধূর সাথে তারই সম্পর্কের এক খালা শাশুড়ী দিঘলিয়া থানার হাজিগ্রামের হায়াত লস্করের কন্যা সোনিয়া খাতুনের সাথে পরিচয়ে হয়।
পরিচয় সুত্র ধরে ঐ গৃহবধূর পারিবারিক অসচ্ছলতার সুযোগ নিয়ে সোনিয়া খাতুন তাকে ভারতে মোটা অংকের বেতনের চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে আসছিল। গত ২৪ আগস্ট ঐ গৃহবধূকে তার শাশুড়ী বাড়িতে না পেয়ে সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন এবং না পেয়ে রাতেই খানজাহান আলী থানায় সাধারণ ডায়রী করেন। পরবর্তীতে ভিকটিম গৃহবধূ তার পিতার মোবাইল ফোনে কল করে জানায় সে ভালো আছে তাকে যেন না খোঁজা হয়।
বিষয়টি তাৎক্ষণিক ভাবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলে তিনি জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মোঃ ইসতিয়াক আহমেদকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে মোবাইল ট্রকিংয়ের মাধ্যমে দিঘলিয়ার হাজি গ্রামের একটি সূত্র খুঁজে পায় পুলিশ এবং দিঘলিয়া থানা পুলিশের সহায়তায় হাজিগ্রামের নুর ইসলামের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ঐ বাসায় অবস্থান করা শেখ জাবেদ (৩৫) নামের ভারতীয় এক নাগরিক এবং নুর ইসলামের কন্যা কুলসুম বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে জানায়, সোনিয়া ভিকটিম গৃহবধূকে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে ঝিনাইদহের মহেশপুরের মাটালি গ্রামের মোঃ সামাদের বাসায় নিয়ে গেছে।
সেখান থেকে সামাদের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে ভারতে পাচার করা হবে ভিকটিম ঐ গৃহবধূকে। রাতেই কুলসুম বেগমকে সাথে নিয়ে খানজাহান আলী থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম ঝিনাইদহের মহেশপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মহেশপুর থানা পুলিশের সহায়তায় খানজাহান আলী থানা পুলিশ ২৫ আগস্ট শুক্রবার বেলা ১১টায় ভারতের সীমান্তবর্তী মহেশপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিম গৃহবধূ (১৯) কে উদ্ধার করে।