পাইকগাছা, খুলনা: পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামে ২২ আগস্ট দুপুরে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূল রক্ষার বেড়িবাঁধ ভেঙে সেখানে ভয়াবহ প্লাবনের সৃষ্টি হয়। এই প্লাবনে ১৩টি গ্রাম সম্পূর্ণভাবে তলিয়ে যায়, এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার মানুষের জীবনযাত্রা।
বাঁধ ভাঙার ফলে প্লাবিত গ্রামগুলো হল কালিনগর, গোপীপাগলা, তেলিখালী, সৈয়দখালী, খেজুরতলা, সেনের বেড়, হাটবাড়ি, ফুলবাড়ি, বাগীরদানা, দুর্গাপুর, দারুল মল্লিক, হাবিখোলা এবং নোয়াই। এই অঞ্চলের মানুষগুলোর জন্য এটি ছিল এক মহাদুর্যোগ। তাদের বসতবাড়ি, ফসল, গবাদি পশু এবং অন্যান্য সম্পদ দ্রুতগতির পানির স্রোতে ভেসে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুপুরের দিকে হঠাৎ করে বেড়িবাঁধের একটি অংশ ভেঙে যায়, এবং প্রচণ্ড গতিতে পানি গ্রামগুলোতে প্রবেশ করতে থাকে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পানি স্রোতের উচ্চতা এতটাই বেড়ে যায় যে, এলাকার মানুষজন তাৎক্ষণিকভাবে কিছু করার সুযোগ পায়নি। অনেকেই নিজের বাড়িঘর থেকে বের হতে পারেননি এবং পানির স্রোতে আটকে পড়েন। গ্রামবাসীরা অতি দ্রুত তাদের জীবন বাঁচাতে বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নেন, কিন্তু প্রায় সকলেই তাদের সম্পত্তি হারিয়েছেন।
বাঁধ ভাঙার কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে থাকা বেড়িবাঁধের দুর্বল অবস্থা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবকেই দায়ী করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই বেড়িবাঁধের সংস্কার কার্যক্রম অবহেলিত ছিল। বারবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পরেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে প্রকৃতির এমন প্রতিশোধের মুখে পড়তে হলো গ্রামবাসীদের।
প্লাবনের ফলে সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি, তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন যে, হাজার হাজার একর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকদের দুর্ভোগের কোনো শেষ নেই। গবাদি পশুরা অনেকেই পানির স্রোতে ভেসে গেছে, যা স্থানীয় মানুষের জীবিকা নির্বাহে বড় ধাক্কা দিয়েছে।
এদিকে, প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে। তবে পানির উচ্চতা বেশি থাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
এই দুর্যোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে এমন ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা পুনরায় না ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এবং মানুষের জীবনযাত্রা দ্রুত পুনর্বহাল করা এখন সময়ের দাবি।