দৌলতপুর প্রতিনিধি :
দৌলতপুর জুট প্রেস এন্ড বেলিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ( রেজিঃ নং-১১৫৫) কর্তৃক ৫ সেপ্টেম্বর থেকে কোন নোটিশ ছাড়াই বে-আইনীভাবে কাজ বন্ধ করেছে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অমান্য করে দৌলতপুর জুট প্রেস এন্ড বেলিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের শ্রমিক নেতৃবৃন্দের ডাকা শ্রমিক ধর্মঘটে পাট ব্যবসায়ীরা পাট রপ্তানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে। বিভিন্ন বন্দরে রপ্তানীর অপেক্ষায় থাকা জাহাজে পাট পাঠাতে না পেরে রপ্তানিকারকদের রপ্তানি ক্যান্সেল করছে বিদেশী ব্যবসায়ীরা।
তাতে করে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতির শিকার হবে তেমনি দেশ ও রেমিটেন্স হারাবে। খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তর স্বাক্ষরিত ৩০ আগস্ট এক চিঠিতে শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ করার জন্য চিঠি দিয়েছে। তার জবাবে বাংলাদেশ জুটে এসোসিয়েশন ৪ সেপ্টেম্বর লিখেছেন ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী তারা কিছু টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেও দিয়েছেন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময়। কিন্তু শ্রমিকরা অযৌক্তিক, বেআইনি দাবি করা নিয়ে সমস্যার মধ্যে আছেন।
এটি নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হওয়া উচিত বলে বিভাগীয় শ্রম পরিচালক ও রেজিস্টার অফ ট্রেড ইউনিয়ন মোঃ মিজানুর রহমানকে জানিয়েছে। এর মাঝেই পাট শ্রমিকদের বেআইনি কর্ম বিরতি (ধর্মঘট) বলে মনে করেন বিজেএ’র নেতৃবৃন্দ। এ অঞ্চলের শ্রমিকদের মালিকদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে এই অসন্তুষ্টির কারণেই প্রায় ২৫ জন পাট রপ্তানি কারক দৌলতপুর জুট প্রেস এলাকার মধ্যে পাটের কাজ না করে বিভিন্ন এলাকায় কাঁচাপাটের কাজ করিয়ে বিদেশে রপ্তানি করছে। নওয়াপাড়া, পথেরাজার, ফুলতলা, কানাইপুর, সফদ্দারপুর, ভেন্নাবাড়ী, ভেড়ামারা, নাটোর, আলমডাঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় আজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাটের কাজ পরিচালনা করছেন। এতে করে দৌলতপুর অঞ্চলের শ্রমিকদের যেমন কর্মশূন্য হয়ে পড়েছে, তেমনি এই পাটের পেশা পরিবর্তন করে নানা পেশায় জড়িয়ে পড়েছে।
এ অঞ্চলের পাট মালিকদের দাবি বর্তমানে এখানে যে শ্রম মজুরি রয়েছে বাংলাদেশে কোথাও নেই। এরপরেও শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের আন্দোলনের কারণে শিল্প নগরী খুলনার দৌলতপুরে পাটের ব্যবসা ধীরেধীরে হারিয়ে যাওয়ার পথে। বর্তমানে দৌলতপুরে ১৫ টি পাট রপ্তানি কারক তাদের পাটের কাজ পরিচালনা করেন এবং বিদেশে পাঠ রপ্তানি করছেন। বিভিন্ন মন্দার কারণে জুট ব্যবসার অবস্থা মন্দা এর পরে শ্রমিকদের অযৌক্তিক ধর্মঘট আন্দোলনের কারণেই আজ এই শিল্প নগরী দৌলতপুরে পাটের কাজ ঝিমিয়ে পড়েছে। দেশে পাটের বাজার চড়া।
বিদেশে ডলারের রপ্তানি করতে গেলে কম দাম তেমন ব্যবসা না থাকা সত্ত্বেও এই ট্রেডটিকে সচল রাখার জন্য চেষ্টা করছেন এ অঞ্চলের পাট ব্যবসায়ীরা। দৌলতপুরে বর্তমানে পাটের ব্যবসা পরিচালনা করেন ঢাকা জুট ট্রেডিং, তাসফিয়া জুস ট্রেডিং, খন্দকার আলমগীর কবির, সারতাজ জুট ট্রেডিং, এমএন জুট ট্রেডিং, রশ্নি কবির, গাজী জুট ইন্টারন্যাশনাল, মামুন জুট, দি ওয়ার্ল্ড জুট, রানা জুট, নেক্সি জুট, শুভ ট্রেডাস, শহীদ এন্ড সন্স ও রাজিব জুট ।
বর্তমানে যারা দৌলতপুর অঞ্চলে পাটের কাজ পরিচালনা করছেন তারা বলছেন আমরা তাদেরকে সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরেও মাঝে মধ্যে আমাদেরকে যেভাবে ব্যবসায়িক ক্ষতিগ্রস্ত করে। পরবর্তীতে আমরা এখানে থেকে পাটের ব্যবসা অন্যত্র করব চিন্তা করছি। বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ বলেন, খুলনা অঞ্চলের জুট প্রেস এন্ড বেলিং সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি সংক্রান্ত ইস্যুটি গত ১৩/০৫/২০২৩ইং শ্রম দপ্তরে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভার মাধ্যমে নিস্পত্তি হয়।
স্বাক্ষরিত নিষ্পত্তিনামা অনুযায়ী আমরা শ্রমিকদের মজুরী পরিশোধ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে এরিয়ার বাবদ পাওনা টাকা হতে আমরা কিছু টাকা দুই ঈদে অগ্রিম বাবদ পরিশোধ করেছি। নিষ্পত্তিনামার ৩ নং শর্ত মোতাবেক শতকরা ২০ বর্ধিত মজুরী বাবদ সর্বমোট বকেয়া পাওনা টাকার শতকরা ১০ টাকা শ্রমিকরা বকেয়া মজুরী হিসাবে প্রাপ্য হবেন।
চুক্তিপত্রের শর্তানুযায়ী মোট বকেয়া মজুরীর ১০% টাকা আমরা পরিশোধ করতে চাই। চুক্তিপত্রে উক্ত শর্ত উল্লেখ থাকা স্বত্ত্বেও শ্রমিকগন অযৌক্তিক ভাবে বকেয়া মজুরী দাবী করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। দৌলতপুর জুট প্রেস এন্ড বেলিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (রেজিঃ নং-১১৫৫ ) আমাদের সাথে কোন প্রকার আলাপ আলোচনা না করেই এবং কোন নোটিশ না দিয়েই বে-আইনীভাবে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে পাটের আমদানী রপ্তানীসহ সমস্ত কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
ফলে ট্রাক লোড-আনলোড করতে না পারায় আমাদের ট্রাক প্রতি অতিরিক্ত অর্থ দিতে হচ্ছে। রপ্তানী বন্ধ হওয়ায় আমরা কাঙ্খিত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হতে বঞ্চিত হচ্ছি যা আমাদের অর্থনীতির উপর চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দ্রত সমস্যা সমাধানে যথাযত কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।