সর্বশেষ:

বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপ

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় হামুন ! উপকূলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে

বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপ
Facebook
Twitter
LinkedIn

এইচ এম সাগর (হিরামন) :
বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড় হামুনে পরিণত হয়েছে। সাগরের জলরাশি থেকে জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে ক্রমাগত শক্তি বাড়িয়ে উপকূলভাগের দিকে ধেয়ে আসছে প্রবল বেগে। উপকূলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদগণ মডেল বিশ্লেষণ করে বলছেন, আগামীকাল বুধবার বরিশাল ও চট্টগ্রাম উপকূলের মাঝ বরাবর আছড়ে পড়ার সময় সাত-আট ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া দপ্তর। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালায় সারা দেশের আকাশ ছেয়ে গেছে। উপকূলভাগ ছাড়াও ঢাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছে। কোস্ট গার্ডের সদস্যরা উপকূলে মাইকিং করে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যেতে বলছেন।

এদিকে সেন্টমার্টিনে অবস্থানরত সব পর্যটককে তিনটি জাহাজে করে টেকনাফে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭০ কিলোমিটার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৬৩০ কিলোমিটার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার এই ঘূর্ণিঝড়ের সাংকেতিক নম্বর দিয়েছে ‘৬ বি’। আগামীকাল ২৫ অক্টোবর দুপুর ১২টার পর থেকে মধ্যরাতের মধ্যে বাংলাদেশের স্থলভাগ অতিক্রম করতে পারে হামুন।
ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি ১১ কিলোমিটার বেগে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি আজ মঙ্গলবার সর্বোচ্চ শক্তি সঞ্চয় করবে। এরপর বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যায়। এ সময় উপকূলীয় অঞ্চলে এক থেকে দেড় মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। উপকূলভাগে এই মাত্রা বাড়বে। হামুন প্রাথমিকভাবে তা চট্টগ্রাম ও বরিশালের মধ্যবর্তী উপকূল দিয়ে অতিক্রম করতে পারে।

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ২৪, ২৫, ২৬ এবং এর পরবর্তী তিন দিন খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট এবং বরিশাল বিভাগের বরগুনা—এসব উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ফুট, কোনো কোনো স্থানে সাত ফুট পর্যন্ত হতে পারে।

বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম জানিয়েছে, হামুন একটি সাধারণ মানের ঘূর্ণিঝড়। অনেকটা কোমেন, রোয়ানু টাইপের। এমনকি এটা গত বছরের এই সময়ে আঘাত হানা সিত্রাংয়ের চেয়ে কম শক্তিশালী। আপাতত কিছুটা শক্তি বাড়লেও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এটা আঘাত হানার আগে শক্তিশালী না হয়ে বরং কিছুটা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আজ রাতের পর থেকে যে কোনো সময়ে (সম্ভবত ২৫ অক্টোবর সকালের মধ্যে সাধারণ মাত্রার ঝড় হিসেবে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর কারণে মোংলা ও পায়রাকে ৪ বা ৫ নম্বর বিপত্সংকেত এবং কক্সবাজার-চট্টগ্রামকে ৭ নম্বর বিপত্সংকেত দেখাতে পারে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চল পাঁচ-সাত ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। রয়েছে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও।

Facebook
Twitter
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

turan hossain rana