ডুমুরিয়া (খুলনা ) প্রতিনিধি :
পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ডুমুরিয়া উপজেলা কার্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের নামে রবাদ্ধকৃত ৪ কোটির ও অধীক টাকা ব্যায়ের হিসাবে ব্যাপক গড়মিল একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে । সঠিক হিসাব চাওয়ায় এক পরিদর্শকের নেতৃত্বে পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার উপর চড়াও হয়ে হেনস্তা করার চেষ্ঠা চালানো হয়। অবশেষে ওই কর্মকর্তা গত ২৬ সেপ্টেম্বর ডুমুরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন বলে উপ-সহকারি পরিদর্শক রমজান আলী নিশ্চিত করেন ।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ হাসান ইমাম বলেন , ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর আমি ডুমুরিয়া উপজেলায় যোগদান করি । এরপর উপজেলার হতদরিদ্র পরিবারদের স্বাবলম্বী করা জন্য সহজ শর্তে বিতরন সহ বিভিন্ন প্রকল্পের ২ কোটি ও পিআর ডিপি -৩ প্রকল্পের ২ কোটি ৪ লাখ টাকার সঠিক হিসাব না পেয়ে সহকর্মীদের সহযোগীতা চাই । হিসাবের ফাইল সহ কাগজপত্র দিতে লিখিত ভাবে সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা লিকচন রায়কে ও লিখিত ভাবে জানাই ।
তার কাছে কোন ফাইল বা কাগজপত্র নেই বলে জানান ।এরপর গত ২৮ সেপ্টেম্বর হঠাৎ প্রধান পরিদর্শক শাহাজালাল মোড়ল ,পরির্শক সৈয়দ মশিউর রহমান, রথীন তরফদার ও গ্রাম সংগঠক মোঃ বাহারুল ইসলাম আমার ক্েক্ষ প্রবেশ করে হুমকি দিয়ে বলেন এরপর থেকে আর কোন হিসাবের কাগজ যেন না চাওয়া হয় । পরে নিরাপত্তা চেয়ে তাদের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেছি।
সুত্র জানান ,বিআরডিবি থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে প্রদেয় বকেয়া ২ কোটি ঋণের টাকা আদায়ে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে দেখা যায় যাদের নামে ঋণ বরাদ্দ দেখানো হয়েছে, তাদের বেশির ভাগ মানুষের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওযা যাচ্ছে না। তাছাড়া গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের পিআরডিবি - ৩ প্রকল্পে ২ কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যায়ে ১শ ৭৫ টি প্রকল্পের একটি প্রতিবেদন দেখানো হয়েছে । প্রতিটি প্রকল্পের ব্যায় ধরা হয়েছে সর্বনি¤œ ১ লাখ টাকা ।
এরমধ্যে ৫১টি প্রকল্পসহ অধিকাংশ প্রকল্পের কোন অস্তিস্ত নেই। এ সকল প্রকল্পের ভিডিসি কমিটির নাম , রেজুলেশন ,প্রকল্পের ছবি উপজেলা পল্লী উন্নয়নঅফিসের বিল ফাইলে নেই বলে সুত্র নিশ্চিত করেছে । গত ২০১৬ অর্থ বছর থেকে চলে আসা এমন অনিয়ম সর্বশেষ ২০২২ অর্থ বছরে এসে বিষয়টি নজরে পড়ে। এরপর বর্তমান উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ হাসান ইমাম সরকারের অর্থ আদায়সহ প্রকল্পের খোঁজ খবর করতে যাওয়ায় ওই অফিসের কতিপয় ব্যক্তির রোষানলে পড়েন।
এরপর তাকে গত ৯ নভেম্বর বিআরডিবি কর্মকর্তাকে ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলায় বদলির আদেশ দেয়া হয়। যা পরবর্তীতে মহা-পরিচালক বাতিল করে দেন বলে সূত্র জানান । উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার, ডুমুরিয়া, খুলনা ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক (চিংড়ি) খাতে অনিয়মের বিষয়ে স্মারক নং- ৪৭.৬২.৪৭৩০.৮৫৪.০০.০০৮.২০.২৪৮, তারিখ: ১১/০৫/২০২৩ খ্রি. উপপরিচালক, খুলনা’কে পত্র প্রেরণ করেন।
বর্তমানে সোনালী ব্যাংক ২০২১-২২ অর্থবছরের খেলাপী ঋণ পরিশোধ না করলে পুনঃরায় কোন ঋণ প্রদান করবেন না মর্মে সোনালী ব্যাংকের স্মারক নং- ৪৫২, তারিখ: ১৯/১০/২০২৩ পত্রে জানিয়েছেন। ফলে ডুমুরিয়া উপজেলায় ১০২টি সমবায় সমিতির ২ হাজার ৫০ জন সমবায়ীর শেয়ার-সঞ্চয়ের জমাকৃত ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা সোনালী ব্যাংক খেলাপী ঋণে সমন্বয় করে নেবেন বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়।
পল্লী উন্নয়ন বোর্ড খুলনার উপ-পরিচালক একেএম আশরাফুল ইসলাম জানান, সোনালী ব্যাংক কোন চিঠি দিয়েছেকি না এবং আর্থিক বিষয়টি সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ে কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। সরকারের টাকা নয়ছয় বা গড়মিল হলেতো তদন্ত কমিটি হত। এক্ষেত্রে তো কোন কমিটি গঠণ করা হয়নি ।
তবে ডুমুরিয়া উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ হাসান ইমামকে ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলায় বদলি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ পল্লী উন্নযন বোর্ডের মহাপরিচালক আঃ গাফ্ফার খান বলেন, খুলনা জেলার ডুমুরিযা উপজেলা অফিসে ঋণের টাকা বিতরণে ও পিআরডিবি-৩ প্রকল্পের টাকা ব্যযে অনিয়মের বিষয়টি শুনেছি।
এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা । স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ ডুমুরিয়ার জনগণের এত বড় ক্ষতির দায় কিছুতেই এড়াতে পারেন না। পিআরডিপি-৩ এর স্কিম বাস্তবায়নে অনিয়ম ও নিয়ম বহির্ভূত ঋণ বিতরণ-আদায়ের সাথে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং নিরপেক্ষ তদন্ত মাধ্যমে জবাবদিহিতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হবে ।