সর্বশেষ:

veribadh koira

ঝুঁকিপূর্ণ ৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নিয়ে উপকূলীয় এলাকায় উৎকণ্ঠা

veribadh koira
Facebook
Twitter
LinkedIn

নিউজ ডেস্ক:

কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল করিম কপোতাক্ষ নদের তীর দেখিয়ে বলেন, প্রায় এক বছর ধরে বাঁধটি গাঙের পাশের দিকে ভাঙতি ভাঙতি সরু হয়ে গেছে। এখন জোয়ারের পানির যে চাপ বাড়তিছে তাতে যে কোনো সময় অঘটন ঘটতি পারে। এই বাঁধ ভাঙলি উপজেলা পরিষদসহ ২০-৩০টি গ্রাম গাঙের পানিতে তলায়ে যাবে। সেদিকে কারও কোনো খেয়াল নেই। বাঁধ ভাঙলি আমাগে মতোন গরীব মানুষের হবে মরণদশা।

গাঙের পানি যখন চরের নিচে থাকে, তখন কারও দেখা পাওয়া যায় না। যেই সময় গাঙের পানি বান্ধের কানায় কানায় আইসে ঠেকে, তখনই শুরু হয় ‘মিয়া সাহেবগে’ তোড়জোড়। এ পর্যন্ত যতবার বাঁধ ভাঙিছে সব ওই সাহেবগের গাফিলতির কারণেই ঘটিছে।

শুধু এই দুইজনই নয়; জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের উপকূলীয় হাজারও মানুষ। আসন্ন সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বেড়েছে তাদের উৎকণ্ঠা। তিন জেলার ২ হাজার ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বর্তমানে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কয়রা ও পাইকগাছার উপকূলীয় লোকজন জানান, ঘূর্ণিঝড় যদি খুলনা উপকূলে আঘাত নাও হানে তারপরও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদ-নদীতে পানির চাপ বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে। আর পানি বাড়লে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ভয় আছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খুলনার ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহমান জানান, তাদের আওতাধীন ৩৬৫ দশমিক ২৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১০ দশমিক ৫ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

পাউবো খুলনার ডিভিশন-২ এর অধীনে কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় বেড়িবাঁধ রয়েছে মোট ৬৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১২ কিলোমিটার। এই ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে।

পাউবো সাতক্ষীরার ডিভিশন-১ এর অধীনে ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৫ কিলোমিটার জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাহউদ্দিন। সাতক্ষীরা ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসিকুর রহমান জানান, তাদের আওতাধীন এলাকায় ২৯৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৮ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই বাঁধ মেরামত করা হবে।
পাউবো বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল বিরুনী জানান, জেলার ৩৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় তা মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলা উপজেলায় নতুন করে ১৮৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন।

এদিকে কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে বর্তমানে ৪টি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে কয়রা সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট থেকে গোবরা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার, হরিণখোলা-ঘাটাখালি এলাকায় এক কিলোমিটার, ৬ নম্বর কয়রা এলাকায় প্রায় ৬০০ মিটার বাঁধ ধসে সরু হয়ে গেছে। মহারাজপুর ইউনিয়নের কাশিয়াবাদ, মঠেরকোনা, মঠবাড়ি, দশহালিয়া এলাকায় প্রায় ২ কিলোমিটার ঝুঁকিতে রয়েছে। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাটকাটা থেকে গণেশ মেম্বরের বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার, কাশিরহাটখোলা থেকে কাটমারচর পর্যন্ত ৭০০ মিটার, পাথরখালি এলাকায় ৬০০ মিটার এবং মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের শেখেরকোনা, নয়ানি, শাপলা স্কুল এলাকা, তেতুলতলারচর ও চৌকুনি এলাকায় প্রায় ৩ কিলোমিটারের মতো বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেখা গেছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সময় মতো মেরামতের উদ্যোগ নিলে কম অর্থ ব্যয়ে ও কম সময়ের মধ্যে মানসম্মত কাজ করা সম্ভব। কিন্তু বর্ষার আগ মুহূর্তে যখন নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে বাঁধের কানায় কানায় পূর্ণ হয়, পাউবো কর্তৃপক্ষ সে সময় এসে মেরামতের উদ্যোগ নেয়। এতে একদিকে কাজের অর্থ ব্যয় বাড়ে, আরেকদিকে তড়িঘড়িতে কাজ হয় নিম্নমানের।

হরিণখোলা এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য কালাম শেখ জানান, সম্প্রতি জোয়ারের পর হরিণখোলা এলাকার বাঁধের প্রায় ৩০০ মিটার ধসে গেছে। ওই স্থানের বাঁধ অনেক আগে থেকেই ঝুঁকিতে থাকলেও পাউবো তা মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড বা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) গত অর্থ বছরের কাজ এখনও চলমান রয়েছে। এসব স্থানের কাজের ঠিকাদারদের অভিযোগ, অসময়ে এসে কার্যাদেশ পাওয়ায় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় মাটি পাওয়া যায় না। এ জন্য বাঁধ মেরামতে কালক্ষেপণ হয়।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, এ যাবত যতগুলো দুর্যোগ এসেছে তার বেশিরভাগই মে মাসে। এ জন্য মে মাস আসলে আতঙ্কিত থাকে এই এলাকার মানুষ। প্রতি বছর ঠিক মে মাস আসলেই দেখি পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধ মেরামতের তোড়জোড় শুরু করে। কী কারণে তা কেউ বলতে পারে না। অথচ শীত মৌসুমে কাজ করার অনেক সুবিধা। সে সময় নদীতে পানির চাপ কম থাকে। কাজের জন্য প্রয়োজনীয় মাটিও পাওয়া যায়। তিনি অভিযোগ করেন, বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টির জন্য পাউবো’র লোকজন অসময়ে এসে কাজের তোড়জোড় শুরু করেন।

তবে পাউবো খুলনা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, সময়ের কাজ অসময়ে এসে করা হয়-এটা সঠিক না। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের তালিকা করে বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। সেটি অনুমোদনে সময় লাগে।

Facebook
Twitter
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

turan hossain rana