গাজায় ভোরের আঁধার ছিন্ন করে ইসরাইলের বিমান বাহিনীর চালানো হামলায় নিষ্প্রাণ হয়েছে অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি নাগরিক। এই ঘটনা মঙ্গলবার ভোরে ঘটেছে, যখন রাফাহ শহর এবং গাজা উপত্যকার কেন্দ্রীয় অঞ্চল ইসরাইলের বিমান হামলার লক্ষ্য হয়। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ হামলায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে এই তথ্য প্রদান করেছেন।
মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরে, যেখানে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো তাদের অস্থায়ী আশ্রয়ে রয়েছে, সেখানে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের ঘটনা তাদের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শাবান আবদেল-রউফ, একজন স্থানীয় বাসিন্দা, তাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলেন, “বজ্রপাত এবং বোমার শব্দের মধ্যে আমরা আর পার্থক্য করতে পারছি না। আমরা যখন বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতাম, তখন ভাবিনি একদিন বৃষ্টি না হওয়ার প্রার্থনা করতে হবে।”
গত ৭ অক্টোবর, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের ইসরাইলে চালানো হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও দুই শতাধিক ব্যক্তি জিম্মি হয়। এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ, ইসরাইল গাজায় সামরিক অ
ভিযান শুরু করে। এই সামরিক অভিযানের ফলে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৩১ হাজারের বেশি নাগরিক নিহত হওয়ার পাশাপাশি, ৭২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। এই সংঘাত অঞ্চলটিতে দীর্ঘস্থায়ী টানাপোড়েনের এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে, যা শুধু মানবিক বিপর্যয়কেই বাড়িয়ে তুলেছে।
এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আরও একবার মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঘুরেছে, যেখানে দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর দুর্দশা, নিহত ও আহতের বিপুল সংখ্যা, এবং সামরিক অভিযানের ফলে উদ্ভূত মানবিক সংকট গভীর চিন্তার বিষয়।
যুদ্ধ ও সংঘাতের এই চক্রের মাঝে আমরা দেখতে পাই, সাধারণ মানুষের জীবন কীভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। শাবান আবদেল-রউফের মতো বাসিন্দাদের কথায় ফুটে ওঠে তাদের আশা ও হতাশার চিত্র। যুদ্ধের শব্দের সাথে বজ্রপাতের শব্দ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে, এবং একসময়ের আনন্দের উপলক্ষ, বৃষ্টি এখন তাদের কাছে আতঙ্কের কারণ।
এই পরিস্থিতি আরও একবার জোর
দিয়ে বলে যে, যুদ্ধ ও সংঘাতের মূল্য সবচেয়ে বেশি গুনতে হয় সাধারণ মানুষকে। তাদের জীবনে এই সংঘাত শুধু ভৌতিক ক্ষতিই সৃষ্টি করে না, বরং মানসিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতাও নষ্ট করে দেয়। প্রিয়জনের হারানোর বেদনা, ঘরবাড়ি ছেড়ে অনিশ্চিত গন্তব্যে যাত্রা, এবং অবিরাম ভয় ও অনিশ্চয়তায় জীবন-যাপন কোনো মানুষের জন্য সহজ নয়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও শান্তিরক্ষা সংস্থাগুলোর জন্য এই অবস্থা এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সংঘাত নিরসনের প্রচেষ্টা যতই চালানো হোক না কেন, স্থায়ী সমাধান ছাড়া এই চক্র অব্যাহত থাকবে। তাই সংঘাত প্রতিরোধ ও মীমাংসায় নতুন ও টেকসই উপায় বের করা জরুরি।